রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে কার্যকরী কিছু টিপস
রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে কার্যকরী কিছু টিপস প্রতিটি গৃহস্থের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় রান্নাঘর শুধু খাবার রান্না করা জায়গা না এটি আমাদের পরিবারের সুস্থতা, পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের প্রতিচ্ছবি।
অনেক সময় আমরা রান্নাঘর পরিষ্কারের দিকে তেমন মনোযোগ দিই না। অথচ এখান থেকেই জীবাণু ও পোকামাকড় ছড়িয়ে পড়ে নানা অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে আজকের এই ব্লগে আমি শেয়ার করছি রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার ঘরোয়া টিপস এবং পোকা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় যা আমি অনুসরণ করি এবং আপনিও আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পারবেন।
রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে কার্যকরী কিছু টিপস নিয়ে আলোচ্য সূচীপত্রঃ
- কেন রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা জরুরি বলে মনে করি
- প্রত্যেকদিন রান্নার শেষে কি কি করা উচিত
- সিংক বা বেসিন রাখুন ঝকঝকে
- মাসে একবার রেফ্রিজারেটর ডিপ ক্লিন করুন
- রান্নাঘরের সকল ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির রেগুলার পরিচর্যা
- একজাস্ট ফ্যান ক্লিন করার নিয়ম
- কেবিনেট ও র্যাকের যত্ন
- রান্নাঘরের আঁশটে গন্ধ দূর করুন
- দৈনিক ময়লা আবর্জনা কি করবেন
- রান্নাঘর পোকামাকড় মুক্ত রাখতে ঘরোয়া উপায়
- বর্ষায় রান্নাঘরের স্যাঁতস্যাঁতে না রাখতে করণীয় এবং ছত্রাক দূরে রাখার উপায়
- শেষকথাঃ একটু সচেতন থাকলেই রান্নাঘর থাকবে পরিষ্কার ও পোকামুক্ত
কেন রান্না ঘর পরিষ্কার রাখা জরুরি বলে মনে করি
একজন গৃহিণী হিসাবে আমি মনে করি ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটা আমাদের সুস্থ থাকার জন্য সব থেকে জরুরি। আর রান্নাঘর যেহেতু খাবারের মূল কেন্দ্র, তাই এর পরিচ্ছন্নতা তো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রান্নাঘর পরিষ্কার থাকলে সেখানে কাজ করার রুচি বা আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে যায়। পরিষ্কার রান্নাঘর আপনার দিনের শুরুটাও সুন্দর করবে বিশেষ করে।
একজন গৃহিণীর দিনের শুরুটাই হয় তার সখের রান্নাঘরকে ঘিরে। তাই সেই জায়গাটা নিট এন্ড ক্লিন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই জন্য আরো জরুরি যে, রান্নাঘর অপরিষ্কার থাকলে খাবারে জীবাণু ছড়াবে। খাবারের জায়গায় পোকামাকড় ঘুরাঘুরি করলে সেই খাবার আমাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। তাই ঘর বাড়ি পরিষ্কার রাখতে, শরীর সুস্থ রাখতে সব থেকে জরুরি হলো রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা।
প্রত্যেকদিন রান্নার শেষে কি কি করা উচিত
প্রত্যেকদিন রান্নার শেষে আমাদের আরো কিছু করণীয় আছে। যেগুলো মেনে চললে আমাদের রান্নাঘর থাকবে পরিষ্কার ও পোকামুক্ত। যারা ওয়ার্কিং ওমেন আছেন তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন প্রত্যেকদিন কাজের চাপ সামলে কীভাবে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখবেন। তাদের জন্য রইল রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকামুক্ত রাখার সহজ কিছু কার্যকরী উপায়। চলুন দেখে নেওয়া যাকঃ
- রান্নার পর পরই চুলা এবং তার চারপাশের জায়গা মুছে পরিষ্কার করে নিবেন।
- হাতের কাছে মোছার জন্য পরিষ্কার কাপড় রাখবেন, সুযোগ হলে রান্নার ফাঁকে হালকা করে মুছে নিবেন এতে খুব একটা ময়লা হবে না।
- প্রত্যেকদিনের রান্নার বাসন প্রত্যেকদিন পরিষ্কার করে নিবেন এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করবেন যাতে করে আপনার রান্নায় কম সরঞ্জাম ব্যবহার হয়। এতে করে আপনার কস্ট কম হবে এবং সময় বেঁচে যাবে।
- মোছার কাপড়গুলো গরম পানিতে ধুয়ে রান্না ঘরের বাইরে রোদে শুকিয়ে নিবেন।
- ময়লার বালতিতে পলিথিন ব্যবহারের চেষ্টা করবেন তাহলে রোজকার ময়লা ফেলে দিতে সুবিধা হবে, ময়লার পাত্র পরিষ্কার করার ঝামেলা থাকবেনা।
- রান্নাঘর মোছার সময় সুগন্ধি যুক্ত লিকুইড ক্লিনার পানিতে ব্যবহার করতে পারেন, অথবা ন্যাপথালিনের গুলি কোণায় কোণায় ফেলে রাখবেন তাহলে দুর্গন্ধ হবে না।
- ধুয়ে রাখা থালাবাসন পানি ঝরিয়ে জায়গা মতো গুছিয়ে রাখবেন, তাহলে সব কিছু ম্যানেজ করা আপনার জন্য সহজ হবে।
প্রত্যেকদিন রান্নার শেষে ছোট ছোট এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনার রান্নাঘর খুব বেশি ময়লা হবে না। মাসে একবার ডিপ ক্লিন করলেই আপনি পেয়ে যাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিরাপদ একটি রান্নাঘর।
সিংক বা বেসিন রাখুন ঝকঝকে
রান্নাঘরের বেসিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। শাকসবজি ,মাছ ও মাংস সব কিছুই পরিষ্কার করতে আমরা সিংক ব্যবহার করি। অনেক সময় দেখা যায় আঁশ, কাঁটা সবজির ছিলাক ইত্যাদি অনেক কিছুই সিংকে আটকিয়ে যায়। তাই কাজ শেষে প্রত্যেকদিন বেসিন পরিষ্কার করতে হবে। এর জন্য নিয়ে নিতে পারেন ১ টেবিল চামচ ব্লিচ, ১/২ কাপ পানি এবং ১ চামচ ডিশ ওয়াশের মিশ্রণ যা একসাথে মিশিয়ে বেসিনে দিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। আপনার সিংক থাকবে দাগ মুক্ত।
এছাড়াও আপনি ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিয়ে নিতে পারেন ২ চামচ বেকিং সোডার সাথে ১ চামচ লেবুর রস বা সাদা ভিনেগার। একসাথে মিশিয়ে বেসিনে দিয়ে ১০ মিনিট পর ঘষে পরিষ্কার করে ফেলবেন। গরম পানি ব্যবহার করতে পারলে খুব ভালো হয়, এতে করে বেসিনের পাইপটা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং দুর্গন্ধমুক্ত থাকে।
মাসে একবার রেফ্রিজারেটর ডিপ ক্লিন করুন
রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার মানে শুধু বাইরে থেকে পরিষ্কার করা নয়। সপ্তাহে অন্তত একবার পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন এবং মাসে একবার অবশ্যই ডিপ ক্লিন করবেন। ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য প্রথমেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করুন এবং ফ্রিজের সমস্ত বরফ গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। বরফ গলে গেলে সব জিনিস সাবধানতার সাথে বের করে ফেলুন। কাঁচা মাছ মাংস, ও শুকনা জিনিস আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এরপর প্রতিটি ট্রে, র্যাক ও বক্স খুলে সাবান পানিতে ভিম দিয়ে ধুয়ে রোদে দিন কিছুক্ষণের জন্য এতে করে দুর্গন্ধ দূর হবে। ডিশ ওয়াসার দিয়ে একটা ফোম বা নরম কাপড়ের সাহায্যে ফ্রিজের ভিতর মুছে পরিষ্কার করুন।
ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে লেবু পানি বা ভিনেগার পানি দিয়ে মুছে ফেলতে পারেন। অন্যদিকে ডিপ ফ্রিজের জমে থাকা বরফ গলে যাওয়ার ফলে পানিতে ভরে যেতে পারে, একটা ফোম বা কাপড়ের সাহায্যে পানি ছেঁচে ফেলতে হবে এবং আগের মতো করেই পরিষ্কার করতে হবে। ফ্রিজের নিচে ও পিছনের ঝুল ময়লা পরিষ্কার করে নিন। বেশ কিছুক্ষণ ফ্রিজের দরজা খোলা রেখে দুর্গন্ধ দূর হলে পুনরায় সব জিনিস গুছিয়ে রাখুন। রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখার কার্যকরী কিছু টিপস এর মধ্যে এটিও একটি যে আপনাকে অবশ্যই নিত্য দিনের ব্যবহার্য ফ্রিজ পরিষ্কার রাখতে হবে।
রান্নাঘরের সকল ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির রেগুলার পরিচর্যা
রান্না ঘরের সব কাজ সহজ করতে বর্তমান যুগে অনেক ধরনের ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকেন সবাই। কিন্তু এই জিনিসগুলো আপনাদের অন্যান্য কাজ যতোটা সহজ করে দেয় তার থেকে বেশি কঠিন করে দেয় রান্না ঘরের পরিচ্ছন্নতার কাজ। জিনিস যত বেশি কাজও ততবেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। রান্নাঘরের জিনিস যেমনঃ রাইস কুকার, ইলেকট্রিক কেটলি, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ, স্যান্ডউইচ মেকার, এয়ার ফায়ার ইত্যাদি।
এইগুলো প্রত্যেকটি পরিষ্কারের পূর্বে বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে নিন এবং সাবান পানি, ভিনেগার পানি, লেবু পানি অথবা বেকিং সোডা ও লেবু দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করুন। এক্ষেত্রে পাতিলগুলো ধুবেন এবং মূল যন্ত্রটি শুকনো কাপড় বা ফোম দিয়ে ভালো করে মুছে নিন। তাহলে দুর্গন্ধ দূর হবে।
একজাস্ট ফ্যান বা চিমনি ক্লিন করার নিয়ম
রান্না ঘরে একজোস্ট ফ্যান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রান্নার যত তেল চিটচিটে ভাব বাইরে বের হয়ে যায় এবং রান্নাঘর খুব বেশি ময়লা হয়না। তবে অবশ্যই মাসে একবার এই ফ্যান পরিষ্কার করতে হবে না হয়, ফ্যান ভালোভাবে কাজ করবেনা শুধু শুধু আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। ফ্যান যেভাবে পরিষ্কার করবেনঃ প্রথমে ফ্যানের লাইন খুলে দিবেন বা সুইচ অফ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিবেন। সম্ভব হলে ফ্যান খুলে নিবেন এতে করে পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে। এরপর শুকনো কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে ঝুল ময়লা পরিষ্কার করে নিন।
এখন ডিশ ওয়াশিং এবং মাজুনি দিয়ে ভালোভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। যদি তেল চিটচিটে ভাব না যায় তাহলে বেকিং সোডা ও ভিনেগার মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন অবশ্যই ফল পাবেন। এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে লাগিয়ে দিন তারপর সুইচ দিয়ে চেক করে নিন। ফ্যান পরিষ্কার করা বেশ ঝামেলার একটা বিষয় তাই ভালো হয় যদি তিন মাস পর পর অভিজ্ঞ লোক দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
কেবিনেট ও র্যাকের যত্ন
রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে কার্যকরী কিছু টিপস তো আমরা অবশ্যই ফলো করবো তবে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখতে কেবিনেট বা র্যাক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রত্যেকদিন রান্নার শেষে বেকিং সোডা ও গরম পানির মিশ্রণে কাপড় ভিজিয়ে কেবিনেট বা র্যাক মুছে তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে হবে। মাসে একবার অবশ্যই ডিপ ক্লিন করতে হবে। সকল জিনিস পত্র নামিয়ে সেগুলোকে ধুয়ে মুছে রোদে দিয়ে কেবিনেট মুছে বেশ কিছুক্ষণ খোলা রেখে তারপর আবার গুছিয়ে রাখতে পারেন। একটা পাতলা কাপড়ে ন্যাফথলিন মুড়িয়ে কেবিনেটের এক কোণায় রেখে দিলে দুর্গন্ধ ভ্যাপসা গন্ধ হবে না।
রান্নাঘরের আঁশটে গন্ধ দূর করুন
রান্না ঘরে আঁশটে গন্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য কিছু করণীয় আছে যেগুলো মেনে চলতে হবে। চলুন দেখে নিই রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে কার্যকরী কিছু টিপসঃ
- রান্নার সময় অবশ্যই রান্নাঘরের জানালা খুলে রাখুন, এতে করে রান্না ঘরে পরিষ্কার হাওয়া যাতায়াত করবে এবং অতিরিক্ত গরম ভাপ বের হয়ে যাবে যার ফলে রান্না ঘরের বাতাস থাকবে হালকা।
- রান্না ঘরে ব্যবহৃত কাপড় ভেজা অবস্থায় রাখবেন না, চেষ্টা করবেন গরম পানি লেবু দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে
- মাঝে মাঝে চেষ্টা করবেন কয়লা বা চারকোল একটা ছোট বাটিতে নিয়ে গরম করে তাতে ১ চামচ ঘি ঢেলে দিয়ে পুরো রান্না ঘরে সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে দিতে। এতে করে সুন্দর একটা গন্ধ হবে আঁশটে গন্ধ থাকবেনা।
- সাদা ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে সিংক, মেঝের টাইলসে স্প্রে করে দিবেন এতে করেরও আঁশটে গন্ধ দূর হয়
- রান্না ঘরের কোণায় কোণায় বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিবেন বা ন্যাপথালিন রেখে দিলে আঁশটে গন্ধ দূর হবে বাতাসে সুন্দর একটা গন্ধ হবে
- একটু কষ্ট করে লেবু লবঙ্গ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে স্প্রে বোতলে ভরে রান্না ঘরে স্প্রে করতে পারেন এতে করেও আঁশটে গন্ধ দূর হয়।
দৈনিক ময়লা আবর্জনা কি করবেন
দৈনিক কাজের শেষে ময়লা আবর্জনা ফেলে দেওয়াই উত্তম। কারণ জমে থাকা ময়লা থেকে দুর্গন্ধ হয় এবং পোকামাকড়ের আস্তানা হয়। এই জন্য রান্নাঘরকে মাছি ও পোকা মুক্ত রাখতে দৈনিক ময়লা আবর্জনা যেভাবে ম্যানেজ করবেনঃ ভেজা ও শুকনো ময়লা আলাদা রাখবেন, যেমন ধরুন মাছ বা মাংসের আঁশটে ময়লা, ফল বা কাঁচা সবজির খোসা ইত্যাদি একটা আলাদা জায়গায় রাখবেন। অন্যদিকে শুকনা ময়লা বা প্যাকেট, পলিথিন জাতীয় ময়লা আলাদা রাখবেন, রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে কার্যকরী কিছু টিপস এর মধ্যে এটিও একটি।
সবচেয়ে ভালো হয় ময়লা যেই পাত্রে রাখবেন সেটা যেন টাইট ঢাকনা যুক্ত হয় এবং অবশ্যই ময়লা ফেলার পাত্রে পলিথিন ব্যবহার করবেন। এতে করে যদি কখনও ময়লা ফেলা না হয় ডাবল পলিথিনের মধ্যে শক্ত করে বেঁধে রাখবেন যেন দুর্গন্ধ না ছড়ায়। তবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন রোজকার ময়লা ফেলে দিতে এতে করে আপনার কাজের চাপ কমে যাবে এবং ঘর থাকবে পরিষ্কার। সপ্তাহে ১ বার ময়লা ফেলার পাত্র পরিষ্কার করবেন।
রান্নাঘর পোকামাকড় মুক্ত রাখতে ঘরোয়া উপায়
রান্নাঘর পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে ইতিমধ্যে কার্যকরী এমন কিছু টিপস আমরা জেনেছি যা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা ঘরোয়া আরও কিছু উপায় আছে যেগুলো বিস্তারিত জানবো। এই উপায়গুলো আমি ব্যবহার করি আমার ঘর বা রান্নাঘর পরিষ্কার করতে। তাহলে চলুন দেখে নিই রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার ঘরোয়া উপায়গুলো কি কি এবং সেগুলো কীভাবে আপনার কিচেনে ব্যবহার করবেনঃ
- লেবুর রস আমাদের রান্নাঘরকে সতেজ রাখতে, দুর্গন্ধ তাড়াতে অনেক বেশি কাজে লাগে। পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে স্প্রে বানিয়ে রান্নাঘরের মেঝে, কেবিনেট, র্যাক, সিংক ইত্যাদি জায়গায় স্প্রে করলে দুর্গন্ধ চলে যাবে এবং মাছি ও পোকা মাকড় দূর হবে।
- তুলসী বা নিম পাতার গন্ধ পোকা মাকড় সহ্য করতে পারেনা। তাই এইগুলো পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে স্প্রে করতে পারেন অথবা শুকিয়ে পাউডার আকারেও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে নিমের তেল পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে আকারে ব্যবহার করতে পারেন।
- পিঁপড়া বা তেলাপোকা থেকে বাঁচতে হলুদ ও কেরোসিন মিশিয়ে সেইসব জায়গায় দিলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন।
- রসুনের রস তেলাপোকা ও মাছি অপছন্দ করে তাই আপনি চাইলে রসুনের রস ব্যবহার করতে পারেন।
- বেকিং সোডা ও ন্যাপথালিনের গুঁড়ো রান্নাঘরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে পোকা মাকড় মারা যাবে।
- সাবান বা কাপড় কাঁচার পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা মাকড় মারা যাবে।
এই সকল উপায়গুলো অবলম্বন করলে অবশ্যই আপনার রান্নাঘর থাকবে দুর্গন্ধ ও পোকা মুক্ত।
বর্ষায় রান্নাঘর স্যাঁতস্যাঁতে না রাখতে করণীয় এবং ছত্রাক দূরে রাখার উপায়
বর্ষায় রান্নাঘর স্যাঁতস্যাঁতে যেন না হয় তার জন্য আপনাকে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। রান্নাঘর যেন ভেজা না থাকে তার দিকে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমত আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করছে। জানালা দরজা দিনের বেলা খুলে রাখবেন আলো বাতাস যেন প্রবেশ করতে পারে, প্রয়োজনে একজোস্ট ফ্যান চালান। রান্নাঘরের মেঝে, সিংক, কেবিনেট, থালাবাসন রাখার র্যাক,সবকিছু শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। রান্নাঘরে একটা পাত্রে বেকিং সোডা বা চুন এক কোণায় রেখে দিতে পারেন এতে আপনার ঘরের বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে নিবে।
এবার আসি ছত্রাকের ব্যাপারে, রান্নাঘর স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে ছত্রাক জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। সেজন্য প্রথমে আপনাকে উপরে থাকা উপায়গুলো অবলম্বন করতে হবে। ছত্রাক জন্মানো প্রতিরোধে ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন, মশলা ও শুকনো খাবার এয়ার টাইট কৌটাতে সংরক্ষণ করুন, একটু রোদ দেখা দিলেই সব কিছু রোদে দেওয়ার চেষ্টা করুন। বর্ষায় বাড়িঘর পরিষ্কার করতে পানিতে ডেটল ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে জীবাণু মুক্ত থাকবে আপনার পরিবার।
শেষ কথাঃ একটু সচেতন থাকলেই রান্নাঘর থাকবে পরিষ্কার ও পোকামুক্ত
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। আমরা যারা পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করি তাদের জন্য জীবন অনেক সুন্দর ও সহজ। খেয়াল করবেন বাড়িঘর পরিষ্কার করলে মনটাও থাকে ফুরফুরে। তাই একটু সচেতন থাকলে আপনিও পেতে পারেন সুস্থ ও সুন্দর জীবন। আপনার দৈনিক জীবন যাপনের ধরনের মধ্যে একটু পরিবর্তন আনলেই ঘরবাড়ি থাকবে পরিষ্কার ও পোকামুক্ত। প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিন নির্ধারিত জায়গায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, ময়লা কাপড় জমিয়ে রাখবেন না, রান্না ঘরের কাজ জমিয়ে রাখবেন না, অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে বা রান্নাঘরে জমতে দিবেন না। এভাবে ছোট ছোট জিনিসগুলো মেইনটেইন করার মধ্য দিয়ে আপনার ঘর থাকবে পরিষ্কার ও পোকামুক্ত।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url