আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি
আশুরার রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্যআখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি প্রশ্নটি প্রতিবছর অনেকেই ভাবে। ইসলামি ঐতিহ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেদিন নবী (সা.) অসুস্থ অবস্থায় উম্মতের জন্য দোয়া করেছিলেন। তবে বাংলাদেশে আখেরি চাহার সোম্বার সরকারি ছুটির দিন হিসেবে তালিকায় থাকে না।
পোস্ট সূচীপত্র: আখেরি চাহার সোম্বা সরকারি ছুটি আছে কিনা ও এর গুরুত্ব
- আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি
- আখেরি চাহার সোম্বার পবিত্র ইতিহাস ও উৎপত্তি
- বাংলাদেশে আখেরি চাহার সোম্বা পালনের প্রচলন ও ধারা
- আখেরি চাহার সোম্বার ধর্মীয় গুরুত্ব
- আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫ সালে কবে পড়বে
- সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই দিনে ছুটির বাস্তবতা
- আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে মুসলিমদের করণীয়
- সাধারণ মানুষের মাঝে আখেরি চাহার সোম্বা নিয়ে সচেতনতা
- অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে এই দিনের গুরুত্ব ও ছুটি
- আমার মন্তব্য ও ব্যক্তিগত উপলব্ধি
আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি
প্রতি বছর মুহররম মাসের শেষ বুধবার এলেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটির দিন? না, বাংলাদেশে আখেরি চাহার সোম্বা এখনো সরকারি ছুটি নয়। তবে ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে পালন করেন। ইসলামি ঐতিহ্যে দিনটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মুসলিম সমাজে বিশ্বাস করা হয় এই দিনে হযরত মুহাম্মদ (সা.) অসুস্থতা থেকে কিছুটা সুস্থতা লাভ করেছিলেন এবং উম্মতের জন্য দোয়া করেছিলেন। সেই কারণে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান দিনটিকে রূহানী গুরুত্ব দিয়ে পালন করেন। তাই অনেকেই এ দিন নফল ইবাদত, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে পালন করেন।
সরকারি ছুটির তালিকায় আখেরি চাহার সোম্বার নাম নেই। অর্থাৎ এটি এখনো সরকারি স্বীকৃত ছুটি নয়। সহজভাবে বললে, এদিন অফিস-আদলত খোলা থাকে। তবে ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দিনটি পালন করে থাকেন।
আখেরি চাহার সোম্বার পবিত্র ইতিহাস ও উৎপত্তি
ইসলামী ঐতিহ্য ও হাদিসের আলোকে জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে অসুস্থতা থেকে কিছুটা আরোগ্য লাভ করেছিলেন মুহররম মাসের শেষ বুধবার। যে দিনটিকে আজ আমরা 'আখেরি চাহার সোম্বা' নামে চিনি। এই ঘটনাকে স্মরণ করে মুসলমানরা ওই দিনটিকে শুকরিয়া, দোয়া ও তাওবার বিশেষ দিন হিসেবে পালন করে আসছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। এই ঘটনাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অনুশীলন যেখানে মানুষ আত্মিক শুদ্ধতা, রোগমুক্তি এবং আল্লাহর রহমত কামনার উদ্দেশ্যে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ ও দোয়া পাঠ করে।
যদিও এটি কোনো ঈদ বা ফরজ পালনীয় দিন না তবুও আত্মিক চর্চার একটি পবিত্র উপলক্ষ হিসেবে আখেরি চাহার সোম্বা বিশেষ গুরুত্ব পালন করে। অনেকেই বলেন, এটি একটি রূহানী পুনর্জাগরণের দিন, যা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে তোলে ও জীবনের কঠিন সময়গুলোতে আশার আলো জাগায়।
বাংলাদেশে আখেরি চাহার সোম্বা পালনের প্রচলন ও ধারা
বাংলাদেশের গ্রামীণ ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজে আখেরি চাহার সোম্বা গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। এদিন অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, নবীজি (সা.)-এর রোগমুক্তির স্মরণে দোয়া ও ইবাদত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদিও সরকারিভাবে আখেরি চাহার সোম্বা এখনো ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃত না, তবুও মানুষের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন হয় মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, দরগাহ জিয়ারত, নফল নামাজ এবং দোয়ার।
অনেকে নিজ উদ্যোগে অফিস থেকে ছুটি নেন বা অর্ধদিবস কাজ করেন, যেন রূহানীভাবে দিনটি কাটাতে পারেন। সমাজের সহজ-সরল মানুষগুলো, বিশেষ করে প্রবীণরা, এই দিনে বিশেষ দোয়া ও সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান। ছুটি না থাকলেও এই দিনে মানুষের ধর্মীয় আবেগ ও আত্মিক অনুভব গভীরভাবে প্রকাশ পায়।
আখেরি চাহার সোম্বার ধর্মীয় গুরুত্ব
আখেরি চাহার সোম্বার ধর্মীয় গুরুত্ব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি মূলত এক আত্মিক উপলব্ধির দিন। যদিও ইসলামী শরিয়তে এটি ফরজ বা ওয়াজিব কোনো দিবস নয়, তবে দিনটিকে ঘিরে যে আত্মিক চর্চা ও আধ্যাত্মিক আবহ তৈরি হয়েছে তা অসামান্য। অনেক আলেম ও চিন্তাবিদ মত দিয়েছেন এই দিনটিতে ইবাদত করা বিদআত নয় বরং একটি নেক কাজ, যদি তা নির্দিষ্ট রীতিনীতিতে পরিণত না হয়। দিনটির মূল বার্তা হলো মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ সময়ে আরোগ্যের জন্য শুকরিয়া আদায় এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভরতা প্রকাশ করা।
আখেরি চাহার সোম্বা তাই একটি আত্মদর্শনের দিন যেখানে দোয়া, তাওবা, শোকরিয়া ও আত্মিক জাগরণের সমন্বয়ে একজন মুমিন নিজেকে সংযত করতে পারে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শরীর ও আত্মার সুস্থতা উভয়ের জন্যই আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা জরুরি। অনেকে প্রশ্ন করেন, আখেরি চাহার সোম্বা কি ছুটি হিসেবে গণ্য হয়? সরকারি দৃষ্টিকোণ থেকে না হলেও, কিছু ধর্মভিত্তিক সংস্থা, আলেম সমাজ, দরগাহ কমিটি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে এটি ছুটি হিসেবে বিবেচিত হয়। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় অর্ধদিবস অফিস করেন বা ছুটি নেন।
আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫ সালে কবে পড়বে
২০২৫ সালে আখেরি চাহার সোম্বা পড়বে ২ সেপ্টেম্বর, বুধবার। মুহররম মাসের শেষ বুধবার হিসেবেই দিনটি নির্ধারিত হয়, তাই প্রতিবছর হিজরি ও ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে তারিখ ভিন্ন হয়ে থাকে। আগেভাগেই অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান জানতে চান, আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫ সালে কবে, যেন দিনটি যথাযথভাবে পালন করার প্রস্তুতি নিতে পারেন। কেউ মিলাদ মাহফিল আয়োজন করেন, কেউবা দরগাহ বা মসজিদে বিশেষ দোয়া ও ইবাদতের জন্য সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু তখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায় আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি ২০২৫ সালে থাকবে? সরকারি ছুটির তালিকায় এই দিনটি অন্তর্ভুক্ত না থাকায়, এখনও এটি ঐচ্ছিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েই রয়ে গেছে।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই দিনে ছুটির বাস্তবতা
সরকারি ছুটির তালিকায় আখেরি চাহার সোম্বা না থাকলেও মানুষের আগ্রহ বরং সময়ের সঙ্গে আরও বেড়েছে। প্রতিবছর মুহররম মাসের শেষ বুধবার এলেই ফেসবুক, টুইটার ও গুগলে খোঁজ বেড়ে যায় আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি বাংলাদেশে? এই আগ্রহের পেছনে রয়েছে ধর্মীয় অনুভূতি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আত্মিক চর্চার চেতনা।
বেসরকারি পর্যায়ে দেখা যায়, অনেক ধর্মভিত্তিক সংস্থা ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান নিজেরা কর্মীদের ছুটি দেন বা ঐচ্ছিক ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। কিছু এনজিও, ইসলামিক প্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসাগুলো এদিন কার্যক্রম সীমিত রাখে বা বন্ধ রাখে। আবার অনেক অফিসে কর্মীরা ব্যক্তিগত ছুটি নিয়ে দিনটি পালন করেন।
আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে মুসলিমদের করণীয়
আখেরি চাহার সোম্বাকে কেন্দ্র করে অনেক মুসলমান নফল নামাজ, দোয়া, দরুদ শরীফ পাঠ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাওবা ও আত্মশুদ্ধির চর্চা করে থাকেন। এই দিনে মানুষ যেন তাঁর সব কষ্ট, ক্লান্তি ও অসুস্থতা আল্লাহর কাছে তুলে ধরে। মানুষ তাদের শারীরিক ও মনের রোগমুক্তির জন্যও বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। ইসলামী শরিয়তে এটি ফরজ নয়, তবে এটি এমন একটি দিন যেটা মানুষ বিশ্বাস, ভালোবাসা ও রূহানী তাড়নায় পালন করে।
অনেক আলেম মনে করেন, এই দিনে আল্লাহর কাছে ইবাদতের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা একটি প্রশংসনীয় আমল। কারণ মুহররম মাসের শেষ বুধবারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রোগ আরোগ্য লাভের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিনকে বিশেষভাবে মনে রাখা হয়।
অতএব, প্রশ্নটা কেবল আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি? এর উত্তর জানা নয় বরং এর অন্তর্নিহিত আত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন করাই মূল কথা। ছুটি না থাকলেও একজন ঈমানদার ব্যক্তি অন্তরের গভীরতা থেকে এই দিনটি পালন করেন, নীরবে, আন্তরিকতায় এবং পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে যে আল্লাহ তা কবুল করবেন। এতে রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি, ধৈর্যের চর্চা এবং জীবনের দুঃসময়েও আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখার এক চমৎকার উপলক্ষ।
সাধারণ মানুষের মাঝে আখেরি চাহার সোম্বা নিয়ে সচেতনতা
বাংলাদেশে আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি এই প্রশ্নটি যতটা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিষয়, ততটাই এটি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন। যদিও এটি এখনো সরকারি ছুটির তালিকায় নেই, কিন্তু মানুষের মাঝে দিনটি ঘিরে যে আত্মিক সচেতনতা ও গুরুত্ব গড়ে উঠেছে তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, ধর্মপ্রাণ মুসলমান, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, দরগাহভিত্তিক অনুসারী এদের মাঝে দিনটির তাৎপর্য খুব গভীরভাবে অনুভূত হয়। অনেকেই ছুটি না পেলেও কাজের ফাঁকে ফাঁকে দোয়া করেন, দরুদ পড়েরন যেন অন্তত এই পবিত্র দিনে কিছু সময় আল্লাহর সান্নিধ্যে কাটানো যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমেও আখেরি চাহার সোম্বার গুরুত্ব ও পালন পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সচেতনতা ছড়িয়েছে। শিশুদের জন্যও ধর্মীয় শিক্ষা বৃদ্ধি করতে বিশেষ প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়, যাতে তারা এ দিনের পবিত্রতা বুঝতে পারে। এই সচেতনতা কেবল ধর্মীয় দায়িত্বই না বরং এক ধরনের সামাজিক ঐক্যর বন্ধন। যেখানে মানুষের হৃদয় একসঙ্গে আল্লাহর দিকে ফিরে শান্তি, ক্ষমা ও কল্যাণ চায়। তবে এখনও কিছু জায়গায় ভুল ধারণা ও তথ্যের অভাব রয়েছে, যা আরও সচেতনতা বাড়িয়ে দূর করার প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে এই দিনের গুরুত্ব ও ছুটি
আখেরি চাহার সোম্বা বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন মুসলিম দেশে আলাদা গুরুত্ব ও স্বীকৃতি পেয়েছে। যেমন পাকিস্তানের কিছু প্রদেশে আখেরি চাহার সোম্বাকে ঐচ্ছিক ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই দিনটিতে ছুটি দেয়। ইরান, ইরাক, এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই দিনটিতে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও অন্যান্য রূহানী আয়োজন করে থাকে। ওই দেশে আখেরি চাহার সোম্বার দিন কর্মসূচি সীমিত রাখা হয় বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে যা মানুষকে আল্লাহর নিকট আরো বেশি সময় দোয়া ও ইবাদতের সুযোগ দেয়।
আমার মন্তব্য ও ব্যক্তিগত উপলব্ধি
আমার দৃষ্টিতে, আখেরি চাহার সোম্বা হোক একটি উপলক্ষ নিজের ভেতর তাকওয়া বাড়ানোর, দোয়ার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হবার। আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি কি না এই প্রশ্নের চেয়ে বেশি জরুরি হলো আমরা এই দিনের গভীর তাৎপর্য কতটা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি। তবে রাষ্ট্র যদি এই দিনটিকে সম্মান জানিয়ে ঐচ্ছিক ছুটি দেয়, তাহলে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে তা পালন করতে পারবে। এতে করে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান বাড়বে।
নিশ্চিতভাবেই, হৃদয়ের গভীরতা থেকে এ দিনের তাৎপর্য উপলব্ধি করাই হলো সেরা উদযাপন। আসুন, সবাই মিলে এই পবিত্র দিনটিকে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও ঐক্যের মাধ্যমে স্মরণ করি।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url