জন্মাষ্টমী 2025 এর দিনক্ষণ, তিথি ও সময়সূচী
অষ্টমী পূজার সময়সূচী 2025জন্মাষ্টমী 2025 এর দিনক্ষণ, তিথি ও সময়সূচী ইতোমধ্যেই ভক্তদের মধ্যে আগ্রহ ও প্রস্তুতির আবহ তৈরি করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই দিনটি শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয় বরং এটি শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মাধ্যমে মানবতার, ন্যায়ের ও প্রেমের জয়গান করার এক অনন্য দিন।
প্রতিবারের মতো এবারও জন্মাষ্টমী উদযাপন ঘিরে রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা, পূজা, উপবাস এবং শুভ ভোগের আয়োজন। চলুন, সহজ ভাষায় জানি জন্মাষ্টমী ২০২৫ কবে, কীভাবে পালন করা হয় এবং এই জন্মাষ্টমীর তারিখ ও সময়সূচী সম্পর্কে বিস্তারিত।
পোস্ট সূচীপত্র: জন্মাষ্টমী ২০২৫ এর দিনক্ষণ, তিথি ও সময়সূচী নিয়ে সঠিক ও বিস্তারিত আলোচনা
- জন্মাষ্টমী কি এবং এই দিনটি কেন পালন করা হয়
- কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ সালে কবে
- শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সম্পর্কে কিছু কথা
- সনাতন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জন্মাষ্টমীর তাৎপর্য
- জন্মাষ্টমীর দিনে কি উপবাস করতে হয়? এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ২০২৫ জন্মাষ্টমীর তারিখ ও সময় ভারতীয় সময় অনুসারী
- জন্মাষ্টমী উপলক্ষে জনপ্রিয় ভোগ বা খাবার
- জন্মাষ্টমী পালনের সময় কিছু সতর্কতা
- শেষকথাঃ লেখকের মতে জন্মাষ্টমীর বার্তা কি হওয়া উচিত
জন্মাষ্টমী কি এবং এই দিনটি কেন পালন করা হয়
জন্মাষ্টমী একটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটিকে কৃষ্ণাষ্টমী, গকুলাস্টমী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইতাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। হিন্দু ধর্মে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলেন। তিনি মানুষকে সৎ পথে চলা, সত্য বলার সাহস ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে শেখান এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি কিভাবে তৈরি করে হয়, কিভাবে ভালবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় তা দেখিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হয়ে এই দিনটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আরো পড়ুন: শিবরাত্রি পূজার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র - শিবরাত্রি পূজার নিয়ম - শিবরাত্রি পূজার গান
তাই তার জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই দিনটি পালন করে থাকে যা ইংরেজি মাস হিসাবে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বার এর মধ্যে পড়ে। এই দিনটি তে তারা নানা রকম আয়োজন করে থাকে এবং ঠিক রাত ১২ টা কে কৃষ্ণের জন্মের সময় ধরে ওই সময় পূজা ও নামজপসহ নানা ধরণের কর্মকাণ্ড ভক্তির সহিত করে থাকে।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ সালে কবে
আপনারা অনেকেই জানতে চাচ্ছেন—জন্মাষ্টমী ২০২৫ কবে হবে বা কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ এর নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় ঠিক কখন? তাহলে চলুন দেখে নিন সঠিক দিনক্ষণ, তিথি ও পুজোর সময়। জন্মাষ্টমীর দিনটি হিন্দু ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে চন্দ্র সূর্য ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রহের আবর্তন দেখে তৈরি করা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা মতে যখন সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে থাকে তখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয় এই সময়টিকে জন্মাষ্টমী বলে পালন করা হয়। এই দিনটি প্রায় প্রত্যেক বছর আগস্ট মাসের মাঝ থেকে সেপ্টেম্বার মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আসে।
১৫ নাকি ১৬ আগস্ট কবে হবে জন্মাষ্টমী এই নিয়ে অনেকের মনে অনেক দ্বিধা আছে। আসলে এই বছর জন্মাষ্টমী মূলত দুইদিন ধরে উদযাপিত হবে। ১৫ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা থকে শুরু হয়ে ১৬ আগস্ট শনিবার মধ্যরাতে চলবে কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে নানা পূজা অর্চনা এবং তা চলবে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রত্যেক বছরের মতো এবারো হিন্দু ধর্মের লোকজন আনন্দের সাথে আলোকসজ্জার মদ্ধ দিয়ে এই দিনটি উদযাপন করবে।
আসছে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী আসুন জেনে নেওয়া যাক শুভযোগ ও বিধি সম্পর্কেঃ হিন্দু ধর্ম মতে বিধি হলো জন্মাষ্টমীর পূজা কখন করা হয় এবং পূজারীসহ সকলে কি কি নিয়ম মেনে পূজায় অংশগ্রহণ করে। হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুসারে এই দিনটি ভক্তিভরে, শ্রদ্ধার সাথে, পরিষ্কার মন নিয়ে সঠিক সময়ে গুরুত্বর সাথে পালন করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান বা গোসল সেরে পরিষ্কার হয়ে সন্ধায় পুজো ঘরে আ মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিকে দোলনায় বসিয়ে নানা গহনা ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে, আরতি, নামজপ, গীতা পাঠ, মধ্যরাতে শঙ্খ বাজানো, উলুধ্বনি, ভোগ, প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পালন করা। এমনকি দান ও সেবার ক্ষেত্রেও মনযোগী হতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের জীবনে সম্পর্কে কিছু কথা
শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একজন সাহসী, জ্ঞানী, ধর্মভীরু ও মানব জাতীর কল্যাণের প্রতীক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে তিনি মহাপবিত্র এবং প্রেম ও ভক্তিতে ভরা একজন মানুষরূপী ভগবান। তাকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকি ও বাসুদেবের পুত্র যিনি জন্মেছিলেন মাথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংশের কারাগারে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় কংশ ছিল সেই রাজ্যের রাজা এবং দেবকির ভাই বা শ্রী কৃষ্ণের আপন মামা।
কংশ একজন অত্যাচারী রাজা ছিল। সেই সময় চারিদিকে ছিল অত্যাচার, নিপীড়ন, ধ্বংস। মানুষের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিলোনা, চারিদিকে ছিল শুধু হাহাকার। কংশর অত্যাচারের মাত্রা এতোটাই বেড়ে গেছিলো যে মানুষের বাঁচার কোন উপায় ছিলোনা। সেই সময় সকল ভগবানের নির্দেশে শ্রীকৃষ্ণ ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হয়ে পৃথিবীতে আসে। ভবিষৎবাণী বাণী ছিল কংশর বোন দেবকির ঔরসের সন্তানের হাতেই লিখা আছে তার মৃত্যু। তাই সে দেবকি ও বসুদেব কে কারাগারে বন্দি রাখে বছরের পর বছর সেখানে দেবকির পেট থেকে হওয়া কতগুলো সন্তানকে কংশ মেরে ফেলে।
আরো পড়ুন: দোলযাত্রা ২০২৫ কবে - হোলি কত তারিখ - দোল পূর্ণিমা 2025 কবে
ভগবানের কৃপায় বসুদেব অলৌকিকভাবে শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। অলৌকিকভাবে বসুদেব কৃষ্ণকে বাঁচিয়ে নদী পার করে গোকুলে যশোদা ও নন্দের ঘরে পৌঁছে দেন। সেখাইনেই তিনি কৃষ্ণ নামে পরিচিতি পান এবং তার মহিমা ছড়িয়ে যায় মথুরাসহ সারা বিশ্বে। ছেলেবেলাতে গোপাল বা কৃষ্ণ ছিলেন খুবই দুষ্টু প্রকৃতির বালক কিন্তু তারছিল প্রচণ্ড বুদ্ধিমত্তা ও সাহস। কালিয়া নাগ দমন সহ নানা সাহসী কাজ তিনি ছেলেবেলাতেয় করেছেন। অন্যদিকে তার বাঁশির সুরে মোহিত হতো সবাই। নারী, পুরুষ, প্রকৃতি সবাই এক ধ্যানে শুনতেন তার বাঁশির সূর।
রাজনীতি ও কলাকুশলীতেও তিনি ছিলেন বিচক্ষণ। তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের পাশে থেকে তাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মানব জাতিকে লড়াই করতে শিখিয়েছেন। তার ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা, মানুষের প্রতি ভালবাসা, বিচক্ষণতা, কোমল হৃদয়, সবকিছুই তাকে মহান করে তুলেছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রুপে।
সনাতন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জন্মাষ্টমীর তাৎপর্য
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে শ্রীকৃষ্ণ একজন সত্য ও ন্যায়ের অন্যতম প্রতীক। এই দিনটি পালন করা হয় মূলত কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে। তাই এই দিনটিকে পবিত্র বলে ধরে নেওয়া হয় এবং হিন্দু ধর্মের লোকজন শ্রদ্ধার সাথে পূজা অর্চনা ও উপবাস রাখার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে থাকে। ও অধর্ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্ম প্রতিষ্ঠার লক্ষে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। রাজা কংশের অত্যাচারে যখন পৃথিবীর মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছিল তখনই ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসাবে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়।
তিনি গীতায় বলেছেন, যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় ও অধর্মের প্রভাব বাড়ে, তখনই আমি অবতীর্ণ হয়। তিনি তার জ্ঞান ভক্তি ও নিখাদ ভালবাসার জন্য গোটা মানবজাতি তথা হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে ভগবানের জায়গা পেয়েছেন। এমনকি তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে যেভাবে উপদেশ দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতে সাহায্য করেছিলেন তা অবিশ্বাস্য। তার বিচক্ষণতা, ন্যায় প্রচারে তার যে নিষ্ঠা তা যুগে যুগে হিন্দু জাতীর উপর বিশাল এক কারণ যে তারা আজও কৃষ্ণকে ভগবান হিসাবে গ্রহণ করে তার দেখানো পথে চলছে। তাই বলা যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি ধর্মের নতুন প্রতিষ্ঠা, মানবজাতির জাগরণ, ভক্তির এক নতুন অধ্যায়।
জন্মাষ্টমীর দিন কি উপবাস করতে হয়? এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
অনেকেই গুগলে সার্চ করেন ‘জন্মাষ্টমীর দিনে উপবাস করতে হয় কি’, ‘কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর উপবাসের নিয়ম’—এই অংশে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে। জন্মাষ্টমীতে উপবাস বা ব্রত করা ভগবানের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা নিবেদনের এক মাধ্যম। এটি ব্রত শুধু শরীরের নয় এটি মূলত মানুষিক। উপবাস এর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের লোক তাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা নিবেদন করেন এবং নিষ্ঠার প্রতীক হিসাবে কাজ করেন। এতে তাদের আত্মিক শুদ্ধি ঘটে। তারা মনে করেন এই ব্রত পালনের মাধ্যমে তারা ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করবেন।
আরো পড়ুন: শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা ২০২৫ - সরস্বতী পূজা কত তারিখ 2025 সময়সূচি
সাধারণত একটি নির্জলা উপবাস রাখার নিয়ম আছে। তবে কেউ কেউ দুটি উপবাস করে থাকেন। যারা সাধারণ হিন্দু তারা শুধু মাত্র একদিন অর্থাৎ ভগবানের জন্মের সময়কে মধ্যরাত ধরে ওই সময় পর্যন্ত ফলাহার করে ব্রত পালন করেন। অন্যদিকে বৈষ্ণব মতে যারা বিষ্ণু ভক্ত তারা জন্মাষ্টমীর আগের দিন ধরে মোট দুইটি উপবাস রাখেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় মধ্যরাতে সবাই প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে উপবাস ভঙ্গ করেন। সনাতন ধর্মের লোক মনে করেন এই উপবাসের মাধ্যমে তারা পুণ্য লাভ করে থাকেন। তাদের আত্মার শুদ্ধি কামনা করে এবং কৃষ্ণের দেখানো সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
২০২৫ জন্মাষ্টমীর তারিখ ও সময় ভারতীয় সময় অনুসারে
জন্মাষ্টমী শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে পালন করা এক বিশাল উৎসব যা ভারতবর্ষ সহ পুরো পৃথিবীতে আনন্দের সহিত পালন করা হয়। যেহেতু ধারণা করা হয় কৃষ্ণের এই ঘটনা তার জীবনকাল প্রাচীন ভারতকে জুড়ে তাই ভারত বর্ষের সকল হিন্দু ধর্মের লোকজন হই হুল্লোড় করে জাঁকজমক আয়োজনের মধ্যদিয়ে প্রত্যেক বছর এই দিনটি পালন করে থাকে।
জন্মাষ্টমী পালনের ভারতীয় সময় এবং বাংলাদেশি সময় ১৫ থেকে ১৬ আগস্ট মানে একই। ভারতের তিথি ১৫ আগস্ট দিবাগত রাত থেকে শুরু করে মধ্য রাতে কৃষ্ণের জন্মদিন এবং সকাল ৩ টা বেজে ৩৭ মিনিট এ পূজা, নাম, জপ, গান-বাজনার মধ্য দিয়ে শুরু করে ১৬ আগস্ট সকাল ২ টা বেজে ৫১ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। জন্মাষ্টমীর মূল পূজা কৃষ্ণের জন্মকে কেন্দ্র করে করা হয়। তাই ১৫ আগস্ট রাতের পূজাকেই মেইন জন্মাষ্টমীর পূজা বলে ধরে নেওয়া হয় বা নির্ধারণ করা হয়। সুতরাং যারা জানতে চাচ্ছেন ২০২৫ সালে জন্মাষ্টমীর তারিখ কখন, তাদের জন্য জানিয়ে রাখি এই সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে জনপ্রিয় ভোগ বা খাবার
শ্রীকৃষ্ণ তার বালক বয়স থেকেই দুধ বা দই জাতীয় জিনিস বা দুধের তৈরি খাবার খেতে বেশি পছন্দ করতেন। এই জন্য তাকে মাখনচোর নামেও জানা যায়। তার পছন্দের কথা মাথায় রেখে সনাতন ধর্মের লোকজন এই দিনে দুধের তৈরি মিষ্টি, মাখনসহ নানা ধরণের খাবারের আয়োজন করে থাকেন। যেহেতু তিনি মাখন পছন্দ করতেন তাই ভোগ হিসাবে মাখন তো থাকেই, এছাড়াও ঘরে বানানো দই বিভিন্ন জায়গায় প্রসাদ হিসাবেও খাওয়া হয়। দুধ থেকে তৈরি খিরসা, বুঁদিয়ার লাড্ডু যা কৃষ্ণের খুবই পছন্দের খাবার। তাছাড়াও নারিকেলের নাড়ু, সাবুদানার খিচুরি, বিভিন্ন ধরণের ফলমূল ইত্যাদি নানান খাবারের আয়োজন করে থাকেন কৃষ্ণের জন্মদিনের ভোগ হিসাবে। তাই অনেকেই সার্চ করেন—জন্মাষ্টমীর ভোগে কী কী খাওয়া হয়, বা জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণকে কোন খাবার নিবেদন করা হয়—এই প্রশ্নের উত্তর হিসাবে এই অংশে বিস্তারিত বলা হলো।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্যই থাকতে হবে এমন ভোগ হলো পঞ্চামৃত বা পাঁচটি জিনিস দিয়ে তৈরি হয় এমন খাবার। দুধ, দই, মধু, ঘি ও চিনি দিয়ে তৈরি করা একটি মিশ্রণ যা দিয়ে ভগবানকে স্নান করিয়ে পড়ে তা প্রসাদ হিসাবে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। মিষ্টি জাতীয় খাবার ছাড়াও অন্যান্য ভোজে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যেমনঃ সব খাবারে পেঁয়াজ বা রসুনের ব্যবহার করা যাবেনা, রান্না ঘরে প্রবেশের পূর্বে গোসল করে নিতে হবে এবং সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোগ তৈরির পর প্রথমে ভগবানকে নিবেদন করা হবে তারপর প্রসাদ হিসাবে আর কেউ খেতে পারবে।
জন্মাষ্টমী পালনের সময় কিছু সতর্কতা
প্রত্যেকটা উৎসব পালনের সময় আমাদের বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রত্যেকটা উৎসব এমনভাবে পালন করতে হবে যেন তা সুশৃঙ্খল ও সুদ্ধভাবে ধর্মীয় মনোভাব বজায় রেখে উদযাপিত হয়। বিশেষ করে যারা জানেন না জন্মাষ্টমী পালন করার নিয়ম বা ভক্তিপূর্ণ পরিবেশে কী কী মানা উচিত, তাদের জন্য এই সতর্কতাগুলো অনুসরণ করা জরুরি। পূজার সকল নিয়ম কানুন মেনে তার আয়োজন করতে হবে। শ্রদ্ধার সাথে উপবাস রাখতে হবে। কোনরকম আমিষ আহার করা যাবেনা। মনের পরিচ্ছন্নতা সব থেকে বড় পূজা, তাই প্রথমে মঙ্কে শুদ্ধ করতে হবে। শব্দ ও কোলাহল থেকে দূরে সুন্দর একটি ভক্তিময় পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
যেন শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা তার কাছে এসে মনোযোগ সহকারে তার সেবায় নিয়জিত হতে পারে। ভোগ বানানোর সময় সবথেকে বেশি যত্নবান হতে হবে কোন রকম ত্রুটি যেন না হয় নয়তো ভগমান ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। রাত জেগে জাগরণ ও কীর্তনের সময় শরীরের অনেক ধকল যায়। তাই যাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা বা বয়স্ক লোক আছেন তারা একটু যত্ন সহকারে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজনে বেশি রাত জাকবেন না বা অসুস্থ ব্যাক্তিকে রাত জাগা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিবেন । আর অবশ্যই উৎসবের সময় অবশ্যই অহিংসা মানতে হবে কোন জীবন বা পশুকে কষ্ট দেওয়া বা হত্যা করা যাবেনা। কারণ শ্রীকৃষ্ণ অহিংসার ও শান্তির প্রতীক।
শেষকথাঃ লেখকের মতে জন্মাষ্টমীর বার্তা কেমন হওয়া উচিত
জন্মাষ্টমী ২০২৫ আমাদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি শ্রীকৃষ্ণের দেখানো ন্যায়, সত্য ও প্রেমের বার্তা প্রচারের দিন। জন্মাষ্টমীর দিনক্ষণ, তিথি ও সময়সূচী তাই প্রত্যেকটা সচেতন সনাতন ধর্মের মানুষকে জানা উচিত। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আপনাদের সাথে এই কনটেন্টে আমার সকল জানা জিনিসগুলো শেয়ার করলাম। আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে। ধন্যবাদ।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url