ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়
ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায় জানা যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চান তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেনমার্ক বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, নিরাপদ জীবনযাপন আর মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নের জায়গা হয়ে উঠেছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যদি আপনি কিছু বিষয় শুরুতেই ঠিকভাবে বুঝে নেন, তাহলে ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া অনেক সহজ হবে। এই লেখায় আমি চেষ্টা করব আপনার পাশে থেকে সহজভাবে বিষয়টি তুলে ধরতে।
আলোচ্য সূচিপত্র: স্টুডেন্ট ভিসায় ডেনমার্কে যাওয়ার উপাগুলো
- ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়
- ডেনমার্কে পড়াশোনার সুযোগ ও জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
- কোন কোন কোর্সে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি
- স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও শর্তাবলি
- ডেনমার্কে পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপের সুযোগ - জানুন বিস্তারিত
- স্টুডেন্ট ভিসার জন্য দরকারি কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া
- ডেনমার্কে শিক্ষার্থী হিসেবে কাজ করার সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা
- ডেনমার্কে বসবাস খরচ ও আবাসনের বিষয়াদি
- বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে কী করব - প্রাথমিক পরিকল্পনা ও মানসিক প্রস্তুতি
- আমারা পরামর্শ
১. ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়
অনেকেই বিদেশে পড়াশোনা করতে চায়, আমিও তাদের ভেতর একজন। ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে ডেনমার্ক আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আর শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মানবোধ আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। তাই আমি নিজের অভিজ্ঞতা ও জানাশোনার আলোকে আজ সহজভাবে বলছি ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়-
ভালো একটি কোর্স নির্বাচন করুন: প্রথম ধাপ হলো পছন্দের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স বেছে নেওয়া। ডেনমার্কের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি মাধ্যমে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম অফার করে। আমি নিজে University of Copenhagen ও Aalborg University-এর সাইট ঘেঁটে বেশ কিছু চমৎকার কোর্স খুঁজে পেয়েছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ও অফার লেটার সংগ্রহ: পছন্দের কোর্সে আবেদন করে একটি অফার লেটার পাওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হলো আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেট, IELTS বা TOEFL স্কোর, মোটিভেশন লেটার ও সুসজ্জিত সিভি।
অর্থনৈতিক প্রস্তুতি: ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রমাণ করতে হয় যে, আপনি বছরে অন্তত ৬০,০০০ ডেনিশ ক্রোনার (DKK) ব্যয় সামলাতে পারবেন। যার পরিমাণ প্রায় ৯ লক্ষ টাকার মতো (কারেন্সি রেট ভেদে পরিবর্তন হতে পারে)। এ জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্কলারশিপ ডকুমেন্ট দেখাতে হয়। আমার মতে, কেউ যদি পরিবার থেকে সাপোর্ট পান বা পার্টটাইম জব করার মানসিক প্রস্তুতি থাকে, তাহলে এটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
ভিসার জন্য আবেদন: ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে SIRI (Danish Agency for International Recruitment and Integration) ওয়েবসাইটে গিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে। এখানে ST1 নামে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম আছে যেটা শিক্ষার্থীদের জন্য।
বায়োমেট্রিক ও ইন্টারভিউ: আবেদনের পর আপনাকে ঢাকার ভিএফএস (VFS) সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিতে হবে। কোনো কোনো সময় ইন্টারভিউও নেওয়া হয়, কিন্তু এটা নিয়মিত নয়।
ধৈর্য ও ইতিবাচক মনোভাব: সবশেষে, জরুরি জিনিসটা হলো ধৈর্য ও ইতিবাচক মানসিকতা। আমি নিজে অনেক দিন অপেক্ষা করেছি, মাঝেমধ্যে চিন্তিতও হয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহর রহমতে ধৈর্য ধরেছিলাম, ফলও পেয়েছি।
বিদেশে পড়ার স্বপ্ন শুধু বড় ডিগ্রির জন্য নয়, নিজেকে বদলানোর এক অসাধারণ সুযোগ। ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার নিয়ম খুব কঠিন নয় যদি আপনি সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেন, সময় দেন আর মন থেকে চেষ্টা করেন। আমার বিশ্বাস, আপনি চাইলে পারবেন শুধু দরকার সাহস, তথ্য, আর সত্যিকারের আগ্রহ।
২. ডেনমার্কে পড়াশোনার সুযোগ ও জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
ডেনমার্ক শুধু শান্তিপূর্ণ ও পরিবেশবান্ধব দেশই নয় বরং বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও পরিচিত। যারা ইউরোপে আধুনিক ও গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা নিতে আগ্রহী তাদের জন্য ডেনমার্ক হতে পারে এক অসাধারণ গন্তব্য। এখানে ইংরেজি মাধ্যমে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পর্যায়ে শতাধিক কোর্স রয়েছে যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। ডেনমার্কের বেশ কিছু জনপ্রিয় ও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ-
- University of Copenhagen – ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন ও গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়
- Aarhus University – সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বনামধন্য
- Technical University of Denmark (DTU) – ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজিতে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত
- Aalborg University – প্রজেক্ট ভিত্তিক লার্নিং মডেলের জন্য বিখ্যাত
- Copenhagen Business School (CBS) – বিজনেস স্টাডিজে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু বিশ্বমানের ডিগ্রি প্রদান করে না বরং পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চাকরি, নেটওয়ার্কি এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও তৈরি করে দেয়। অনেকেই মনে করেন ডেনমার্কে পড়াশোনা কঠিন বা ব্যয়বহুল। কিন্তু আমি বলবো, সঠিক তথ্য, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকলে বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়। আসলে, ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার সহজ কৌশল হচ্ছে সঠিক কোর্স নির্বাচন, ভাষা দক্ষতা (IELTS), নির্ভরযোগ্য আর্থিক প্রমাণ আর সময়মতো আবেদন।
৩. কোন কোন কোর্সে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি
অনেকেই ডেনমার্কে পড়াশোনার জন্য আগ্রহী হলেও বুঝে উঠতে পারেন না কোন কোর্সে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, ভিসা সহজে পাওয়ার জন্য এমন কোর্স বেছে নিতে হয় যেগুলোর চাকরির বাজারে চাহিদা বেশি। যেগুলোর উপর ডেনমার্ক সরকার গুরুত্ব দেয়। নিচে কিছু জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় কোর্সের তালিকা দিচ্ছি-
ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি: ডেনমার্ক একটি প্রযুক্তিনির্ভর দেশ। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং, IT, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ডেটা সায়েন্স কোর্সে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সাসটেইনেবিলিটি ও রিনিউএবল এনার্জি: ডেনমার্ক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। যারা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সবুজ প্রযুক্তি বা রিনিউএবল এনার্জি নিয়ে পড়তে চান, তাদের জন্য এখানে দারুণ সুযোগ রয়েছে।
হেলথ সায়েন্স ও নার্সিং: বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বাড়ছে। ডেনমার্কেও নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট বা পাবলিক হেলথ পেশাজীবীদের চাহিদা রয়েছে। এই সেক্টরের কোর্সে আবেদন করলে চাকরির সুযোগও বেশি।
বিজনেস, ফিন্যান্স ও ইকোনমিকস: Copenhagen Business School-এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বিজনেস, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ও ফিন্যান্সে পড়াশোনা করলে ভিসার সম্ভাবনা তো বাড়েই, পাশাপাশি ভবিষ্যতে ইউরোপে চাকরির পথও খুলে যায়।
ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া: ডেনমার্ক বিশ্বখ্যাত তাদের আধুনিক ডিজাইন ও আর্কিটেকচারের জন্য। যারা ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে পড়তে চান, তাদের জন্য এই সেক্টরটি হতে পারে আদর্শ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শুধু ভালো রেজাল্ট নয় ভালোভাবে কোর্স নির্বাচন করাই ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার সহজ কৌশল। আপনি যদি এমন একটি কোর্স বাছেন, যার বাস্তব প্রয়োজন ডেনমার্কের অর্থনীতি বা সমাজে আছে, তাহলে ভিসা অফিসাররাও ইতিবাচক মনোভাব রাখেন।
৪. স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও শর্তাবলি
ডেনমার্কে পড়াশোনা করতে চাইলে প্রথমেই দরকার সঠিক যোগ্যতা ও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করা। অনেক শিক্ষার্থী শুধু ভর্তি নিয়ে চিন্তায় থাকেন, কিন্তু বাস্তবে ভিসা পাওয়ার জন্য আলাদা কিছু নিয়ম ও প্রস্তুতির দরকার পড়ে। এখানে আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে সহজভাবে বলছি ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায় আসলে শুরু হয় এই শর্তগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়া থেকে।
একটি স্বীকৃত ড্যানিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি: আপনাকে অবশ্যই এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে হবে, যেটি ডেনমার্ক সরকার স্বীকৃত। ভর্তির কনফার্মেশন লেটার (Admission Letter) ভিসা আবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভাষাগত যোগ্যতা: ডেনমার্কে অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা কোর্স ইংরেজিতে হয়। তাই IELTS বা TOEFL-এর মতো আন্তর্জাতিক ভাষা পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকতে হবে। সাধারণভাবে IELTS-এ ৬.০ বা তার বেশি স্কোর চাওয়া হয়।
অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ: ডেনমার্কে পড়াশোনা ও জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে আপনার বা আপনার স্পনসরের পর্যাপ্ত অর্থ আছে তা ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। সাধারণত এক বছরের খরচ হিসেবে ১ লাখ ডেনিশ ক্রোন (প্রায় ১৫-১৬ লাখ টাকা) ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখাতে হয়।
পাসপোর্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যা লাগবে
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ২ বছরের মেয়াদ থাকা উচিত)
- অ্যাডমিশন লেটার
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ভাষা স্কোর রিপোর্ট
- মেডিকেল ইনস্যুরেন্স
- ছাত্র থাকা অবস্থায় আপনি দেশে ফিরে আসবেন এমন ইচ্ছার একটি ব্যাখ্যা (SOP)
-
ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট ভিসা ফর্ম রয়েছে—ST1। এটি অনলাইনে
পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয়।
অনেকেই জানেন না, ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার নিয়ম আসলে যথেষ্ট সিস্টেমেটিক এবং স্বচ্ছ। আপনি যদি উপরের যোগ্যতাগুলো ঠিকঠাক পূরণ করেন, সময়মতো আবেদন করেন এবং কোনো ভুল না করেন, তাহলে ভিসা পাওয়া খুব একটা কঠিন নয়।
৫. ডেনমার্কে পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপের সুযোগ - জানুন বিস্তারিত
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ডেনমার্কে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হলেও, মানসম্মত শিক্ষা ও স্কলারশিপের সুযোগ এটিকে অনেকটাই ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে। তাই যারা ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এই বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি।
ডেনমার্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফি বাধ্যতামূলক। এবং এটি কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। প্রতি বছর ফি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও মোটামুটি ধারণা দেওয়া যায়-
- সাধারণ ব্যাচেলর কোর্স: প্রতি বছর ৬,০০০ থেকে ১৬,০০০ ইউরো (প্রায় ৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা)
- মাস্টার্স কোর্স: প্রতি বছর ৮,০০০ থেকে ১৮,০০০ ইউরো (প্রায় ১০ থেকে ২১ লাখ টাকা)
- ফি নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্সের ধরন এবং সময়সীমার উপর।
ডেনমার্কে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপগুলো হলো-
- Danish Government Scholarships: ডেনিশ সরকার প্রতিবছর কিছু শিক্ষার্থীকে পূর্ণ বা আংশিক স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এতে টিউশন ফি ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে মাসিক ভাতা পাওয়া যায়।
- University-Specific Scholarships: University of Copenhagen Scholarship, Aalborg University Talent Scholarship, Roskilde University Tuition Waiver। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো CGPA এবং শক্তিশালী আবেদনপত্র (SOP, রেফারেন্স ইত্যাদি) থাকলে স্কলারশিপ পাওয়া সহজ হয়।
- Erasmus+ Programme: যেসব কোর্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বে চলে, সেখানে Erasmus+ স্কলারশিপের মাধ্যমে টিউশন ফি ও থাকার খরচ কভার করা হয়।
ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার সহজ কৌশল কীভাবে এতে জড়িত? আসলে স্কলারশিপ পাওয়া মানে শুধু আর্থিক সহায়তাই নয় ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটি একটি বাড়তি সুবিধা। কারণ, স্কলারশিপ থাকলে আপনার আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয় কম এবং এটি ভিসা অফিসারের কাছে আপনার যোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইতিবাচক বার্তা দেয়।
ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত? ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি আপনার পড়াশোনার খরচ এবং থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করতে পারবেন। তাই যাদের স্কলারশিপ নেই, তাদের ব্যাংক স্টেটমেন্টে এক বছরের খরচ দেখাতে হয় (প্রায় ১৫-১৬ লাখ টাকা)।
ডেনমার্কে টিউশন ফি একটু বেশি হলেও স্কলারশিপের সুযোগ যথেষ্ট ভালো। যদি আপনি
আগেভাগে প্রস্তুতি নেন, স্কলারশিপের জন্য সময়মতো আবেদন করেন, আর কাগজপত্র গুছিয়ে
রাখেন তাহলে খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে। একইসঙ্গে এটি ডেনমার্কে
স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার সহজ কৌশল হিসেবেও কাজ করবে।
৬. স্টুডেন্ট ভিসার জন্য দরকারি কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া
ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই। কিন্তু অনেক সময় কাগজপত্র গুছিয়ে না রাখার কারণে ভালো সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই যারা সত্যি মন থেকে ইউরোপের এই উন্নত দেশে পড়তে যেতে চান, তাদের জন্য এই অংশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায় শুরু হয় মূলত সঠিক কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থেকে।
দরকারি কাগজপত্র:
- পাসপোর্ট – কমপক্ষে ২ বছরের মেয়াদ থাকা উচিত
- অ্যাডমিশন লেটার - ডেনমার্কের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
- ভাষা দক্ষতার প্রমাণ - IELTS/TOEFL স্কোর
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট - অন্তত ১ বছরের খরচ দেখাতে হবে
- স্বাস্থ্যবীমা (হেলথ ইনস্যুরেন্স) ডকুমেন্ট
- ST1 ফর্ম - এটি হলো অফিসিয়াল স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ফর্ম
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ভিসা ফি জমার রসিদ
- SOP (Statement of Purpose) – কেন আপনি ডেনমার্কে পড়তে চান, তার ব্যাখ্যা
আবেদন প্রক্রিয়া
- বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন এবং অ্যাডমিশন লেটার সংগ্রহ করুন
- ST1 ফর্ম পূরণ করুন (অনলাইনে)
- সব কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন
- নিকটস্থ ভিএফএস (VFS) সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক ও কাগজ জমা দিন
- আবেদন জমা দেওয়ার পর সাধারণত ২–৩ মাস সময় লাগে ভিসা প্রসেসে
সত্যি বলতে, ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া খুব একটা কঠিন না শুধু দরকার সঠিক কাগজপত্র, পরিষ্কার উদ্দেশ্য, এবং ধৈর্য ধরে সময়মতো আবেদন করা। নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার রাখলে এবং এই ধাপগুলো মেনে চললে ডেনমার্কের স্বপ্নটা একেবারেই হাতের নাগালে।
৭. ডেনমার্কে শিক্ষার্থী হিসেবে কাজ করার সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা
এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম কাজ করার ভালো সুযোগও রয়েছে। যারা একটু বাড়তি আয়ের চিন্তা করেন বা ইউরোপের লাইফস্টাইল ও অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা। তবে কাজের সুযোগ থাকলেও কিছু সীমাবদ্ধতা ও নিয়ম মানা জরুরি। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।
কাজ করার সুযোগ কী?
- পার্ট-টাইম কাজ করার অনুমতি: ডেনমার্ক সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা (সেপ্টেম্বর থেকে মে) এবং গ্রীষ্মকালে (জুন-আগস্ট) পূর্ণ সময় কাজ করার অনুমতি দেয়।
- কাজের ধরন: শিক্ষার্থীরা সাধারণত নিচের ধরণের কাজ করে থাকেন যেমন- রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে, ডেলিভারি সার্ভিস, দোকানে বিক্রয় সহকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বা গবেষণা সহকারী।
- ঘণ্টাপ্রতি আয়: ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ ইউরো পর্যন্ত আয় হতে পারে, যা মাস শেষে ভালো একটা সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে।
কিছু সীমাবদ্ধতা ও সতর্কতা
- ক্লাসের ক্ষতি করে কাজ নয়: ডেনমার্কে পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। অতিরিক্ত কাজ বা ক্লাস মিস করলে ভিসা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- অবৈধভাবে কাজ করা নিষিদ্ধ: যেকোনো অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন কাজ করলে ভিসা বাতিল হতে পারে। কাজ করার জন্য সঠিক CPR নম্বর ও ট্যাক্স ফাইল থাকা বাধ্যতামূলক।
- শুধু কাজের উপর নির্ভর নয়: কাজের আয় দিয়ে পুরো পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন হতে পারে। তাই নিজ দেশের কিছু আর্থিক প্রস্তুতি থাকা জরুরি।
ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার সহজ কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আপনার পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার বাস্তব পরিকল্পনা দেখানো। ভিসা আবেদনপত্রে যদি আপনি যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন যে আপনি কীভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি আইনগতভাবে আয়ের সুযোগ কাজে লাগাবেন, তবে এটি ভিসা অফিসারের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠায়।
৮. ডেনমার্কে বসবাস খরচ ও আবাসনের বিষয়াদি
ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনার সময় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি নয়, বরং বাসস্থান ও মাসিক খরচ নিয়েও একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। কারণ এসবই আপনার ভিসা আবেদন এবং ভবিষ্যৎ জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আবাসনের ধরন ও খরচ: ডেনমার্কে শিক্ষার্থীরা সাধারণত নিচের কিছু ধরণের বাসস্থানে থাকেন। যেমন-
- স্টুডেন্ট ডরমিটরি (Student Halls): সাশ্রয়ী হলেও প্রতিযোগিতা বেশি। ভাড়া গড়ে DKK 2,500 – 4,000 (২৫০–৫৫০ ইউরো)।
- শেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট: বন্ধু বা অপরিচিত কারও সাথে রুম শেয়ার করে থাকা যায়। এতে খরচ কিছুটা কম হয়। ভাড়া গড়ে DKK 3,000 – 5,000।
-
প্রাইভেট অ্যাপার্টমেন্ট: একা থাকতে চাইলে এটা বেছে নেওয়া যায়, তবে খরচ
বেশি – ৫,০০০+ DKK।
খরচের খাত | আনুমানিক খরচ (DKK) |
---|---|
বাসস্থান | ৩,০০০ – ৫,০০০ |
খাবার | ১,৫০০ – ২,৫০০ |
পরিবহন (স্টুডেন্ট পাস) | ২৫০ – ৪০০ |
ফোন ও ইন্টারনেট | ২০০ – ৩৫০ |
ব্যক্তিগত খরচ | ৫০০ – ১,০০০ |
মোট | ৬,০০০ – ৯,০০০ DKK |
বাংলাদেশি মুদ্রায় এটা প্রায় ৯০,০০০ – ১,৩০,০০০ টাকার মতো হতে পারে।
ভিসার দৃষ্টিকোণ থেকে কেন এসব গুরুত্বপূর্ণ?
ডেনমার্কে পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীর অন্তত ১ বছরের খরচ (প্রায় DKK ৭০,০০০) ব্যাংকে দেখাতে হয়। তাই বসবাস খরচ নিয়ে বাস্তব ধারণা থাকা মানে আপনার ভিসা আবেদন আরও বিশ্বাসযোগ্য ও প্রস্তুতপ্রসূত। তাছাড়া, ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাসস্থানের ব্যবস্থা ও খরচ কিভাবে সামলাবেন, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ও পরিকল্পনা ভিসা অফিসারকে উপস্থাপন করা।
ছোট্ট পরামর্শ, ডেনমার্কে আসার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে বা স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বাসার খোঁজ নিতে পারেন। আর বাসা নেওয়ার সময় চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়া ও CPR রেজিস্ট্রেশন সুবিধা আছে কি না, সেটাও যাচাই করুন। ডেনমার্কে জীবনযাত্রা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও, পরিকল্পিতভাবে চললে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সেটা সামলানো সম্ভব। সঠিক বাজেট আর সময়মতো বাসা খুঁজে নিলে নতুন দেশের নতুন জীবনে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়।
৯. বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে কী করব - প্রাথমিক পরিকল্পনা ও মানসিক প্রস্তুতি
বিদেশে পড়াশোনা করার স্বপ্ন আমাদের অনেকের মনেই থাকে, বিশেষ করে যখন আশপাশে কেউ ইউরোপে বা উন্নত কোনো দেশে গিয়ে সফল হয়। আমিও একসময় ভেবেছিলাম, বিদেশে পড়তে গেলে নিশ্চয়ই অনেক বড় কিছু দরকার বড় রেজাল্ট, অনেক টাকা কিংবা খুব উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম, আসলে সবকিছুর শুরুটা হয় একটুখানি ইচ্ছা আর একটু পরিকল্পনা থেকে।
যদি আপনি সত্যি বিদেশে পড়তে যেতে চান, তাহলে প্রথমেই দরকার নিজের লক্ষ্য ঠিক করা। আপনি কেন যেতে চান, কী পড়তে চান, আর ভবিষ্যতে কী হতে চান। তারপর দরকার বাস্তব তথ্য সংগ্রহ, যেমন কোন দেশে আপনার পছন্দের কোর্স পাওয়া যায়, সেই দেশের খরচ কেমন, স্কলারশিপের সুযোগ আছে কিনা।
আমার দেখা মতে, ইউরোপের মধ্যে ডেনমার্ক এমন একটি দেশ যেখানে শিক্ষার মান ভালো, পরিবেশ দারুণ, এবং ছাত্রদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধাও আছে। তাই কেউ যদি ডেনমার্কে পড়তে যেতে চায়, তাহলে শুরুতেই ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়গুলো ভালোভাবে জেনে রাখা জরুরি। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, স্বাস্থ্যবিমা, বাসস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি। পাশাপাশি মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে নতুন পরিবেশ, নতুন ভাষা, নতুন চ্যালেঞ্জ সব কিছু মোকাবিলা করার মতো সাহস আর ধৈর্য থাকতে হবে।
অনেক সময় আপনাকে একা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নিজের সমস্যা নিজে সামলাতে হবে, এবং নিজের পছন্দকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাই বলবো, বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে নিজের স্বপ্নকে গুরুত্ব দিন, সাহস রাখুন, এবং ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিন তাহলেই একদিন আপনার গন্তব্য হবে আপনার স্বপ্নের দেশ।
১০. আমার পরামর্শ
যদি আপনি সত্যিই ডেনমার্কে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হন, তাহলে প্রথমেই নিজের লক্ষ্য ও কোর্স বেছে নিন। এরপর স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন এবং অফার লেটার পাওয়ার পর ভিসার জন্য প্রস্তুতি নিন। নিয়মিতভাবে ইমেইল চেক করুন, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করুন। মনে রাখবেন, ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়গুলো হলো পরিকল্পিত প্রস্তুতি, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত, এবং ধৈর্য ধরে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া। আবেগ নয় চিন্তা, গবেষণা ও সময়ানুবর্তিতা আপনাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url