অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য আমার কাছে এখন শুধু একটা কাগজপত্রের বিষয় না, বরং স্বপ্ন ছোঁয়ার একটা বাস্তব পথ। নিজের অভিজ্ঞতা আর অনেকের চেষ্টার গল্প দেখে বুঝেছি- যদি সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায় তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার আবেদন এতটাও কঠিন কিছু না।
আমি মনে করি, আমাদের দেশের অনেক তরুণের ভেতরেই যোগ্যতা আছে, শুধু দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। তাই অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার উপায় নিয়ে যারা ভাবছেন, তাদের জন্য এই লেখাটি আমি একদম নিজের অভিজ্ঞতা আর অনুভব থেকে লিখছি। সহজভাবে, সঠিক পথে এগোনোর জন্য সংসার ওয়েবসাইট আপনাদের পাশে আছে।
পোস্ট সূচিপত্র: বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভিসা
- অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য- কেন এত আগ্রহ
- বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সহজ উপায়
- কোন কোন ধরনের অস্ট্রেলিয়া ভিসা পাওয়া যায়
- বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগবে
- দরকারি কাগজপত্রগুলো কি কি
- কিভাবে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করবেন
- ভিসা ফি ও আনুষঙ্গিক খরচ কত
- কত দিনে ভিসা হাতে পাবেন
- ভিসা রিজেক্ট হওয়ার সাধারণ কারণ
- নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বাস্তব পরামর্শ
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য- কেন এত আগ্রহ
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য শুধু একখানা ভ্রমণের কাগজ নয়- এটি যেন একটি নতুন জীবনের সম্ভাবনা। উন্নত জীবন-যাপন, নিরাপত্তা ও মানসম্পন্ন শিক্ষার কারণে অনেক বাংলাদেশি পরিবার ও তরুণ-তরুণী এখন অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বহু তরুণকে দেখেছি যারা শুধু স্বপ্ন নয়, পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাচ্ছেন।
যখন কেউ বলে অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য কতটা দরকার? সত্যি বলতে কি আমার দৃষ্টিতে এটি কেবল দরকারি না বরং অনেকের স্বপ্নপূরণের দরজা খুলে দেওয়ার মতো সুযোগ। শিক্ষা, চাকরি কিংবা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স সবই এখন হাতের নাগালে যদি আপনি সঠিক পথে এগোতে পারেন।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য অনেক কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। আরামদায়ক জীবন, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, উচ্চমানের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের
সুযোগের কারণে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েই
চলেছে। অনেকেই চাচ্ছেন স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করতে, আবার কেউ কেউ স্বল্পমেয়াদী
পড়াশোনা কিংবা কাজের সুযোগ পেতে আগ্রহী। আর এই কারণেই অস্ট্রেলিয়া
ভিসা বাংলাদেশ থেকে পাওয়ার বিষয়টি এখন খুব আলোচিত।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সহজ উপায়
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশ থেকে কিভাবে পাবেন? এই প্রশ্নটাই অনেকের মনে প্রথম আসে।কিন্তু বাস্তবে এর উত্তর নির্ভর করে আপনার উদ্দেশ্য ও প্রস্তুতির উপর। অস্ট্রেলিয়া যেতে চাইলে আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে আপনি পড়াশোনার জন্য যাচ্ছেন, কাজের জন্য যাচ্ছেন, নাকি ঘুরতে। প্রত্যেক ভিসার জন্য প্রক্রিয়া, যোগ্যতা ও কাগজপত্র আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। যেমন-
স্টুডেন্ট ভিসা: আপনি যদি পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে যান তাহলে প্রথমেই আপনাকে একটি স্বীকৃত অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার নিতে হবে। এরপর সে প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি জমা দিয়ে CoE (Confirmation of Enrolment) সংগ্রহ করতে হবে। IELTS স্কোর, আর্থিক সামর্থ্য, স্বাস্থ্য ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সও লাগে।
ওয়ার্ক ভিসা: চাকরির অফার থাকলে ওয়ার্ক ভিসা সম্ভব। বিশেষ করে যেসব স্কিল্ড ও ইন-ডিমান্ড পেশায় প্রয়োজন হয়। তাতে আপনি সুযোগ পেতে পারেন। এই ভিসার জন্য বয়স, অভিজ্ঞতা ও ইংরেজির প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ।
ট্যুরিস্ট ভিসা: আপনি যদি শুধু ভ্রমণের জন্য যেতে চান তবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চাকরির কাগজ অথবা পারিবারিক সংযুক্তির প্রমাণ জমা দিযে আবেদন করতে পারেন।
পার্মানেন্ট রেসিডেন্স ভিসা: দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে স্কিলড ইমিগ্রেশন বা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। এ জন্য পয়েন্ট ভিত্তিক সিস্টেম, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও ইংরেজির দক্ষতা জরুরি।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://immi.homeaffairs.gov.au) তে এসব তথ্য বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। আমি নিজেও যখন ওয়েবসাইটটি ঘেঁটে দেখছিলাম, তখন বুঝতে পারলাম ভিসা পেতে সফল হতে হলে তথ্য সংগ্রহ, ধৈর্য্য আর পরিকল্পনার দরকার। অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে কষ্ট পান। অথচ আপনি যদি একটু সময় নিয়ে নিজেই রিসার্চ করেন তাহলে দেখবেন এই পথ খুব একটা কঠিনও না।
কোন কোন ধরনের অস্ট্রেলিয়া ভিসা পাওয়া যায়
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়। আপনি পড়াশোনা, চাকরি, ভ্রমণ অথবা স্থায়ী বসবাস যেই উদ্দেশ্যেই যান না কেন, আলাদা আলাদা ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে। নিচে সহজ ভাষায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভিসা টাইপ ব্যাখ্যা করছি-
১. স্টুডেন্ট ভিসা: যারা অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষা নিতে চান, তাদের জন্য এই ভিসা। অস্ট্রেলিয়ায় যেকোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার পেলে আপনি আবেদন করতে পারবেন। আমার এক বন্ধু গতবছর এই প্রক্রিয়ায় ভিসা পেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে।
২. ওয়ার্ক ভিসা: আপনার নির্দিষ্ট স্কিল আছে, অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির খোঁজ করছেন বা অস্ট্রেলিয়ান কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার পেয়েছেন, তারা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই ভিসা কিছু সময়ের জন্য হতে পারে কিংবা স্থায়ীভাবেও হতে পারে।
৩. স্কিলড ইমিগ্রেশন ভিসা: যারা কোনো বিশেষ পেশায় দক্ষ এবং ইংরেজি ভাষায় ভালো তারা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কারণ এখানে IELTS স্কোর বা নির্দিষ্ট পয়েন্ট সিস্টেম থাকে যার মাধ্যমে আপনাকে মূল্যায়ন করা হবে। এই ভিসা পেলে PR বা স্থায়ী বসবাসেরও সুযোগ পেতে পারেন।
৪. ট্যুরিস্ট ভিসা: আপনি যদি ঘুরতে ভালোবাসেন এবং অল্প সময়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাহলে ট্যুরিস্ট ভিসা ঘুরতে যাওয়ার জন্য সহজ একটি ভিসা। এটা তুলনামূলক সহজ এবং অল্পদিনের ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
৫. পার্টনার বা স্পাউস ভিসা: আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দার সঙ্গে বিবাহিত হন তাহলে এই ভিসা আপনার জন্য। এমন একটা ভিসা পাওয়া মানে ভালোবাসার সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করার এক সুন্দর সুযোগ।
৬. পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ভিসা: যারা অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে বসবাস করতে চান এবং ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব নিতে চান তাদের জন্য এই ভিসা। এটি মূলত স্কিল বা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
প্রত্যেক ভিসার নিজস্ব যোগ্যতা, খরচ এবং আবেদন প্রক্রিয়া রয়েছে। আপনার লক্ষ্য স্পষ্ট থাকলে এবং যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশ থেকে কিভাবে পাবেন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। ভিসার জগতে ঢুকতেই আপনাকে আগে বুঝতে হবে আপনি কি চান। অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি আছে। সেগুলো অস্ট্রেলিয়া কিছু নির্দিষ্ট ক্লাস বা নামে দিয়ে থাকে। যেমন:
- Student Visa- Subclass 500
- Temporary Skill Shortage- Subclass 482
- Skilled Independent- Subclass 189, 190
- PR Visa Visitor Visa- Subclass 600
- Partner Visa
প্রত্যেক ভিসার জন্য আলাদা প্রক্রিয়া, ফি ও যোগ্যতা আছে। আপনি কোন ভিসার জন্য
উপযুক্ত তা আপনার উদ্দেশ্য ও প্রোফাইলের উপর নির্ভর করবে। অস্ট্রেলিয়া ভিসা অনেক বাংলাদেশিদের স্বপ্ন পূরণের রাস্তা খুলে দেয়।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগবে
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য নিতে কিছু মৌলিক যোগ্যতা দরকার হয়। ভিসার ধরণ ভেদে কিছু শর্ত ভিন্ন হলেও কিছু সাধারণ যোগ্যতা প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়। যেমন:
- বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্টুডেন্ট ও স্কিলড ভিসার জন্য সাধারণত আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হয়। পাশাপাশি স্বীকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতাও থাকতে হয়।
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতা: আপনার কি IELTS দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে? কারণ বেশিরভাগ ভিসার জন্য IELTS, PTE অথবা TOEFL পরীক্ষায় নির্দিষ্ট স্কোর প্রয়োজন। যেমন স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সাধারণত IELTS এ সর্বনিম্ন ৬ বা তার বেশি স্কোর লাগতে পারে।
- আর্থিক সামর্থ্য থাকা: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকালীন সময়ে নিজের খরচ চালানোর মত আর্থিক সক্ষমতা আপনার আছে। এজন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়ের উৎস বা স্পন্সরের তথ্য দিতে হয়।
- মেডিকেল চেকআপ: একটি মেডিকেল চেকআপ করতে হয় যাতে বোঝা যায় আপনি গুরুত্বর কোনও রোগে আক্রান্ত কিনা।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: আপনার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা বা অপরাধের রেকর্ড নেই সেটি নিশ্চিত করতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- ভিসার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হওয়া: আপনি কেনো অস্ট্রেলিয়া যেতে চান এই বিষয়ে আবেদনপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। যেন কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে আপনি সত্যি সেই উদ্দেশ্যেই যাচ্ছেন।
এইসব যোগ্যতা পূরণ করলেই আপনি অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশ থেকে কিভাবে পাবেন এই প্রশ্নের একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন এবং আবেদন করার জন্য আত্মবিশ্বাস পাবেন। এই ধাপে একটু সময় লাগলেও হতাশ হবেন না, কারণ একবার ঠিকভাবে আবেদন করলে সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দরকারি কাগজপত্রগুলো কি কি
আপনি কি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ভাবছেন? ভালো সিদ্ধান্ত, তবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এই ডকুমেন্টগুলো ভিসার ধরন অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে নিচে উল্লেখ করে বলছি যে কাগজ পত্রগুলো প্রায় সব ভিসার ক্ষেত্রেই দরকার হয়।
- বৈধ পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্টটির কমপক্ষে ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে সেটিও যুক্ত করতে পারেন।
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি: আপনার সাম্প্রতিক তোলা ছবি নির্ধারিত ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে জমা দিতে হবে।
- শিক্ষাগত সনদপত্র: আপনার এসএসসি থেকে সর্বশেষ ডিগ্রি পর্যন্ত সব সার্টিফিকেট ও মার্কশীট স্ক্যান করে রাখতে হবে।
- ইংরেজি দক্ষতার স্কোর: আপনি যদি স্টুডেন্ট বা ওয়ার্ক ভিসা নিতে চান তাহলে IELTS, TOEFL বা PTE স্কোর রিপোর্ট যুক্ত করতে হবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ফাইনান্সিয়াল ডকুমেন্ট: আপনি যে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর সেটা আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে তাদের বোঝাতে হবে। আপনাকে যদি কেউ স্পন্সর করে থাকে তাহলে সে কাগজপত্রও জমা দিতে পারেন।
- মেডিকেল সার্টিফিকেট: নির্ধারিত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট: আপনি কোন মামলা বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত কিনা সেটা যাচাইয়ের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দরকার হয়।
- চাকরির প্রমাণ (যদি প্রয়োজন হয়): আপনি যদি কোথাও চাকরী করে থাকেন বা আপনার নির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতা থাকলে সেটার এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট, অফিস আইডি বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার লাগতে পারে।
- স্পন্সরশিপ ডকুমেন্ট (যদি থাকে): যদি কেউ আপনাকে স্পন্সর করেন তার আর্থিক ও পরিচয় সংক্রান্ত কাগজপত্র দিতে হবে।
- ভিসা আবেদন ফর্ম ও ফি জমাদানের রশিদ: অনলাইনে আবেদন করার পর ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়া হলে সেটার রশিদ বা রেফারেন্স নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
এই কগজপত্রগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখলে আপনার বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও নির্ভূল হবে। ভুল বা অসম্পূর্ণ কাগজ জমা দিলে ভিসা
বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কিভাবে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করবেন
অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশ থেকে কিভাবে পাবেন এই প্রশ্নের উত্তর অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনি অনলাইনে সঠিকভাবে আবেদন করছেন কিনা। এখন অস্ট্রেলিয়ার সব ভিসা অনলাইনের মাধ্যমে ImmiAccount ব্যবহার করে করতে হয়। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া দেওয়া হলো।
- প্রথমে https://immi.homeaffairs.gov.au ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এখান থেকেই ভিসা সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যায় এবং এখান থেকেই আবেদন করতে হয়।
- ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর ImmiAccount অপশনে ক্লিক করুন।
- এরপরে Create ImmiAccount এ ক্লিক করুন।
- এরপরে ইমেইল প্রদানের অপশন আসলে সেখানে আপনার বৈধ ইমেইল ঠিকানা দিন। কারণ তাতে আপনাকে একটি ভেরিফিকেশন কোড এবং ভিসা সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রদান করা হবে। ইমেইলের ঘরে ইমেইল বসানোর পর Send Verification Code এ ক্লিক করলে আপনার ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে। সেটা বসিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করলে আপনার একাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।
- এর পরে আবেদন ফর্ম বা তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফর্ম আসবে। তাতে আপনি কোন কারণে অস্ট্রেলিয়া যাবেন যেমন পড়াশোনা, চাকরি, ভ্রমণ সে অনুযায়ী Subclass নির্বাচন করুন।
- আবেদন ফর্মে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভ্রমণ ইতিহাস ইত্যাদি সঠিকভাবে লিখুন। সব তথ্য ইংরেজিতে লিখবেন এবং সত্য তথ্য দিবেন।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট PDF বা JPEG ফরম্যাট করে আপলোড করতে হবে।
- নির্ধারিত ফি অনলাইনে Visa/MasterCard এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে। জমাকৃত ফি পরিশোধের পর একটি ট্রানজেকশন রেফারেন্স নাম্বার পাবেন সেটি অবশ্যই সংরক্ষণ করবেন।
- সব তথ্য ও ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে আবেদন সাবমিট করতে হবে। এরপর একটি কনফার্মেশন লেটার বা রিসিপ্ট পাবেন যা আপনার ImmiAccount এ থাকবে।
- আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনার ImmiAccount এ নিয়মিত লগইন করে ভিসার স্ট্যাটাস চেক করুন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
ভিসা ফি ও আনুষঙ্গিক খরচ কত
অস্ট্রেলিয়া ভিসার আবেদন করতে গেলে শুধুমাত্র অফিসিয়াল ফি ছাড়াও আরো কিছু খরচ মাথায় রাখতে হয়। চলুন খরচগুলো সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করি।
- অফিসিয়াল খরচ আনুমানিক
- স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ৬৫-৭০ হাজার টাকা
- টুরিস্ট ভিসার জন্য ১৫-১৮ হাজার টাকা
- ওয়ার্ক ভিসার জন্য ১.৫-২.৫ লাখ টাকা
- স্কিল্ড ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য ৪-৫ লাখ টাকা
- স্পাউস ভিসার জন্য ৮ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে।
আনুষঙ্গিক ও অন্যান্য খরচ
- IELTS বা অন্যান্য পরীক্ষার জন্য ২২-২৫ হাজার টাকা
- মেডিকেল চেকআপ করতে ৭-৯ হাজার টাকা
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ৫০০-১০০০ টাকা
- ডকুমেন্ট অনুবাদ ও নোটারি করার জন্য ২-৩ হাজার টাকা
- ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স যদি প্রয়োজন হয় তবে ৫-৭ হাজার টাকার মত খরচ হয়।
ভিসার খরচ একটু বেশি হলেও এটি ভবিষ্যতের একটি বিনিয়োগ। প্ল্যান করে ধাপে ধাপে
এগোলে এই খরচ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
কত দিনে ভিসা হাতে পাবেন
ভিসার জন্য আবেদন করার পর সবচেয়ে অস্থির সময় হলো কখন ভিসাটা আসবে। এই প্রশ্নটা সবার মনেই ঘুরে। কিন্তু বাস্তবে ভিসা কবে হাতে পাবেন তা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করছেন, আপনার কাগজপত্র কতটা পরিষ্কার ও সঠিকভাবে জমা দিয়েছেন কিনা, আর অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন অফিসের প্রসেসিং লোডের উপর।
যেমন ধরুন, স্টুডেন্ট ভিসা সাধারণত ৩ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যায়, তবে ভর্তি
সেশন সামনে থাকলে কিংবা কোনো ডকুমেন্ট যাচাইয়ে সময় লাগলে এটা একটু বাড়তেও পারে।
টুরিস্ট ভিসা তুলনামূলকভাবে দ্রুত হয়ে যায়। অনেক সময় ২ থেকে ৪ সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত
চলে আসে। তবে ওয়ার্ক ভিসা বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে সময়টা একটু
দীর্ঘ হয়। কারণ এসব ক্ষেত্রে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের যাচাই, স্কিল যাচাই ইত্যাদি
করতে হয় ফলে ১ থেকে ৩ মাস বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে।
ভিসা রিজেক্ট হওয়ার সাধারণ কারণ
ভিসা রিজেক্ট হওয়া খুব হতাশাজনক একটি অভিজ্ঞতা। অনেক আশা, কষ্ট এবং টাকা-পয়সা খরচ করার পর যদি ভিসা না পান তবে সেটা আপনার জন্য মানসিকভাবে বড় ধাক্কা হতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই রিজেকশনের কারণগুলো আমাদের অজান্তেই ঘটে। সেগুলো জানা থাকলে অনেক সময় আগেই থেকে সমাধান করতে পারবেন।
প্রথমত. আবেদনপত্রে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে সেটি ভিসা অফিসারদের সন্দেহ তৈরি করে। অনেকেই মনে করেন ছোটখাটো তথ্য গোপন করলে সমস্যা হবে না, কিন্তু বাস্তবে এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত. অনেক সময় পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করতে না পারার কারণে ভিসা বাতিল হয়ে যায়। ব্যাংক স্টেটমেন্ট ঠিক থাকলেও যদি আপনার ইনকামের উৎস পরিষ্কার না হয় তাহলেও সমস্যা হতে পারে।
তৃতীয়ত. ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ বা চাহিদা মোতাবেক স্কোর না আসে তাহলেও রিজেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়াও মেডিকেল পরীক্ষায় কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ধরা পড়লে কিংবা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট অপরাধসংক্রান্ত কিছু থাকলে সেটাও বড় কারণ হতে পারে। অনেকে আবার ভিসার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন না, ফলে ইমিগ্রেশন অফিস মনে করে আপনি হয়তো অন্য কোনো কারণে যাচ্ছেন এটিও ভিসা বাতিলের একটি বড় কারণ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার আবেদন যেন সত্য, সঠিক এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়। অতিরিক্ত কিছু দেখাতে গিয়ে মিথ্যা বা অতিরঞ্জন করলে সেটা সহজেই ধরা পড়ে এবং সেটাই হয় সবচেয়ে বড় সমস্যা।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বাস্তব পরামর্শ
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসা প্রসেস নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরিকল্পনা করে কাজ করা এবং ধৈর্য্য ধরা। শুরুতে আমি নিজেই অনেক বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম যে কোন ভিসা আমার জন্য ঠিক, কিভাবে আবেদন করবো, কি কি কাগজ লাগবে এসব নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া ভিসা বাংলাদেশ থেকে কিভাবে পাবেন আশা করছি এ বিষয়টি এখন আপনাদের কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। যদি আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেন তাহলে ভিসা পাবার জন্য পুরো কাজটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url