দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়
পবিত্র আশুরার রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্যদুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়, আপনি কি সেগুলো জানতে চান? হঠাৎ মানসিক অশান্তি, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন কিংবা কঠিন অসুখ—সবকিছুর মাঝেই আল্লাহ্ আমাদের তাঁকে স্মরণ করতে বলেন।
বিপদের সময় একমাত্র আশ্রয় আল্লাহর দরবারেই পাওয়া যায়। সেই মুহূর্তে দুঃসময়ে ফলদায়ক দোয়া আমাদের মনকে শান্ত করে, পথ দেখায়। এই লেখায় আমরা জানব বিপদে দোয়ার উপকারিতা এবং এমন কিছু দোয়া, যা কঠিন সময়ে সত্যিই ফলদায়ক হয়।
দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সূচিপত্র
- দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়
- আল্লাহ্র উপর ভরসা ও তাকওয়ার ভূমিকা
- বিপদের সময় দোয়ার গুরুত্ব
- হাদীসে উল্লেখিত বিপদের সময় পড়ার দোয়া
- নবীদের দোয়া যেগুলো বিপদে বেশি ফলদায়ক
- দোয়া কবুলের সময় ও শর্তাবলি
- দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন এমন কিছু দোয়া ও তার ব্যবহার
- দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয় এই বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়
দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয় তা জানা যেমন জরুরী তেমনি বিপদে তা আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াও জরুরী। জীবনে চলার পথে এমন অনেক সময় আছে যখন হাজারো ভিড়ের মাঝে মানুষ নিজেকে একা হিসেবে আবিস্কার করে। চারপাশে আপন বলতে কাউকে পায়না তখন তার একটা কথাই মনে হয় যে একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ নাই। এমনকি মহান আল্লাহ্ তা'আলা মানবজাতির উদ্দেশে বলেছে তোমরা ভালো সময়ে আমাকে মনে না করলেও অবশ্যই তোমাদের খারাপ সময়ে আমাকে মনে করো আমি তোমাদের সাহায্য করবো। আল্লাহ্ তার প্রেরিত সকল নবী রাসূলের মাধ্যমে আমাদের কাছে অনেক দোয়া ও আমল পৌঁছে দিয়েছেন।
যেমন হযরত ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটে বন্দি ছিলেন তখন তিনি আল্লাহ্কে মনে করেছিলেন, আল্লাহ্র কাছে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন এবং আল্লাহ্ তা কবুল করেন। ঠিক এইভাবেই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অনেক দোয়া হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার উম্মতদের শিখিয়ে গেছেন। আমরা যখনই একান্তে কষ্ট পাব বিপদে পড়বো আল্লাহ্কে ভক্তি ভরে স্মরণ করবো। নিশ্চয়ই তিনি বিপদ থেকে পরিত্রান দেবেন। সুখের সময় আমরা যেমন আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করবো তেমনি খারাপ সময়ে আল্লাহ্কে মনে করবো। তার দেখানো পথে চলে মুমিন বান্দার পরিচয় দিব তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ খুশি হবেন এবং সর্বদা বান্দার সুখে থাকার জন্য সাহায্য করবেন।
আল্লাহ্র উপর ভরসা ও তাকওয়ার ভূমিকা
জীবন প্রতিনিয়ত আমাদের পরীক্ষা নেয়। কখনও জীবন সহজ ও সুন্দর আবার কখনও এতোটাই কঠিন যা মনে করিয়ে দেয় আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখা কতটা প্রয়োজন। আল্লাহ্ আপনার জীবনে সুখের পাশাপাশি দুঃখও দিয়েছেন যেন আপনি আল্লাহ্কে ভুলে না যান। আল্লাহ্র উপর ভরসা মানে সকল কাজ কর্ম ত্যাগ করে শুধুমাত্র ফল পাবার আশায় বসে থাকা নয় বরং মনে প্রাণে চেষ্টা করা, কর্ম করে যাওয়া এবং ভালো ফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা রাখা। আল্লাহ্ যা সিদ্ধান্ত নিবেন বান্দা খুশি মনে তা মেনে নিলে যে মানসিক প্রশান্তি পায় তা আর দুনিয়ার কোথাও পাওয়া যায়না।
আরো পড়ুন: আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি
আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখা, তার কথা মত চলা, আল্লাহকে ভয় করে তার দেখানো পথে চলাই হলো তাকওয়া। একজন মুমিন ব্যক্তির কাছে তাকওয়ার গুরুত্ব অনেক কারণ তিনি জানেন কিভাবে আল্লাহ্র দিদার লাভ করা যায় এবং আল্লাহ্র সন্নিকটে যাওয়া যায়। তাকওয়া শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা বা হজ্ব পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার প্রতিটি ধাপে যে আল্লাহ্কে স্মরণ করবে সেই একজন মুমিন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত হবে। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে যাবে এবং আখিরাতের কথা সবসময় চিন্তা করবে। মুসলমানদের জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অনেক কারণ তাকওয়া একজন মানুষকে শুধু মুসলিমই না ভালো মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলে।
বিপদের সময় দোয়ার গুরুত্ব
জীবনের পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ এমন কিছু সময় আসে, যেখানে চারপাশ অন্ধকার মনে হয়। বিপদ, কষ্ট, হাজারো সমস্যা যেন একসাথে আমাদের মনকে চেপে ধরে। এমন সময় মানুষ শান্তি খুঁজতে অনেক কিছুর পিছনে ছুটে কিন্তু লাভ হয়না শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ হয় একমাত্র ভরসা। এমন পরিস্থিতিতে দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়, সেগুলো মন থেকে পাঠ করা হতে পারে সবচেয়ে বড় শান্তি ও মুক্তির পথ। এই জন্য বিপদের সময় দোয়ার গুরুত্ব অনেক।
দোয়া শুধু সমস্যার সমাধান চাওয়ার মাধ্যম নয়, এটি আল্লাহ্র প্রতি আমাদের ভরসা ও ভালবাসার প্রকাশ। আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করা বান্দার কর্তব্য। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছে সারা জীবনের সমস্ত গুনাহের মাফ চাওয়ার সুযোগ হয় এবং পরম করুণাময় আল্লাহ্ আমাদের দোয়া কবুল করেন। দোয়া আমাদের মনকে শক্ত করে, কষ্টের সময়, বিপদের সময় ধৈর্য ধরতে শেখায়। দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাই, তাঁর উপর যে আমরা কতটা নির্ভরশীল এবং অসহায় সেটা স্বীকার করি। দোয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা কখনই একা নয়, আল্লাহ্ আমাদের সাথেই আছেন।
হাদীসে উল্লেখিত বিপদের সময় পড়ার দোয়া
দুঃসময়ে মন শান্ত করার জন্য ইসলামিক দোয়াগুলো আমাদের জীবনে অনেক বেশি উপকারে আসে। আমরা আমাদের জীবনের সকল বিপদ আপদ, অসুখ, দুঃখ কষ্ট ও পাপ থেকে মুক্তির জন্য যখন আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবো, তখনই আমরা চাইলে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দুঃসময়ে মন শান্ত করার জন্য ইসলামিক সকল দোয়া পাঠ করতে পারি। বিপদের সময় বান্দার আর্তনাদ মহান আল্লাহ্ শুনে থাকেন এবং মন থেকে সাড়া দেন। সে জন্য আমরা বেশ কিছু হাদিসের দোয়া অর্থ সহকারে আপানাদের সামনে তুলে ধরছি। আপনি আমল করলে নিশ্চয় এর ফলাফল পাবেন।
দোয়াঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকীল (অর্থঃ আল্লাহ্ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই সবচেয়ে উত্তম সাহায্যকারী)।
যখনই মনে হবে সব দিক বন্ধ আপনি নিরুপায় আপনার দারা যেনো কোন ভুল না হয়ে যায় সেই জন্য আপনি সবসময় এই দোয়াটি পাঠ করতে থাকবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ আপনাকে ফিরিয়ে দেবেন না।
দোয়াঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হামী ওয়াল হাযান, ওয়াল আজজি, ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবন, ওয়া দোলা' ইদ দাইনি গালাবতির রিজাল (অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই দুঃখ, চিন্তা, অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের ভার এবং মানুষের অত্যাচার থেকে)।
আপনি জীবনে কখনও ঋণগ্রস্ত হয়ে যান বা মানুষের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হন তাহলে এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। এটি হতে পারে আপনার সকল অশান্তি থেকে মুক্তির পথ।
দোয়াঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (অর্থঃ আমরা তো আল্লাহ্র জন্যই এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাব)।
কেউ মারা গেলে, বা কোন শোকের সময় বা খারাপ কোন খবর শুনলে, বিপদে পড়লে মানুষ এই দোয়া পড়ে আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণ করে।
দোয়াঃ ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম, বিরাহমাতিকা আস্তাগীস, আসলিহ লি শা'নি কুল্লাহু, ওয়া লা তাকিলনি ইলা নাফসি তোরফাতা আইন। (অর্থঃ হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাকারী! আমি আপনার দয়া চাই। আপনি আমার সব কাজ ঠিক করে দিন এবং এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে নিজের উপর ছেড়ে দিবেন না।
আপনি যখন জীবনের সকল ভুল বুঝতে পেরে শুধুমাত্র আল্লাহ্র উপর ভরসা করে জীবন পার করে দিতে চাইবেন তখন এই দোয়াটি বার বার পাঠ করবেন।
দোয়াঃ আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা'আলতাহু সাহলা, ওয়া আনতা তাজআলুল হাযনা ইযা শি'তা সাহলা। (অর্থঃ হে আল্লাহ্! আপনি ছাড়া কিছুই সহজ নয়। আপনি চাইলে কঠিন জিনিসও সহজ করে দেন)।
জীবনে জটিল সময়ে এই দোয়াটি পাঠ করবেন আল্লাহ্ সহায় হবেন।
এইসকল দোয়া পাঠের মধ্য দিয়ে আপনি আপনার জীবনে আনতে পারেন শান্তি। কেননা আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আপনাকে সকল বিপদ থেকে মুক্তি দিবেন এবং সুন্দর জীবন যাপনের পথ সহজ করে দিবেন।
নবীদের দোয়া যেগুলো বিপদে বেশি ফলদায়ক
যুগে যুগে আমাদের নবী রাসুলগণ তাদের উম্মতদের সুন্দর জীবনের জন্য কষ্টের সময় পড়ার সহজ ও শক্তিশালী দোয়া দিয়ে গেছেন। তারা তাদের নিজের জীবনে সেই সকল দোয়ার ব্যবহার দেখিয়েছেন, যেন মানব জাতি সহজেই তাদের জীবনে সেগুলোকে প্রয়োগ করতে পারে। এবার জেনে নিন দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়।
আরো পড়ুন: বাবা মায়ের নাম দিয়ে সন্তানের নাম রাখার নিয়ম
ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটে আটকে যায় তখন আল্লাহ্র কাছে বিপদ থেকে মুক্ত হতে এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন-
"লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্ত মিনাজ জ্বালিমিন" এর অর্থ হলো আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, আমি নিশ্চিতভাবে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসে আছে যে ব্যক্তি বিপদে এই দোয়াটি পাঠ করেন আল্লাহ্ তাকে অবশ্যই সাহায্য করেন।
আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আমাদের নবীদের ও বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তেমনই এক পরীক্ষা দিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.)। তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো তখন তিনি এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন-
"হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল" এই দোয়া সম্বন্ধে আমারা আগেও আলোচনা করেছি।
আয়ুব (আ.) যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন এই দোয়াটি পাঠ করতেন, মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে তাকে সুস্থতা দান করেন এবং এই দোয়ার গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করেন-
"রাব্বি ইন্নি মাসসানিয়াদ দুউররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমিন" এর অর্থ হে আমার প্রভু! আমাকে কষ্ট স্পর্শ করেছে আর আপনি পরম দয়ালুদের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু।
ধর্ম প্রচার করতে আমাদের নবীদের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমন সময় মানসিক চাপ, ভয় ও জিহ্বার জড়তা দূর করতে মূসা (আ.) এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন-
"রাব্বিশরাহলি ছাদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল লিসানি, ইয়াফকাহু কাওলি"
ইমারান পরিবার ভীষণ বিপদে পড়ে সাহায্যের জন্য এই দোয়াটি পাঠ করে আল্লাহ্র শরণাপন্ন হয়েছিলেন-
"রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়াসাব্বিত আকদামানা ওয়ানসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন" এর অর্থ হলো হে আমাদের রব! আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করুন, আমাদের পদসমূহ দৃঢ় করুন এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।
চরম বিপদ, যুদ্ধ, মানসিক লড়াই এইসকল সময়ে মুক্তির আশায় আএই দোয়া পাঠ করা যেতে পারে।
দোয়া কবুলের সময় ও শর্তাবলী
আমরা এতক্ষণ জানলাম দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়। এখন জানবো কোন কোন সময় আল্লাহ্র কাছে দোয়া প্রার্থনা করেল আল্লাহ্ তা কবুল করে নেন। আসলে আল্লাহ্র কাছে আমরা সবসময় ক্ষমা প্রার্থনা করবো এবং দোয়া পাঠ করতে থাকবো। এর জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আল্লাহ্ তাঁর বান্দার দোয়া যেকোনো সময় কবুল করতে পারেন তবে কোরআন ও হাদিসে বিশেষ কিছু সময়ের কথা উল্লেখ আছে যখন দোয়া করলে আল্লাহ্র কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। সেই সময়গুলো কখন এবং কিভাবে আল্লাহ্র কাছে আমরা প্রার্থনা করতে পারি তা জানবো-
- রাসুল (সা.) বলেছেন, তাহাজ্জুদের সময় বা রাতের শেষ প্রহরে যখন চারিদিক নিঃশব্দ থাকে তখন আল্লাহ্ আসমানের সবচেয়ে নিচের স্তরে নেমে আসেন এবং বলেন কে আমাকে ডাকবে, যাতে আমি তার ডাকে সাড়া দেই। এই সময় একান্তে চোখের পানি ফেলে আল্লাহ্র দরবারে কিছু চাইলে তা তিনি কবুল করেন।
- জুমার দিন মুসলমানের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন কেননা এই দিনে কেয়ামত হবে বলে কোরআনে উল্লেখ আছে। বিশেষ করে আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত সময়ে কেউ দোয়া প্রার্থনায় বসলে আল্লাহ্ তাকে ফিরিয়ে দেন না।
- নামাজ ও আযান এমন একটি পবিত্র সময়, রাসুল (সা.) বলেন আযান ও ইকামতের মাঝখানে কেউ যদি আল্লাহ্র কাছে দোয়া প্রার্থনা করে তাহলে তার খালি হাত ফিরে আসেনা।
- তিরমিজি শরীফে বর্ণিত আছে রোজদারের দোয়া কখনও আল্লাহ্ প্রত্যাখ্যান করেন না। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে দোয়া করলে তা খুব দ্রুত কবুল হয়।
- বৃষ্টি হলো আল্লাহ্র রহমত। যখন আল্লাহ্ তার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন তখন তার বান্দা ভক্তিভরে অশ্রু সিক্ত চোখে আল্লাহ্র কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ্ খুশি হন।
অতি সতর্কতা ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্র কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে হবে। দোয়া মানে শুধুমাত্র মুখে কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করা নয়, অন্তরের গভীর থেকে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া। তবে যে ব্যক্তি হারাম খায় বা হালাল রিজিকের সাথে যুক্ত না আল্লাহ্ তার দোয়া কখনই কবুল করেন না। আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্যের সাথে দোয়া করতে হবে কারণ যারা তাড়াহুড়ো করেন এবং শুধুমাত্র ফল ভোগের আশায় থাকেন তাদের প্রতি আল্লাহ্ নারাজ হন। অবশ্যই দোয়ার শুরুতে ও শেষে দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন।
দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন এমন কিছু দোয়া ও তার ব্যবহার
দোয়া এমন একটা জিনিস যা শুধু দুঃসময় ও বিপদে পড়তে হয় এমন কিছু না। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের চলার পথে দোয়ার ব্যবহার সম্পর্কে বলেছেন। আল্লাহ্র নামে সবকিছু শুরু করলে আমরা সয়তান থেকে বিরত থাকবো এবং সবকিছু সহজ ও সুন্দর হবে। ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সকল কাজেই রয়েছে আলাদা আলদা দোয়ার ব্যবহার ও এর গুরুত্ব। তাহলে চলুন জেনে নিন কি কি সেই দোয়াঃ
- ঘুম থেকে উঠার পর এই দোয়াটি পাঠ করতে হয় "আলহামদু লিল্লাহহিল্লাযি আহইয়ানাহু বা'দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর" অর্থ হলো সব প্রশংসা সেই আল্লাহ্র, যিনি আমাদের মৃত্যু বা ঘুমের পর আবার জীবিত করেছেন, আর তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
- খাবার শুরু করার আগে "বিসমিল্লাহ্" পাঠ করতে হবে অর্থ আল্লাহ্র নামে খাওয়া শুরু করছেন।
- খাবার শেষে এই দোয়া পাঠ করবেন "আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি আতআমানা ওয়া সাকানা ওয়া জা'আলানা মিনাল মুসলিমিন" অর্থ হলো সকল প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি আমাদের আহার করালেন, পানি দিলেন এবং মুসলমান বানালেন।
- ঘর থেকে বের হওয়ার সময় "বিসমিল্লাহি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, ওলা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" আল্লাহ্র নামে, আমি তাঁর উপর ভরসা করলাম, এবং আল্লাহ্ ছাড়া কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই।
- টয়লেটে প্রবেশের সময় পড়তে হয় "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবাইস" হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অপবিত্র ও ক্ষতিকর জিন ও শয়তান থেকে।
সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের জন্য এই দোয়াগুলোর গুরুত্ব অনেক। আপনারা চেষ্টা করবেন প্রত্যেকদিন চলার পথে এই দোয়াগুলো ব্যবহার করতে। নিয়মিত আমলের ফলে আপনার জীবন আরও সুন্দর হবে।
দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয় এই বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
দুঃসময় ও বিপদে পড়লে যেসব দোয়া বেশি ফলদায়ক হয়, তা আমরা তখনই গভীরভাবে অনুভব করি, যখন জীবনে কোনো এক সময় এসে আমরা থেমে যাই বা একাকীত্ব বোধ করি। চারপাশে এর কোনো সমাধান খুঁজে পায়না একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কোনো পথে খোলা থাকেনা। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। সময়ের সাথে এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। সেই সাথে এটাও বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ্ সবসময়ই আমাদের সাথে ছিলেন। জীবনের মোহতে আমরা তাকে ভুলে গেলেও আল্লাহ্ কখনই তাঁর বান্দার হাত ছেড়ে দেননি। তাই আমারা যখনি তাঁকে মনে করেছি ক্ষমা প্রার্থনা করেছি তিনি আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং নতুন করে পথ দেখিয়েছেন।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url