পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। আশুরা হচ্ছে ইসলামিক ক্যালেন্ডারে মহররম মাসের ১০ তারিখ। এটি ইসলামি ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
ছোট থেকেই ইসলামের ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। তার ভেতর মহররম মাসের গুরুত্ব অনেক। এমনকি আশুরার রোজা রাখা নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে যে আশুরার রোজা কতগুলো বা এই রোজার ফজিলত কি। চলুন জেনে নিই আশুরার রোজা এবং আশুরার দিনের সকল ইবাদত ও তার গুরুত্ব।
পোস্ট সূচীপত্র: পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে ইসলামিক বাণী
- মহররম ও আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- আশুরার রোজা রাখা কি
- আশুরার রোজা কমপক্ষে কয়টি রাখা সুন্নত
- আশুরার রোজার ফজিলত ও সওয়াব
- ইসলামে আশুরা এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন
- আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনাবলি
- আশুরায় বিশ্বনবীর রোজা পালনের কারন ও ফজিলত
- আশুরা নিয়ে লেখকের শেষ কথা
মহররম ও আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য মহান। মহররম হিজরি সনের প্রথম মাস, যা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস। মহররম মাসের দশম দিন আশুরা নামে সমগ্র মুসলিম জাতীর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন হিসাবে পরিচিত। এই মাসটি মুসলিম উম্মাহর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন তারা অত্যন্ত পবিত্রতার সাথে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করার মাধ্যমে নতুন বছর শুরু করে। সূরা আত-তাওবাঃ৩৬ নাম্বার আয়াতে বর্ণনা করা আছে পবিত্র হিজরি সনের ১২ টি মাসের মধ্যে ৪ টি পবিত্র মাস, যা হলো- মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ্জ। এই চারটি মাসে গুনাহ করা যেমন নিন্দনীয়, তেমন ইবাদত ও নেক কাজের সওয়াবও ততো বেশি।
আশুরা শব্দটি এসেছে আরবি আশারা থেকে যার অর্থ "দশ" । পবিত্র মহররম মাসের দশম দিনকে বলা হয় আশুরা। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম পবিত্রতার সাথে সকল নিয়ম কানুন মেনে আশুরা পালন করে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে আশুরার দিনে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটার কথা বলা হয়েছে। একদিকে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.) এবং তার জাতিকে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই দিনেই কারাবালার ময়দানে ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তার সঙ্গীদের শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটে। আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য শোক ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
আশুরার রোজা রাখা কি
আশুরার রোজা রাখা ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল। আশুরার রোজাকে একই সাথে মুস্তাহাব ও সুন্নত বলা হয়েছে। মুস্তাহাব এই জন্য যে, যেই আমল করলে সওয়াব পাওয়া যায় কিন্তু না করলে গুনাহ হয়না অর্থাৎ আপনি আশুরার রোজা রাখলে এক বছরের সকল ছোট ছোট গুনাহ মাফ করে দেওয়ার সওয়াব পাবেন। আপনিও কি আশুরার রোজা রাখেন? জানেন কি এই রোজার পেছনে কি ইতিহাস ও ফজিলত আছে? যদি এই রোজা না করেন আপনার কোন গুনাহ হবেনা কিন্তু আপনি সওয়াব পাওয়া থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবেন।
যেহেতু পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক তাই হযরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরার রোজা নিজে রাখতেন এবং সাহাবিদেরকেও রাখতে উৎসাহ দিতেন। যাকে আমরা বলি নবীজীর সুন্নত অর্থাৎ আপনারা নবীজীকে ভালবেসে তার উপর বিশ্বাস রেখে এই দিনের রোজাগুলো রাখতে পারেন। এতে করে আল্লাহ্ তা'আলা খুশি হবেন এবং আপনিও গুনাহ মাফের মধ্য দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করার মতো সওয়াব পাবেন। তবে, তিনি কখনই ফরজ বা ওয়াজিব বলে ঘোষণা করেননি।
আশুরার রোজা কমপক্ষে কয়টি রাখা সুন্নত
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশুরা উপলক্ষে পথমে কেবল ১০ই মহররম রোজা রেখেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বলেন আমি আগামী বছর ৯ম ও ১০ম তারিখে রোজা রাখব যা দুটি রোজা হিসাবে গণ্য হচ্ছে এবং এটি (সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ১১৩২) আলোচনা করা হয়েছে। এই হাদীস থেকে বিভিন্ন ওলামা ইকরামগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে হয়তো রাসূল (সা.) দুটি রোজা রাখার মধ্য দিয়ে ইহুদীদের নিয়ম কানুন থেকে আলাদা হতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়
যেহেতু মহররম মাসের ১০ম দিন পবিত্র আশুরা। সুতরাং আমরা মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মানুষ যারা আছি পবিত্র মহররম মাসের ৯ম ও ১০ম অথবা ১০ম ও ১১তম দিনে মোট ২ টি করে রোজা রাখতে পারি। তবে যদি কেও শুধুমাত্র ১০ম তারিখ বা আশুরার দিন একটি মাত্র রোজা রাখতে চান সেটিও গণ্য করা হবে। এটি মুস্তাহাব ও সওয়াবের কাজ হবে। তবে ৯ম ও ১০ম অথবা ১০ম ও ১১তম দুটি রোজা রাখা যায় সেটি উত্তম ও সুন্নত বলে আল্লাহ্ কবুল করবেন। পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য খেয়াল করে কেউ যদি ৯ম, ১০, ও ১১তম দিনে মোট ৩ টি রোজা রাখতে চান সেটি সব থেকে ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত হিসাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে।
আশুরার রোজা রাখার ফজিলত ও সওয়াব
আশুরার রোজার ফজিলত অন্যান্য দিনের রোজার থেকে অনেক বেশি। আশুরার রোজা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যার মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মার শুদ্ধি কামনা করি। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা কখনো কখনো থেমে যাই, একটু নিজেকে ফিরে দেখি, আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটতে চাই। ঠিক তখনই আসে আশুরা ইসলামি ইতিহাসে এক গভীর আবেগ ও শিক্ষায় ভরপুর দিন। এটি হিজরি মহররম মাসের দশম দিন, যার সাথে জড়িয়ে আছে নবী-রাসূলদের ত্যাগ, ধৈর্য, বিশ্বাস আর আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা। আশুরার দিনে রোজা রাখা শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি এক গভীর আত্মিক চর্চাও। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে আশুরার রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে উৎসাহ দিতেন।
হাদীসে এসেছে, “আমি আশা করি আল্লাহ তা’আলা আশুরার রোজার বিনিময়ে তিনি অতীতের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।” (সহীহ মুসলিম)
কিন্তু আমরা কেন রাখব এই রোজা? এই প্রশ্নটা হয়তো অনেকেই ভাবেন। আসলে আমাদের জীবনের কত ভুল, অনুশোচনা আর অপূর্ণতা জমে থাকে মনের গভীরে। আশুরার রোজা যেন সেই সব ভুল মুছে ফেলার, নিজেকে নতুন করে গড়ার এক সুন্দর সুযোগ। এই রোজা আমাদের আল্লাহর আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে সহায়তা করে। আশুরার ইতিহাস নিজেই এক অসাধারণ শিক্ষা। এই দিনেই আল্লাহ হযরত মূসা (আ.) ও বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দেন। আবার এই দিনেই কারবালার প্রান্তরে সত্য ও ন্যায়ের পথে শহীদ হন নবীজীর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হুসাইন (রা.)।
এই রোজা যেন শুধু ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করা নয়, বরং আত্মশুদ্ধির এক বাস্তব অনুশীলন। আমরা যখন এই রোজা রাখি, তখন শুধু একটি সুন্নত পালন করি না আমরা একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আল্লাহর কাছে নিজের ভেতরের সংশোধনের দরজা খুলি। পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে বলেই, আমি যখন আশুরার রোজা রাখি, একটা নিরব অনুভব কাজ করে- নিজেকে একটু বদলানোর, নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বানানোর, গুনাহ থেকে ফিরে আসার। মনে হয়, এই ছোট্ট চেষ্টা যদি আল্লাহ কবুল করে নেন, তবে হয়তো আমার জীবনের অনেক বড় ভুল তিনি ক্ষমা করে দেবেন।
ইসলামে আশুরার এতো গুরুত্ব কেন
আমরা অনেকেই জীবনে এমন কিছু দিন অনুভব করি যে দিনগুলো শুধু ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত নয়, আমাদের স্মরণে থেকে যায়। আশুরা ঠিক তেমনই একটা দিন। হিজরি সনের মহররম মাসের ১০ তারিখটি শুধু একটি তারিখ নয়, বরং মুসলিমদের জন্য ইতিহাস, ইমান ও আত্মত্যাগের একটি মহান দিবস। এই দিনে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহর রহমতে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই থেকে মুসলিম জাতীসহ সারা বিশ্ব একটাই শিক্ষা পায় যে জুলুমকারীর কোন ছাড় নেই। একদিন না একদিন তারা তাদের কর্মের ফল অবশ্যই পাবেন।
আবার এই দিনেই ঘটে কারাবালার সেই হৃদয় বিদারক ঘটনা। নবীজীর দৌহিত্র বা নাতী হযরত হুসাইন (রা.) অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করে শহীদ হন। এতে তিনি প্রমাণ করে গেছেন আমাদের ঈমান শক্ত রাখতে হলে ন্যায়ের পথে থাকতে হবে। আশুরা আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনে কখনও অন্যায়ের সাথে আপস করা যাবে না। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই এই দিনে রোজা রাখতেন। তিনি বলতেন, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মাফের উপায় হতে পারে যদি তোমরা সঠিক ভাবে তা ঈমানের সহিত পালন করো।
পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদেরকে নবীজি (সাঃ) নিজে বিভিন্ন সময় জানিয়ে গেছেন। আমি আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি থেকে মনে করি আশুরার দিনটি কেবল ইসলামের একটি স্মরণীয় দিন নয়। এটি নিজের ভিতরে ফিরে দেখা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ঠিক রাখা এবং আল্লাহর দিকে ঈমানের পথে আরও এক পা এগিয়ে যাওয়া। তাই ইসলামে আশুরার গুরুত্ব এতো বেশি।
আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনাবলি
কারাবালার ঘটনা ও আশুরার রোজার তাৎপর্য নিয়ে এই পয়েন্টটি সাজানো হয়েছে। আমি যতবার আশুরার ইতিহাস পড়ি বা শুনি মনে হয়, এই একটা দিন যেন মানবজাতির বিশ্বাস, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। এই ইতিহাসের পিছনে শুধু ধর্মীয় দিক নই রয়েছে গভীর মানবিক বার্তা। তাহলে চলুন দেখে নিই কি ঘটেছিল এই পবিত্র আশুরার দিনে যার জন্য এখনো মুসলিমসহ সারা বিশ্বের মানুষ এই দিনটাকে ঈমানের সহিত শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে। এই দিনটি কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। যেমনঃ হযরত মূসা (আ.) ও বনী ইসরাইলের মুক্তির গল্প, কারাবালার প্রান্তরে হযরত হুসাইন (রা.) এর শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং আরও কিছু ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাসিক ঘটনা। চলুন বিস্তারিত জানি।
হযরত মুসা (আ.) ও বনী ইসরাইলের মুক্তির গল্পঃ আশুরার দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মূসা (আ.) ও তার অনুসারীরা ফেরাউনের ধ্বংসের মাধ্যমে জুলুমের হাত থেকে মুক্তি পায় এই দিনে। ফেরাউন নিজেকে সর্বশক্তিমান ও প্রভু বলে দাবি করত, বনী ইসরাইল জাতিকে দাস বানিয়ে রেখেছিল। মূসা (আ.) আল্লাহ্র নির্দেশে দূত হিসাবে তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন, সত্যের পথে ডাকেন। কিন্তু ফেরাউন তা নাকচ করে সে নিজের কুকর্ম চালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মূসা (আ.) তার জাতিকে নিয়ে মিশর ছাড়তে বাধ্য হলেন।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকা
এই সময় ফেরাউন তাদের পিছনে বিশাল বাহিনী নিয়ে ধাওয়া করে। সামনে বিশাল সমুদ্র ও পিছনে শত্রু নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে যান মূসা (আ.), তবুও তিনি অটল থাকেন এবং আল্লাহ্র নির্দেশে ঘটে যায় এক অলৌকিক ঘটনা। মূসা (আ.) এর হাতে থাকা লাঠির আঘাতে সমুদ্রের পানি দুই দিকে সরে যায় এবং মাঝখানে রাস্তা তৈরি হয়ে যায়। বনী ইসরাইলদের নিয়ে তিনি নিরাপদে পার হয়ে যান এবং ফেরাউন ও তার দলবল সমুদ্রের পানিতে ডুবে মারা যায়। জীবনে যতো বিপদ আসুক না কেন আল্লাহ্কে স্মরণ করতে হবে, তিনি ইমানদারদের সঙ্গ ছেড়ে দেন না।
কারাবালার প্রান্তরে হযরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত বরণঃ আশুরার দিনের সবথেকে কঠিন ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল হিজরি ৬১ সনে। রাসূলুল্লাহ (সা.) দৌহিত্র হযরত হুসাইন (আ.) তখনকার শাসক অত্যাচারী ইয়াজিদের অন্যায়, জুলুম ও ধর্মের মিথ্যাচার এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহ্র প্রিয় নবীর রক্তের উত্তরসূরি অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। পরিবার পরিজনসহ ছোট একটি দল নিয়ে কারাবালার প্রান্তরে পৌঁছান। সেখানে ইয়াজিদের বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে এবং খাদ্য ও পানির সংকটে চারিদিকে হাহাকার পড়ে যায়। বাচ্চা বুড়ো সবাই কষ্ট পেতে থাকে।
তবুও তিনি মাথা নত করে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি বরং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। ১০ মহররম, আশুরার দিন তিনি যুদ্ধে শহীদ হন। সবাই একে একে প্রাণ দেন কিন্তু তবুও কেউ সত্য থেকে সরে যাননি। কী অসাধারণ সাহস, বুদ্ধিমত্তা, ঈমানের অধিকারী ছিলেন বলেই আজও তারা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। মিথ্যা বা অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করে সত্যের পথে চলার শিক্ষা আমরা এই ঘটনা থেকে পাই।
আরেকটি ঘটনা বলি আপনাদেরঃ এই দিনে হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে আগুনে নিক্ষিপ্ত করা হয়। কিন্তু আল্লাহ্ সেই আগুনকে পানির মতো শান্তির আর সহজ করে দেন। হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা দীর্ঘদিন পানির উপরে ভেসে ছিল এবং এই দিনেই তা কিনারায় ভিড়ে। অন্যদিকে হযরত আইয়ুব (আ.) তার দীর্ঘ অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভ করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসেন। এছাড়াও হযরত ইউনুস (আ.) দীর্ঘ সময় মাছের পেটের মধ্যে থাকার পর আল্লাহ্ তাকে মুক্তি দান করেন।
আল্লাহ্র নির্দেশে তার ইচ্ছায় কতগুলো স্মরণীয় ও করুণ কাহিনী ঘটেছে এই পবিত্র দিনে যা ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। যা আমাদের আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য থাকার শিক্ষা দেয়।
আশুরায় বিশ্বনবীর রোজা পালনের কারন ও ফজিলত
আশুরার দিনে রোজা রাখা নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আছে। যেহেতু আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে এই দিনটিতে রোজা রাখতেন এবং পবিত্রতার সাথে পালন করতেন সেহেতু এই দিনটির ইবাদতের তাৎপর্য অনেক। যখন বিশ্বনবী মদীনায় হিজরত করে আসেন, তখন দেখতে পান ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তখন তিনি কারণ জানতে চাইলেন। তারা বলল, এই দিনেই আল্লাহ্ হযরত মূসা (আ.) কে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এইজন্য আমরা কৃতজ্ঞতার প্রতিক হিসাবে এই রোজা রাখি।
নবীজি (সা.) এই কথা শুনার পর বলেন- মূসা (আ.) এর সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ। তখন থেকেই তিনি নিজেও পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে মানতেন এবং সাহাবিদেরকেও রাখতে উৎসাহ দিতেন। নবীজি (সা.) মুসলিম উম্মাহকে সব নবী-রাসূলের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাতে শিখিয়েছেন। তাই যিনি এই রোজ রাখবেন, আল্লাহ তার গত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
একবার ভাবুনতো, আমরা প্রত্যেকে সারা বছর ছোট বড় নানান ভুল ত্রুটি করে থাকি। যেগুলোর কোনটার জন্য আমরা হয়তো আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইতেও ভুলে যাই। আল্লাহ্ নিজে থেকে তার ভুলোমনা গুনাহগার বান্দাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়ার একটা সুন্দর সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই আমরা যারা মুসলিম ভাই বোনরা আছি অবশ্যই চেষ্টা করবো এই দিনটিতে রোজা রাখার এবং ঈমানের সহিত তা পালন করার।
আশুরা নিয়ে লেখকের শেষ কথা
পবিত্র আশুরার রোজা এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আমার এই লিখাই অনেক কিছুই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। মহররমের ইতিহাস সম্বন্ধে আশা করি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছি। এমনকি কতগুলো রোজা রাখতে হবে এবং তার ফজিলত সম্পর্কেও জেনেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি মুসলিম, ইহুদিসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকদের এই পবিত্র মাস সম্পর্কে জানা উচিৎ। সত্য ও ন্যায়ের পথে যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করতে রাজি বা যারা করে আসছে এই মহান কাজগুলো তারা এই ইতিহাস থেকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url