চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়
চিরতরে ছারপোকা দূর করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তেলাপোকা হোক বা ছারপোকা দুইটাই খুব বিরক্তিকর পতঙ্গ। এরা একবার কোথাও বিস্তার ঘটালে তা দ্রুতই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়।
বিশেষ করে ছারপোকা বা রক্তচোষা। তাহলে নিশ্চয়ই ভাবছেন ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায় কি? এটি এমন একটি পতঙ্গ যা আপনার রাতের ঘুম হারাম করে দিবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক, ঘরোয়া উপায়ে ছারপোকা তাড়ানোর পদ্ধতি।
পেজ সূচিপত্রঃ চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে কি কি জানতে হবে।
- চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়
- ছারপোকা দমনে লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা
- চিরতরে ছারপোকা দূর করার কার্যকরী ১৫ টি উপায়
- ছারপোকা কত ডিগ্রি তাপাত্রায় মারা যায়
- চিরতরে ছারপোকা দূর করার দারুন কার্যকরী একটি উপায়
- ছারপোকা দমনের ঔষধ
- চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় হিসাবে কিছু ঘরোয়া ও কার্যকরী পদ্ধতি
- ছারপোকা কামড়ালে কি হয়? লক্ষণ, প্রতিকার ও বাঁচার উপায়
- ছারপোকা ধ্বংস করার সর্বশেষ ও সহজ উপায় হিসাবে পেস্ট কন্ট্রোলের ব্যাবহার করা
- ছারপোকা ধংসে লেখকের শেষ কথা
চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়
ছারপোকা একবার কোথাও বাসা বাঁধলে তা চিরতরে দূর করা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্রুত বিস্তার ক্ষমতা থাকার কারণে এটিকে আটকাতে একটু বেগ পেতে হয়। তবে দ্রুত তার অবস্থান খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ছারপোকা হোল একটি উষ্ণরক্ত বিশিষ্ট প্রাণী যা অন্য প্রাণীর রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। বেশীরভাগ সময় পোকাটি দেখা যায় বিছানায়, বালিশে, কাপড় রাখার জায়গায়, ম্যাট্রেস, বিভিন্ন ফার্নিচারে ইত্যাদি জায়গায়।
তাই ছারপোকা একেবারে ঘর থেকে তাড়ানোর জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যেন তা নির্মূলে শেষ হয়। সেই সাথে ছারপোকা যেন আর না ফিরে আসে সেই দিকটাতেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা ছারপোকা তাড়ানোর যে পদক্ষেপ গুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করবো তা ফলো করা সকলের জন্যই সহজ হবে। কারণ আমরা ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই ছারপোকা তাড়ানোর উপায় বলে দিব। যেমনঃ গরম পানি, ন্যাপথলিন, রোদের তাপের ব্যাবহার, রসুনের ব্যাবহার, অ্যালকোহলের ব্যাবহার ইত্যাদি আরও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে যে ছারপোকা তাড়ানোর যায় তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। সেই সাথে জানতে আরও পারবেন ছারপোকা তাড়ানো নিয়ে লেখকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা যা আপনাদের নিশ্চয়ই কাজে আসবে। দেখতে হলে অবশ্যই "সংসার" এর সাথেই থাকুন এবং ৩ ও ৭ নাম্বার পয়েন্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ছারপোকা দমনে নিজস্ব অভিজ্ঞতা
ছারপোকা এমন একজন মেহমান যে বিনা দাওয়াতে সব জায়গায় পৌঁছে যায়। ছারপোকার অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি এমন অনেক কম মানুষ রয়েছে, আমিও এর থেকে রেহায় পায়নি। গুগোল থেকে ইউটিউব সবকিছু ঘেঁটে এর সমাধান খুঁজেছি অনেকদিন। এমনকি অনেক পরিচিতজনদের কাছেও পরামর্শ নিয়েছি যারা এর ভুক্তভোগি ছিল। অবশেষে এর সমাধান খুঁজে পেয়েছি এবং ধৈর্য ধরে কাজ করে ফলাফল পেয়েছি। তাই ভাবলাম কেননা আজকের টপিকে এটাই রাখা যাক কারণ আমরা মতো আপনারাও অনেকেই এই অসুবিধায় পড়ে সমাধান খুঁজছেন বা অনেকেই হয়তো খুঁজেও পেয়েছেন।
বিশেষ করে আমরা যারা কলেজ বা ইউনিভার্সিটি হল গুলোতে থাকি বা কলেজ হোস্টেলে থাকি তারা খুব ভালো করেই জানি ছারপোকার অত্যাচার কি। এসব জায়গাগুলোতে এতো বেশি অত্যাচার যে এরা বিভন্ন ধরণের অসুখ বিসুখ পর্যন্তও ছড়াচ্ছে। তাই প্রথমেই এর উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং ঘরের প্রত্যেকটা ফার্নিচার, লেপ, তোষক, বালিশ, আলমারি বা র্যাক প্রচণ্ড রোদে টানা ৩ দিন দিতে হবে। যেগুলো ফার্নিচারে পানি ঠেকলে অসুবিধা নাই সেগুলোতে গরম পানি ঢেলে দিতে হবে যেন প্রত্যেক ফাঁকে পানি পৌঁছায়। সব কাপড় খেঁচে পরিষ্কার করতে হবে। ন্যাপথলিনের ব্যাবহার করতে হবে। এসব করেই ছারপোকা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে আরও কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে, যাদের ঘরে এক্সট্রিম ছারপোকার বসবাস তাদের এই অল্পতে কাজ নাও হতে পারে। এই জন্য দেখতে থাকুন নিচে দেওয়া পয়েন্টগুলো। যেখানে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চিরতরে ছারপোকা দূর করার কার্যকরী ১৫ টি উপায়
বাসাবাড়ি থেকে চিরতরে ছারপোকা দূর করার অনেক উপায় রয়েছে। বিষয় হোল যতো উপায়ই থাকুক না কেন, আমরা ভালোভাবে সেগুলোকে মানতে পারছি কিনা সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আজ একটা কাল একটা বা আজ একটু কাল একটু করে কাজ করলে কোন ফলাফল আসবেনা, বরং উল্টা আমরা অভিযোগ করে বসবো যে এগুলো কোনটাই কাজে আসেনা বা ছারপোকা চিরতরে ধ্বংস করারা সহজ কোন উপায় নেই। আসলে বিষয়টা একেবারে উল্টো ঘোটতে পারে যদি আপনারা সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতে অবলম্বন করতে পারেন। নিচে তেমনি কিছু পদ্ধতি দেওয়া হলো-
ডেটল বা স্যাভলনের ব্যাবহারঃ ডেটল বা স্যাভলন হোল অ্যান্টিসেপ্টিক যা বিভিন্ন ধরণের রোগজীবাণু ধ্বংস করে এমনকি অনেক পোকামাকড় মারতেও সাহায্য করে। তাই আপনারা ছারপোকা মারতে এর ব্যাবহার করে দেখতে পারেন, তারজন্য লাগবে (১ ভাগ ডেটল অথবা স্যাভলন + ২ ভাগ পানি) একটা স্প্রে বোতলে ভরে সে সব জায়গায় স্প্রে করবেন যেখানে ছারপোকার উপস্থিতি আছে। বিশেষ করে সকল ফাঁক ফোঁকর।
এখান থেকে আপনারা ভালো একটি ফলাফল পাবেন যদি ডাইরেক্ট ছারপোকার গায়ে স্প্রে তা গিয়ে পড়ে। এতে করে ছারপোকা ঘর ছেরে পালাতে বাধ্য হবে। কিন্তু অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে পোষাপ্রাণী বা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।ন্যাপথলিনের ব্যাবহারঃ ন্যাপথলিন সাধারণত একটি গন্ধযুক্ত পদার্থ হওয়ায় বেশীরভাগ পোকামাকড়ের এর গন্ধ ভীষণই অপছন্দ। ছারপোকাও তেমনি ন্যাপথলিনের গন্ধ এড়িয়ে চলে। তাই যেসকল জায়গায় ছারপোকা আছে সেগুলোতে গোটা ন্যাপথলিন বা ন্যাপথলিনের গুড়া ছিটিয়ে রাখতে পারেন। এটি মুহূর্তেই ঘর থেকে ছারপোকা দূর করার উপায় হতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে এটি ছারপোকা তাড়ায় কিন্তু মরেনা বা ছারপোকার লার্ভার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
কেরোসিনঃ কেরোসিন একটি তীব্র গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা তেলাপোকার শ্বাসনালীতে গিয়ে তাদের মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। এরজন্য করণীয় হোলঃ তেলাপোকা যেসকল ফার্নিচারে আছে সেখানে একটি নরম কাপড় বা তুলার সাহায্যে কেরোসিন লাগিয়ে দেওয়া অথবা কোণায় কোণায় ডিরেক্ট কেরোসিন ঢেলে দেওয়া। এমনকি এটি পানির সাথে মিশিয়েও স্প্রে করতে পারেন। এরফলে তেলাপোকা মারা যায় কিন্তু এর লার্ভা নষ্ট হয়না তাই একেবারে শেষ করা সম্ভব হয়না। তবে কেরোসিন একটি দাহ্য পদার্থ সেটি মাথায় রেখে সাবধানতার সাথে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে এর তীব্র গন্ধ থাকায় মাথা ব্যাথা ও বমিসহ বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে।
ল্যাভেন্ডার অয়েলঃ ল্যাভেন্ডার অয়েল এমন একটি জিনিস যাতে থাকে লিনালুল নামক প্রাকৃতিক পদার্থ। এর বিশ্রী গন্ধ ছারপোকার খুবই অপছন্দের। তবে, প্রথমেই বলে দিতে চাই এটি তেলাপোকা তাড়াতে সাময়িকভাবে কাজে আসে। করণীয় ( ১০-১২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল + ২৫০মিলি পানি + ১-২ চামুচ অ্যালকোহল একসাথে মিশিয়ে একটি স্প্রে বানিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন বিছানার কোণা, পর্দা, সোফাসহ সকল আসবাবপত্রে। এটি কোন বিষাক্ত পদার্থ না হওয়ায় নিশ্চিন্তে ব্যাবহার করতে পারেন।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ব্যাবহারঃ চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় তো অনেক রয়েছে এর মধ্যে ঘর বা বিছানা থেকে ছারপোকা দূর করতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ব্যাবহার একটি। একটি সহজ উপায় হিসাবে এটি কাজে লাগাতে পারেন খাটা খাটনির ঝামেলা ছাড়ায়। এতে করে সাময়িক কাজ হবে। ছারপোকার উপদ্রব কম হলে, রেগুলার করার মাধ্যমে ছারপোকা চিরতরে দূর হতেও পারে।
ডিটারজেন্টের ব্যাবহারঃ ডিটারজেন্ট একটি ক্ষারীয় পদার্থ। অধিক পরিমাণে ক্ষার থাকায় এটি পানির সাথে মিশিয়ে ডিরেক্ট ছারপোকার উপর স্প্রে করলে ছারপোকা মারা যায়।
হেয়ার ড্রায়ারের ব্যাবহারঃ প্রত্যেকদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বিছানাটা গরম করে নিতে পারেন এতে করে ছারপোকা পালাবে কারণ ছারপোকা গরম তাপ সহ্য করতে পারেনা।
বেকিং সোডার ব্যাবহারঃ ধারণা করা হয় বেকিং সোডা ছারপোকার গায়ের আদ্রতা শুষে নিয়ে তাকে মেরে ফেলে। তবে এতে বেশকিছু সন্দেহ রয়েছে। এটি কখনই একটি স্থায়ী সমাধান হয়নি। তবে কিছু সাময়িক উপকার আপনি অবশ্যই পাবেন। তাই কিছু বেকিং সোডা বিছানার ফাঁকে, তোষকে, মাদুরে, ফার্নিচারে ছিটিয়ে রাখতে পারেন। নিয়ম করে তিন দিন পর পর এগুলো পরিবর্তন করে দিতে হবে এভাবে ১৫ দিন করলে বেশ ভালো একটা উপকার পাবেন।
টি ট্রি অয়েলঃ ২০ থকে ৩০ ফোঁটা অয়েল ১ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে দৈনিক ২-৩ বার ছারপোকা থাকে এমন জায়গাগুলোতে স্প্রে করতে হবে। এটি একটি এসেনশিয়াল অয়েল, এতে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক ও জীবাণুনাশক গুণাগুণ যা পোকামাকড় মারতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই গর্ভবতী, বাচ্চা ও পোষা প্রাণী থেকে সাবধানে রাখতে হবে এমনকি ডিরেক্ট স্কিনের সংস্পর্শে না আসে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
ছারপোকা কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় মারা যায়
ছারপোকা সাধারনত (৪৫-৫০) ডিগ্রি সেলসিয়াস বা (১১৩-১২২) ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় মারা যায়। এর থেকে বেশি তাপমাত্রাও প্রয়োগ করা যায় তাহলে আরো দ্রুত ফলাফল পাবেন, তবে এর প্রয়োজন খুব কম হয়, হয়না বললেই চলে।
এখন ভাবছেন তো কিভাবে তাপ প্রয়োগ করবেন! চিন্তা নাই খুব সহজ কিছু পদ্ধতি যেমন, রোদের তাপ। আপনার বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র, তোষক, বালিশ, ম্যাট ইত্যাদি কড়া রোদে কয়েকদিন দিতে হবে এতে করে ছারপোকা পালিয়ে যাবে। আবার টগবগে গরম পানি দিয়ে সব কিছু ধুয়ে রোদে শুকাবেন, প্রয়োজনে ফার্নিচার সহ তাহলে ফাঁক ফোঁকরে আটকে থাকা ছারপোকার লার্ভা মারা যাবে। এতে করে আর বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা। নিজে কষ্ট করতে না চাইলে পেশাদার পেস্ট কনট্রোল তো আছেই। ওরা হিট ট্রিটমেন্ট দিয়ে ছারপোকা তাড়াতে সাহায্য করে।
চিরতরে ছারপোকা দূর করার দারুন কার্যকরী একটি উপায়!
শিম গাছ বা শিমের পাতা ছারপোকা তাড়াতে দারুন কার্যকরী একটি উপায়। নিশ্চয় হাসছেন বা ভাবছেন এটা আবার কিভাবে সম্ভব। আসলে একজন বিশ্বস্ত মানুষের কাছে জানা এই গ্রাম্য টোটকা নাকি অনেক উপকারী। গ্রামে ছারপোকা শহরের থেকে তুলনামূলক কম হয়। কারণ গ্রামের আলো বাতাস আর প্রকৃত মানুষকে নানান রোগ থেকে দূরে রাখে। গ্রামের পরিবেশ মুক্ত, পরিচ্ছন্ন, যেখানে ছারপোকা তেমন হয়না। যদিও হয় তারা নাকি সারা ঘরে শিমের ডাল পাতা বিছিয়ে রাখে এতে করে শিম পাতার গায়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পশম ছারপোকার ছোট ছোট পাগুলোকে আটকে ফেলে। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার ফলে তারা মারা যায় এবং ৩দিন পর পর সেগুলো পুরিয়ে ফেলতে হয়। এভাবে বেশ কিছুদিন দিলে ছারপোকা নির্মূলে শেষ হয়।
ছারপোকা দমনের ঔষধ
আমাদের দেশে ছারপোকা দমনের জন্য বেশকিছু প্রচলিত ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়, যা খুবই সহজলভ্য। আপনারা যারা পরিশ্রম করতে চান না বা সময় হয়না তাদের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাজ করা কষ্টের হবে। তারা চাইলে বাজার থেকে কিনে আনতে পারেন ছারপোকা মারা ঔষধ। আবার ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করেও পেয়ে যেতে পারেন। যেমনঃ সেভিন ডাস্ট পাউডার (এটি পাউডার আকারে পাওয়া যায় এবং সরাসরি গদি, ফার্নিচার, ম্যাটের নিচে বা যে সকল জায়গায় ছারপোকার উৎপাত বেশি সেখানে ডাইরেক্ট ছিটিয়ে দিতে পারেন), বায়োথ্রিন (এটি স্প্রে হিসাবে কাজ করে এবং প্রায় ১ সপ্তাহ এর প্রভাব থাকে এভাবে ১ মাস ব্যাবহার করতে হয়), কে- অথ্রিন (এটি এমন একটি লিকুইড যা পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করা হয়)।
তবে অবশ্যই বাজার থেকে কিনা যেকোনো কীটনাশক ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সচেতন ৎ থাকতে হবে।
চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় হিসাবে কিছু ঘরোয়া ও কার্যকরী পদ্ধতি
আমরা ছারপোকা তাড়ানোর অনেকগুলো উপায় সম্পর্কে অলরেডি জেনে এসেছি। তবে এখনো বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে বাঁকি আছে। আর আপনারা তো জানেন ঘরোয়া উপায়ের থেকে বেস্ট আর কিছু হয়না। বাইরে থেকে কিনা কীটনাশকের থেকে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো নিঃসন্দেহে সহজ ও নিরাপদ। চলুন দেখে নেওয়া যাক ছারপোকা দূর করণের কিছু সহজ ও ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতার গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে পারেনা। যদিও পুদিনা একটি খাওয়ার জিনিস তবুও শুধু পোকা না অনেক মানুষ আছে যারা পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারেনা যার মধ্যে আমিও একজন। তাই পুদিনা বেটে পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
শসা বাটাঃ খোসাসহ একটি শসা বেটে নিন তারপর এর মধ্যে কিছুটা পানি মিশিয়ে ছারপোকা আছে এমন জায়গা গুলোতে তুলো দিয়ে লাগিয়ে দেন।
নিমপাতার ব্যাবহারঃ নিমপাতা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক। এর অনেক ভালো খারপ দিক আছে। তেলাপোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড় তাড়াতেও সাহায্য করে। এরজন্য তাজা নিমপাতা সংগ্রহ করে সেগুলো তেলাপোকা থাকে এমন জায়গায় রাখতে পারেন যা ৩-৪ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে। আবার নিমপাতা বেঁটে পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে বানিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন। এমনকি ঝামেলা করতে না চাইলে নিমের তেল পাওয়া যায়, সেই তেল ১০-১২ ফোঁটা ১ কাপ পানিতে মিশিয়ে তেলাপোকার গায়ে স্প্রে করতে পারেন। একটু সময় সাপেক্ষ হলেও এই উপায়গুলো কার্যকরী এবং নিরাপদ।
ট্যালকাম পাউডার/বেবি পাউডারঃ আমার একজন পরিচিতজনের কাছে শোনা যে বেবি পাউডার নাকি ছারপোকা তাড়াতে সাহায্য করে। এটি ডাইরেক্ট ছারপোকার গায়ে বা আবাস্থলে ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে আমি পরিক্ষিত নই। তবুও ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক। যদি কেউ ব্যাবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
লবণের ব্যাবহারঃ লবণের নোনতা ভাব ছারপোকা সহ্য করতে পারেনা। তাই লবন দিয়েও ছারপোকা মারতে পারেন খুব সহজেই।
ফুটো বন্ধ করেঃ বাড়ির যতো ফুটো ফাটা আছে সব জায়গা একদম বন্ধ করে দিতে হবে, যেন ছারপোকা সেসব জায়গায় বাসা বাঁধতে বা ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করতে না পারে।
পরিচ্ছন্নতাঃ ছারপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে বাড়ি ঘর, কাপড়, আসবাবপত্র সকল কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তাহলে ছারপোকা হবেনা এমনকি নিয়মিত পরিষ্কার করার কারণে দ্রুতই ঘর ছেড়ে পালাবে।
ছারপোকা কামড়ালে কি হয়? লক্ষণ, প্রতিকার ও বাঁচার উপায়
ছারপোকা বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় মানুষকে কামড়ায়। কামড়ানোর সময় বুঝতে না পারলেও পরে এর রিঅ্যাকশন দেখা যায়। যা তকে জ্বালাপোড়া ও চুলাকির মতো সমস্যা দেখা যায়। এর বেশ কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখলে বোঝা যায় ঘরে বা বিছানায় ছারপোকা হয়েছে।
তকে ছোট ছোট গুটি আকারের লাল লাল র্যাশ দেখা যায় যা প্রচণ্ড চুলাকায়, ফুলে যায় আবার অনেক সময় ব্যাথাও হয়। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের শরীরে খুব দ্রুত প্রভাব ফেলে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে মানুষিক স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হয়, মেজাজ খিট খিটে হয়ে থাকে। আবার ঘরে ছারপোকার গন্ধ ও বিছানায় ছিটা ফোটা রক্ত দেখা যায়। এতে করে ধারণা করা হয় ঘরে ছারপোকা হয়েছে।
প্রতিকার হিসাবে প্রাথমিক পর্যায়ে বরফ সেঁক দিতে হবে। অ্যালোভেরার রস দেওয়া যেতে পারে আবার নিমপাতা ফোটানো পানি ঠাণ্ডা করে সেটা দিয়ে গোসল করা যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত না ভালো হলে ডক্টর এর কাছে যেতে হবে বা ভালো কোন ডিসপেনসারি থেকে অ্যান্টিসেপ্টিক মলম, অ্যান্টি ইচ লোশন নিয়ে ব্যাবহার করে দেখতে পারেন।ছারপোকা ধ্বংস করার সর্বশেষ ও সহজ উপায় হিসাবে পেস্ট কনট্রোলের ব্যাবহার
ছারপোকা দমনে সর্বশেষ ও স্থায়ী সমাধান হোল পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস। এটি এমন একটি সংস্থা যেখানে বেশকিছু মানুষ কাজ করে থাকে এবং তারা খুব সতর্কতার সাথে সময় নিয়ে বেশ ভালো একটা প্ল্যান প্রোগ্রাম করে কাজ করে। তারা প্রথমেই আপনার ঘর বাড়ি ভালো করে দেখে নিবে কোথায় ছারপোকার উৎপত্তি বা আবাসস্থল। এতে করে ছারপোকার লার্ভাসহ নির্মূল হয় এই ভয়ংকর রক্তচোষা প্রাণীটি।
বর্তমানে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের লোকজন অনেক বেশি সচেতন তারা WHO ( ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) এর অনুমোদিত কীটনাশক ব্যাবহার করে থাকে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর না। এমনকি বাসা বাড়িতে গন্ধহীন কেমিক্যাল ব্যাবহার করে থাকে যাতে বাচ্চা বা বয়স্কদের অসুবিধা না হয়। কিছুক্ষেত্রে থার্মাল ফগিং করা হয় যাতে ধোঁয়া বা স্প্রে লুকানো জায়গাতেও পৌঁছাতে পারে। আবার গরম বাষ্প বা হিট ট্রিটমেন্ট দেয় যা খুব বেশি উপকারী।
ছারপোকা ধংসে লেখকের শেষ কথা
সবশেষে একটা কথায় বলবো ছারপোকা খুবই জেদি একটি পতঙ্গ। সহজে সে তার জায়গা ছারতে চায়না। তাই আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ছারপোকা মারার অনেক পদ্ধতি আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, কিন্তু পদ্ধতি জানলে হবেনা আমাদের এর থেকে দূরে থাকার উপায় জানতে হবে। এর জন্য সবসময় পরিষ্কার থাকতে হবে, ট্রাভেল শেষে বাড়ি ফিরে সমস্ত জিনিস পত্র ঠিকমতো পরিষ্কার করে রোদে দিয়ে নিতে হবে। আসেপাসে বা পরিচিতজনদের কারো বাসায় ছারপোকা আছে জানলে যতটা সম্ভব সেখানে না যাওয়ার চেস্টা করতে হবে এবং তাদের সেটা যত্নসহকারে বোঝাতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url