বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
অস্ট্রোলিয়া ভিসা বাংলাদেশিদের জন্যবাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান আমার কাছে শুধুই ভ্রমণের জায়গা না এগুলো আমাদের দেশের আসল সৌন্দর্য তুলে ধরে। প্রতিটি জেলাতেই আছে আলাদা আলাদা প্রকৃতি, ইতিহাস আর সংস্কৃতি।
কোথাও পাহাড়, কোথাও নদী আবার কোথাও পুরনো স্থাপনা মিলে পাওয়া যায় অসাধারণ ভ্রমণের সুযোগ। এই লেখায় আমি চেষ্টা করেছি আমার দেখা ও জানা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান আর ৬৪ জেলার পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে জানাতে। যেগুলো ঘুরে দেখলে আপনার দেশের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে।
পোস্ট সূচীপত্র: বাংলাদেশের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো
- বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
- কেন ঘুরে দেখা উচিত বাংলাদেশের ৬৪ জেলা
- ঢাকা বিভাগ- ঐতিহ্য, স্মৃতিস্তম্ভ ও আধুনিকতার সমাহার
- চট্টগ্রাম বিভাগ: পাহাড়, সমুদ্র ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রাজ্য
- রাজশাহী বিভাগ: প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভাণ্ডার
- খুলনা ও বরিশাল বিভাগ: সুন্দরবন থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্ময়কর প্রাকৃতিক দৃশ্য
- সিলেট বিভাগ: মেঘ, পাহার ও হাওরের সবুজ জাদু
- রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ: উত্তর বাংলার স্বকীয় সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি
- বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাই একটি গল্প, একটি গন্তব্য
- আমার মন্তব্য
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশ একটি ছোট কিন্তু বৈচিত্র্যময় দেশ যার প্রতিটি জেলার নিজস্ব ইতিহাস,
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যেই ছড়িয়ে
আছে এমন অনেক দর্শনীয় স্থান, যেগুলো শুধু পর্যটকদের না স্থানীয় মানুষকেও
প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান বলতে বোঝানো হয় প্রতিটি জেলায় অবস্থিত সেই
বিশেষ স্থানগুলো যেগুলো ভ্রমণ, ইতিহাস, ধর্ম, প্রকৃতি বা সংস্কৃতির দিক থেকে
গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও আছে পাহাড়-নদীর মিতালী, কোথাও আছে প্রাচীন স্থাপনা আবার
কোথাও আছে আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র বা ঐতিহাসিক নিদর্শন।
এই লেখায় আমি জেলা ভিত্তিকভাবে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি
সারসংক্ষেপ তুলে ধরবো, যাতে আপনি ঘরে বসেই বাংলাদেশের সৌন্দর্য সম্পর্কে একটি পরিষ্কার
ধারণা পেতে পারেন এবং ভবিষ্যতের ভ্রমণ পরিকল্পনাও সহজ হয়।
ঢাকা বিভাগ: ঢাকা বিভাগে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আধুনিক স্থাপনার এক অপূর্ব
সংমিশ্রণ। আমার কাছে মনে হয় ঢাকার রাজধানীতে লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল এবং
জাতীয় স্মৃতিসৌধ হলো অন্যতম আকর্ষণ। গাজীপুরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও বঙ্গবন্ধু
সাফারি পার্ক ভ্রমণপ্রেমীদের দারুণ পছন্দ। নারায়ণগঞ্জের পানাম নগর ও সোনারগাঁ
লোকজ জাদুঘর ইতিহাস ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে অমূল্য।
এছাড়া টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ, মানিকগঞ্জের তেওতা
জমিদার বাড়ি, মাদারীপুরের কালী মন্দির এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর
সমাধিসৌধ ঘুরে দেখার মত দর্শনীয় স্থান।
চট্রগ্রাম বিভাগ: আমার মনে হয় পাহাড় ও সমুদ্রপ্রেমীদের স্বর্গ বলা চলে চট্টগ্রাম
বিভাগকে। আমার নিজেরও এই বিভাগ অনেক পছন্দ। সবচেয়ে জনপ্রিয় কক্সবাজার, যেখানে আছে
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, ইনানী ও মহেশখালী। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সৈকত,
ফয়’স লেক আর পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে গেলে সত্যিই ভালো লাগে।
রাঙ্গামাটিতে কাপ্তাই লেক আর শুভলং ঝর্ণা, বান্দরবনে নাফাখুম ঝর্ণা ও নীলগিরি চোখ
জুড়ানো সৌন্দর্য উপহার দেয়। খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি এখন ভ্রমণকারীদের স্বপ্নের
ঠিকানা। কুমিল্লার শালবন বিহার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী, নোয়াখালীর চর
কুকরি-মুকরি ও ফেনীর মুহুরী প্রকল্পও যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
আরো জানুন: ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়
রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী বিভাগ আমার জন্মস্থান, আমার আবেগ। এই বিভাগে ইতিহাস আর প্রাচীন স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। রাজশাহীর পদ্মা নদীর তীর ও বরেন্দ্র জাদুঘর দেখতে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক আসেন। নাটোরের রানী ভবানী রাজবাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, বগুড়ার মহাস্থানগড় এবং নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দেশের ঐতিহ্য বহন করে। পাবনার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, সিরাগঞ্জের যমুনা সেতু এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবি কেল্লা ও তামা-কুঁড়ি পাহাড় সকল দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়।
খুলনা বিভাগ: আপনাদের অনেকেরেই জানা খুলনা বিভাগের মূল আকর্ষণ হলো বিস্ময়কর সুন্দরবন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ও খান জাহান আলীর দিঘি অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। সাতক্ষীরার বুরিগোয়ালীনি সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। যশোরের চাঁচড়া জমিদার বাড়ি, কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার ও শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে অত্যান্ত প্রিয়। মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুড়া ও নড়াইল জেলাতেও রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান।
বরিশাল বিভাগ: প্রকৃতি আর নদীর শহর বরিশাল বিভাগ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখানকার প্রধান আকর্ষণ, যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসাথে দেখতে পারবেন। বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘি, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, ভোলার মনপুরা দ্বীপ, বরগুনার তালতলী, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এলাকাগুলো নৌ-ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান।
সিলেট বিভাগ: সবুজে ঘেরা, মেঘে ঢাকা সিলেট বিভাগ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আরো একটি স্বর্গরাজ্য। জাফলংয়ের পাথরঘাট, নদী আর মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ মন ভোলানো। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হবিগঞ্জের সাতছড়ি উদ্যান এবং সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) এর মাজার ভ্রমণেও অনেকে সিলেটে আসেন।
রংপুর বিভাগ: উত্তরের জেলা রংপুর ঐতিহ্য, প্রকৃতি আর ইতিহাসে সমৃদ্ধ। রংপুরের তাজহাট রাজবাড়ি, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির ও রামসাগর দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। নীলফামারীর তিস্তা ব্যারাজ, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ, লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল দিঘি এবং পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ভ্রমণকারীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
কেন ঘুরে দেখা উচিত বাংলাদেশের ৬৪ জেলা
ভাবুন তো আপনি সারাদিন ক্লান্ত, হঠাৎ একটু ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে। তখন প্রথমেই মাথায় আসে বিদেশের নাম! কিন্তু জানেন কি, আমাদের বাংলাদেশেই এমন সব জায়গা আছে যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান মানে শুধু সুন্দর জায়গা দেখা না বরং নিজের দেশকে ভালো করে চেনা। যেমন কক্সবাজারে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সিলেটে আছে মেঘে ঢাকা পাহাড়, রাজশাহীতে প্রাচীন স্থাপত্য, খুলনায় সুন্দরবন আবার বরিশালে কুয়াকাটা যেখানে সূর্য ওঠেও আর ডোবেও সমুদ্রের বুকে।

আপনি যদি ভেবে থাকেন বাংলাদেশের সকল জেলার দর্শনীয় স্থান কোথায় পাবো বা বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত তালিকা আছে কি কোথাও তাহলে এই লেখাগুলো আপনার জন্য। আমরা একে একে আপনাকে সব জেলার সেরা জায়গাগুলো চিনিয়ে দেবো যেন আপনি ঘরে বসেই ঘুরে আসতে পারেন পুরো বাংলাদেশ। তাহলে চলুন নিজের দেশটাকে আরেকটু ভালো করে দেখি। কে জানে আপনার পরের প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হয়তো আপনার পাশের জেলাতেই আছে।
ঢাকা বিভাগ- ঐতিহ্য, স্মৃতিস্তম্ভ ও আধুনিকতার সমাহার
রাজধানী ঢাকা শহরই যেন ইতিহাস আর আধুনিকতার এক মজার সংমিশ্রণ। লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, সাত গম্বুজ মসজিদ এসব শুধ ইট পাথরের কাঠামো না, আমাদের অতীতের জীবন্ত প্রমাণ। আর পাশেই আছে হাতিরঝিল, জাতীয় সংসদ ভবন, মেট্রোরেল যা আধুনিক ঢাকার পরিচয়।
নারায়ণগঞ্জ শহরকে আমরা অনেকে ছোট লন্ডন বলে থাকি। এখানে একদিকে শীতলক্ষ্যার তীরে দাঁড়িয়ে আছে বাবুরহাট, বাংলার প্রথম শিল্পাঞ্চল, আর অন্যদিকে ধলেশ্বরী নদীর পাশে নতুন করে গড়ে উঠছে নান্দনিক স্পট।
টাঙ্গাইল বিখ্যাত কেন জানেন? জমিদার বাড়ি, পোড়াবাড়ির চমচম আর মহেরা জমিদার বাড়ির অপূর্ব স্থাপত্যের জন্য। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জে আছে প্রাচীন বিক্রমপুর, ঐতিহাসিক ইদ্রাকপুর কেল্লা আর পদ্মার পাড়ে গড়ে ওটা মনকাড়া স্পট।
গাজীপুরে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর অসাধারণ জায়গা হিসেবে দেখতে পারেন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, রাজবাড়ি কিংবা নন্দন পার্ক। মানিগঞ্জের বলধা গার্ডেন, তেওতা জমিদার বাড়ি কিংবা পদ্মা-যমুনার মোহনার সুনসান সৌন্দর্য মনে গেঁথে থাকবে অনেকদিন। ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়য়তপুর, রাজবাড়ী প্রতিটা জেলারই নিজস্ব ঐতিহ্য আছে, আছে ইতিহাসের ছাপ আর মানুষের গল্প।
যারা বাংলাদেশের সকল জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে চান তারা যদি ঢাকা বিভাগ থেকেই শুরু করেন তাহলে শুরুটাই হবে রঙিন, বৈচিত্র্যময় আর চমকে ভরা। কারণ বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত তালিকা করতে গেলেও ঢাকাও প্রতিটি জেলাই আলাদা গুরুত্ব পায়।
চট্টগ্রাম বিভাগ: পাহাড়, সমুদ্র ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রাজ্য
চলুন এবার ঘুরে আসি বাংলাদেশের সবচেয়ে রঙিন আর বৈচিত্র্যময় বিভাগ চট্টগ্রাম থেকে। আপনি যদি প্রকৃতি ভালোবাসেন, পাহাড়-নদী-সমুদ্র একসাথে দেখতে চান তাহলে চট্টগ্রাম আপনার জন্য স্বর্গ। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা শুরু করতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগকে এড়িয়ে যাওয়া একেবারে কঠিন। এখানে আছে পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা বাঙালির গর্ব বান্দরবন। নীলগিরি, নীলাচল, বগালেক আর চিম্বুক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আপনি আকাশ ছুঁতে পারবেন।
খাগড়াছরি যেন সবুজে ঢাকা এক শান্ত শহর। সাজেক ভ্যালি, রিছাং ঝর্ণা আর আলুটিলা গুহার মায়ায় একবার গেলে ফিরে আসতে মন চায় না। অন্যদিকে সমুদ্রপ্রেমীদের কথা না বললেই নয়। কক্সবাজার তো সবাই চেনে, কিন্তু জানেন কি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতটা আমাদের এখানেই। আর চট্টগ্রাম শহর সে তো নিজেই একটি ইতিহাস ও আধুনিকতার মিশ্রণ। পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ফয়’স লেক সবই আলাদা স্বাদে ভরপুর।
রাঙামাটির সেই কাপ্তাই লেকের কথা তো বলাই হলো না। চারপাশে পাহাড়, মাঝখানে বিশাল জলরাশি, এ যেন এক অন্য জগৎ। তাই আপনি যদি এখনও ভাবেন যে দেশের বাইরে ঘুরতে যাবেন তাহলে বলবো একবার অন্তত চট্টগ্রাম বিভাগ ঘুরে দেখুন। নিজের দেশের এই রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
রাজশাহী বিভাগ: প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভাণ্ডার
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার যাত্রায় রাজশাহী যদি না থাকে, তাহলে ভ্রমণটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। এই বিভাগকে আমের রাজ্য হিসেবে জানে। রাজশাহী শহরেই আছে বর্ণাই নদীর ধারে অবস্থিত পদ্মা পাড়, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, যা বাংলার প্রাচীন সভ্যতার স্বাক্ষী।
আর কিছুদূর গেলেই পুঠিয়া রাজবাড়ি, গড়াই নদী, বাঘা মসজিদ, তাহিরপুর মাজার। এরপরে নাটোর, যেখানে রাণী ভবানীর নাটোর রাজবাড়ি দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর ইতিহাস নিয়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গেলে পদ্মার পাড় আর আমের বাগান ছাপিয়ে এক ধরনের গ্রামীন সৌন্দর্য চোখে পড়বে। দেখতে পাবেন প্রাচীন নিদর্শন সোনামসজিদ। আর পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ প্রতিটি জেলাই যেন একেকটা সময়ের জানালা যেখানে উঁকি দিলে দেখা যায় আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর লোকজ জীবনের রঙ।
বিশেষ করে মহাস্থাগড় বাংলার সবচেয়ে পুরনো শহর। এখান থেকে শুরু হয়েছিল হাজার বছর আগের সভ্যতা। ভাবুন তো এই মাটির নিচে লুকিয়ে আছে কত গল্প!
খুলনা ও বরিশাল বিভাগ: সুন্দরবন থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্ময়কর প্রাকৃতিক দৃশ্য
চিন্তা করে দেখুন তো একটা ভ্রমণ শুরু হচ্ছে ঘন অরণ্যের নিস্তব্ধতা দিয়ে, পায়ের নিচে নরম মাটি, আশে পাশে গা ছমছমে নিস্তব্ধতা আর হঠাৎ হঠাৎ হরিণের ছোটাছুটি আর শেষ হচ্ছে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত একসাথে দেখা এক বিস্ময়কর সমুদ্র সৈকতে। হ্যাঁ ঠিক এমনটাই অনুভব করবেন আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুই রত্ন খুলনা ও বরিশাল বিভাগে।
খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় চমক নিঃসন্দেহে সুন্দরবন। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন এটি যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর চিত্রা হরিণের দেখা পাওয়াটা সত্যিই রোমাঞ্চকর। বাগেরহাটে আছে ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ যা আমাদের ইসলামি ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। সাতক্ষীরা থেকে আপনি খুব সহজেই চলে যেতে পারেন সুন্দরবনের অন্য প্রান্তে। নিরিবিলি, নীরব অথচ বিস্ময়কর সৌন্দর্যে ঘেরা।
আরো পড়ুন: ঘরে বসে আয় করুন ১৫০০০-২০০০০ টাকা প্রতি মাসে
অন্যদিকে বরিশাল বিভাগ যেন নদী আর নৌকার শহর। কুয়াকাটা এমন একটা জায়গা যেখানে আপনি একসাথে সূর্য ওঠা আর ডোবা দেখতে পারবেন সমুদ্রের কোলঘেঁষে। ভাবুন তো সকাল-সন্ধ্যা একই সৈকতে দাঁড়িয়ে দুইটা দৃশ্য। পিরোজপুরের ঝর্ণা, বরগুনার নদীপথ, ভোলা ও পটুয়াখালীর সৌন্দর্য সব মিলিয়ে এই এলাকা যেন এক প্রাণবন্ত বৌচিত্র।
এই দুই বিভাগ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত তালিকা মানে শুধু পাহাড় আর সমুদ্র না, এটা ঐতিহ্য, নদী, মানুষ আর প্রকৃতির এক বিশাল গল্প।
সিলেট বিভাগ: মেঘ, পাহার ও হাওরের সবুজ জাদু
আপনার কি কখনো এমন জায়গায় যেতে ইচ্ছা হয়েছে যেখানে পাহাড়ের গায়ে মেঘ লেপ্টে আছে, নিচে ঝর্ণা গড়িয়ে পড়ছে আর দূরে বিস্তৃত হাওর যেন এক বিশাল সবুজ-নীল জাদুর মাঠ। তাহলে চলুন এবার ঘুরে আসি আমাদের সিলেট বিভাগ থেকে। বাংলাদেশের এমন এক অঞ্চল যেটা শুধু চোখ নয়, মনও ভরে যায়। বাংলাদেশের সকল জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে চাইলে সিলেট বিভাগ কিন্তু একটা আলাদা জায়গা রাখে নিজের জন্য। কারণ এখানে একসাথে আছে পাহাড়, নদী, মেঘ, কুয়াশা, হাওর আর হাজার বছরের ইতিহাস।
সিলেট শহর থেকেই শুরু করা যাক। হযরত শাহজালাল (রহ.) আর শাহপরান (রহ.) এর মাজার, চা বাগানের সুজ ঢেউ আর লাল-নীল ফুলের বাহার সব কিছুই যেন ছবির মতো। তারপর চলে যান জাফলং। পিছনে পাহাড়, সামনে নদী, মাঝখানে স্বচ্ছ পানির উপর নৌকা। আর পাশেই ভারতের পাহাড় দেখা যায়।
বিছানাকান্দি, পান্থুমাই, লালাখাল এই নামগুলো শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাহাড়ি ঝর্ণা, কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি আর মেঘে ঢাকা আকাশ। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ যেন হাওরের দেশ। বর্ষায় মনে হয় সবুজের মাঝে নৌকায় করে আকাশের ভেসে চলেছি। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু ভ্রমণ না এটা একটা অনুভব।
মৌলভীবাজার আর হবিগঞ্জ জেলাও কম কিছু না। লাউয়াছড়া বন, হামহাম জলপ্রপাত, মাধবকুন্ড এগুলো যেন প্রকৃতির একেকটা রত্ন। তাই সিলেট বিভাগ বাংলাদেশের সকল জেলার দর্শনীয় স্থান মানে শুধু ইতিহাস আর শহর না প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা শান্তি আর বিস্ময়ের গল্পও।
রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ: উত্তর বাংলার স্বকীয় সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি
আপনি কি জানেন বাংলাদেশের উত্তরের দিকটাতে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে একবার গেলে চিরদিন মনে গেঁথে যায়। রংপুর আর ময়মনসিংহ বিভাগ যেমন প্রকৃতিতে শান্ত তেমনি মানুষগুলো আন্তরিক। চলুন ঘুরে দেখা যাক এই দুই অঞ্চলের সাদামাটা এবং অসাধারণ সৌন্দর্যের গল্প।
রংপুরে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে পুরনো দিনের রাজপ্রাসাদের মতো দেখতে তাজহাট জমিদার বাড়ি। মনে হবে যেন কোনো সিনেমার সেটের দৃশ্য। এরপর একটু ঘুরলেই মিলবে গ্রামের শান্ত পরিবেশ, নদী আর খোলা মাঠ। দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, সিংড়া বন কিংবা নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবই আপনার মন ভালো করে দিবে।
এদিকে ময়মনসিংহ শহরও কম নয়। শশী লজ আর জাদুঘর দেখে বোঝা যায় কতটা ইতিহাস আর সংস্কৃতি গেঁথে আছে এই শহরের প্রতিটা কোণায়। আর একটু বাইরে গেলেই ত্রিশাল, গারো পাহাড়, মুক্তাগাছা সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে এক অন্যরকম সৌন্দর্য। তাই যখন আমরা বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত তালিকা দেখি তখন রংপুর আর ময়মনসিংহ বাদ দিলে যেন কিছু একটা অপূর্ণ মনে হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাই একটি গল্প, একটি গন্তব্য
ভাবতে কেমন লাগে আমাদের ছোট্ট বাংলাদেশেই আছে ৬৪টি জেলা। আর প্রতিটি জেলার পেছনে লুকিয়ে আছে একেকটি চমৎকার গল্প। কোনো জেলায় আছে রাজাদের প্রাসাদ, কোথাও আবার পাহাড়-নদীর প্রেম। আর কিছু জায়গায় আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মায়া। আমরা সব সময় বিদেশ ঘুরতে চাই, কিন্তু আপনি বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো এতই বৈচিত্র্যময় যে একেকটা ঘুরলেই মনে হবে আরে এমন জায়গা তো আমাদের দেশেই আছে।

বাংলাদেশের সকল জেলার দর্শনীয় স্থান একত্রে দেখলে বোঝা যায় এই দেশটা কতটা রঙিন। আপনি যদি একবার চোখ বুলান বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত তালিকা তাহলে দেখনেব এই দেশটা যেন এক বিশাল ভ্রমণ মানচিত্র। প্রতিটি গন্তব্যে আছে নতুন কিছু শেখার, দেখার আর অনুভব করার।
আমার মন্তব্য
আমার এই লেখা পড়ে যদি আপনার মনে দেশের প্রতি একটু ভালোবাসা জাগে, যদি ভ্রমণের ব্যাগ গুছানোর ইচ্ছা হয় তাহলে আমার এই লেখা সফল হয়েছে। আমরা অনেক সময় বিদেশি জায়গা নিয়ে মুগ্ধ হই, অথচ বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান যেন আমাদের চোখের সামনেই থেকেও অচেনা থেকে যায়।
তাই আমি বলবো ঘুরে দেখুন নিজের দেশটাকে। পরিবারের সাথে, বন্ধুর সাথে অথবা একা। কারণ বাংলাদেশের প্রকৃতি আর সংস্কৃতি যতটা আপন, ততটা গভীর ভালোবাসা আপনি আর কোথাও পাবেন না।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url