পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়
পুরুষাঙ্গে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়মপুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এটা নিয়ে ভাবছেন বা এমন সমস্যায় পড়েছেন? সাধারণত এটি আমাদের শরীরের একটি সংকেত, যা আমাদের জানায় যে কোথাও কোনো সমস্যা থাকতে পারে। কোনো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস কিংবা অন্য কোনো কারণ থেকেও জ্বালাপোড়া হতে পারে।
পোস্ট সূচীপত্র: পুরুষের প্রসাবে জ্বালাপোড়ার কারণ
- পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়
- ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এবং তার লক্ষণ
- মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া ও তার প্রভাব
- যৌন সংক্রমণজনিত প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
- কিডনি ও মূত্রথলীর পাথর: সমস্যা ও প্রতিকার
- ইউরিন সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ভূমিকা
- ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে ঘরোয়া যত্ন ও প্রতিরোধমূলক উপায়
- মানসিক চাপ ও ইউরিন সমস্যার সম্পর্ক
- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- আমার পরামর্শ
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এই প্রশ্নটি অনেক পুরুষেরই মাঝে এক ধরনের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই হয়তো মনে করেন এটা খুব সাধারণ কিছু আর অবহেলা করে যান। কিন্তু আসলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া যখন ঘনঘন হয় বা বেশিক্ষণ ধরে থাকে, তখন সেটা শরীরের একটা সংকেত হিসেবেই ধরা উচিত। পুরুষদের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। আজ আমি সহজ ভাষায়, নিজের উপলব্ধি থেকে এই বিষয়ে নিচে কিছু স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছি, যাতে আপনি নিজে বুঝতে পারেন এবং দরকার হলে ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
১. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI): পুরুষের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অর্থাৎ প্রস্রাবের রাস্তা বা মূত্রথলীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়, মূত্রনালী বা কিডনিতে সংক্রমণ ঘটিয়ে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি দেয়।
২. মূত্রনালীর প্রদাহ বা ইরিটেশন: মূত্রনালীর অভ্যন্তরে যদি কোনও কারণে প্রদাহ হয়, যেমন কঠিন প্রস্রাব, কিডনি স্টোন বা পেশাগত কারণে অতিরিক্ত চাপ, তখন প্রস্রাবের সময় জ্বালা অনুভব হতে পারে।
৩. যৌন সংক্রমণ (STD/STI): কিছু যৌন সংক্রমণের জন্যও পুরুষদের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে যেমন গনোরিয়া বা ক্ল্যামিডিয়া। এসব বিষয়ে অনেকেই লজ্জা পান কথা বলতে। কিন্তু সত্যি বলতে চিকিৎসা পেলে এগুলো পুরোপুরি সেরে যায়। তাই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. অতিরিক্ত মদ্যপান বা তীব্র মশলাদার খাবার: কিছু মানুষ বেশি করে মশলাদার খাবার বা মদ্যপান করলে মূত্রনালীর সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। ফলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
৫. মূত্রথলীর পাথর বা কিডনি পাথর: মূত্রথলীতে পাথর থাকলে সেটা মূত্রনালীর ভিতরে ঘষে ব্যথা ও জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
পুরুষের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনেক সময় অস্বস্তিকর ও লজ্জাজনক বিষয় বলে অনেকেই দেরি করে চিকিৎসকের কাছে যায়। আমি মনে করি, শরীরের এমন সংকেতকে গম্ভীরতার সঙ্গে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যখন বারবার জ্বালা হয় বা প্রস্রাবের সময় রক্ত দেখা যায়, তখন অবহেলা করা মোটেও উচিত নয়।
আরো পড়ুন: হস্তমৈথুন বন্ধ করার উপকারিতা
ঘরোয়া কিছু যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেক সময় কমানো যায় যেমন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, হাইজিন বজায় রাখা, মশলাদার খাবার কম খাওয়া এবং যৌন স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া। কিন্তু সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমরা অনেক সময় বুঝি না, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকেও শরীর এমনভাবে প্রভাবিত হতে পারে। তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া, নিয়মিত চেকআপ করানো খুবই জরুরি।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এবং তার লক্ষণ
পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যার পেছনে যে অন্যতম বড় কারণ হতে পারে তা হলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা UTI। এটা মূলত তখনই হয় যখন মূত্রনালী, মূত্রথলি কিংবা কিডনিতে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে। এই সংক্রমণ শরীরের জন্য খুব অস্বস্তিকর এবং বেশিরভাগ সময় প্রস্রাবের সময় জ্বালা, বারবার প্রস্রাব হওয়া, মূত্রে বদঅুর বা রক্ত থাকা ইত্যাদি লক্ষণ থেকে হতে পারে। UTI এর সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো-
- প্রস্রাবের সময় তীব্র জ্বালাপোড়া বা খচখচে অস্বস্তি
- বারবার প্রস্রাব হওয়ার অনুভব করা, যদিও পরিমাণ কম
- প্রস্রাবের রঙ বদলে যাওয়া, যেমন মেঘলা বা রক্তযুক্ত হওয়া
- মাঝে মাঝে পেটে বা কোমরে ব্যথা অনুভূত হওয়া
আমার মতে, এই UTI সাধারণত শরীরের সাফ-সুতরতা না মেনেই পানি কম খাওয়া বা অপরিষ্কার পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণে হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত কাজের চাপের মধ্যে থাকেন, তারা অনেক সময় শরীরের এই সংকেতগুলোকে পাত্তা দেন না, যা সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া ও তার প্রভাব
পুরুষদের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হলো মূত্রনালীর প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন। মূত্রনালী হলো সেই ছোট্ট নালী যা প্রস্রাবকে শরীর থেকে বের করে দেয়। যখন এই নালীর ভিতরে কোনো কারণে সংক্রমণ বা চোট লাগে, তখন সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা প্রস্রাবের সময় তীব্র জ্বালা বা পোড়া অনুভূত হয়।
মূত্রনালীর প্রদাহ অনেক কারণে হতে পারে যেমন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, শারীরিক আঘাত, অতিরিক্ত উত্তেজনা বা যৌন সংক্রমণ। এর ফলে মূত্রনালীর ঝিল্লি ফোলা যায়, লাল হয় এবং সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় প্রস্রাব করতে গেলে খুব অস্বস্তি হয়, কখনও কখনও বেদনা এতটাই তীব্র হয় যে মানুষ স্থির থাকতে পারেন না।
আরো পড়ুন: এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়
আমার মনে হয়, অনেক পুরুষই প্রথম দিকে এই অস্বস্তিকর অনুভূতিকে উপেক্ষা করেন, কিন্তু মূত্রনালীর প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন মূত্রনালীর সংকোচন বা মূত্র আটকে যাওয়া। তাই সমস্যা শুরুতেই শনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি।
যৌন সংক্রমণজনিত প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এর মধ্যে অন্যতম কারণ হতে পারে বিভিন্ন ধরনের যৌন সংক্রমণ। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত এই সংক্রমণ আমাদের প্রসাবের রাস্তায় প্রদাহ বা জ্বালাভাব তৈরি করে যা খুব অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, হারপিস ইত্যাদি যৌন সংক্রমণ পুরুষদের মধ্যে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ।যখন এই সংক্রমণ হয়, তখন প্রস্রাবের সময় শুধু জ্বালা-তীব্রতা নয়, মূত্রে পুঁজ বা রক্তের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। অনেক সময়ই যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে লজ্জা বা সামাজিক সংকোচের কারণে অনেক পুরুষ এই সমস্যার কথা গোপন রাখেন, যা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সবচেয়ে জরুরি হলো সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া বা উপেক্ষা করা বিপদজনক। সুরক্ষিত যৌন জীবন অতীব গুরুত্বপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, কনডম ব্যবহার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এই সংক্রমণ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে।আমার অভিজ্ঞতায় বলব, সচেতনতা ও সঠিক যত্নই এই ধরনের সমস্যার থেকে মুক্তি দেয়। শরীর যখন কোনো সংকেত দেয়, তখন সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এই অবস্থায় অনেকে লজ্জা বা ভয় পান। কিন্তু এতে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
কিডনি ও মূত্রথলীর পাথর: সমস্যা ও প্রতিকার
প্রস্রাবে হঠাৎ ব্যথা বা রক্ত দেখে ভয় পাচ্ছেন? হতে পারে এটা কিডনির পাথরের লক্ষণ। পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে কিডনি ও মূত্রথলীতে পাথর একটি। মূত্রথলী বা কিডনিতে পাথর তৈরি হলে এগুলো মূত্রনালীর ভিতর দিয়ে যেতে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে, যা প্রস্রাবের সময় প্রচণ্ড জ্বালা বা ব্যথার কারণ হয়।
পাথর ছোট হলে অনেক সময় কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। কিন্তু পাথর বড় হলে বা মূত্রনালীর পথ বন্ধ করলে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং প্রস্রাব কম হওয়া বা রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব হতে পারে। অনেকেই প্রথমে ভয় পেয়ে যান, কারণ প্রস্রাবে রক্ত মানেই খুব খারাপ কিছু ভাবেন। এই অবস্থায় সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় পেতে পারেন-
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন: দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে মূত্রনালী পরিষ্কার থাকে এবং পাথর জমার ঝুঁকি কমে।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত লবণ, তেল ও মসলা পরিহার করুন। বেশি করে ফল, শাকসবজি এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর সচল থাকে এবং কিডনি কার্যকরভাবে কাজ করে, ফলে পাথর জমার প্রবণতাও কমে যায়।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যেকোনো ব্যথা বা রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান। প্রয়োজন হলে পাথর ভাঙার চিকিৎসা নিন।
- ঘরোয়া যত্ন নিন: গরম পানি সেঁক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
আমার এক আত্মীয় হঠাৎ তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে প্রথমে তা গ্যাস্ট্রিক মনে করলেও পরে জানা গেল তার কিডনিতে পাথর হয়েছে। সময়মত চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। তাই আমার মতে, এ ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায়। শরীরের ছোট সংকেতকেও উপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়াই ভালো।
ইউরিন সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ভূমিকা
পুরুষদের অনেক সময় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা তৈরি হয় তাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে। যারা বেশি মশলা, তেল ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খান, তাদের মূত্রনালী বা প্রস্রাবের রাস্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব খাবার প্রাকৃতিকভাবে শরীরের টিস্যুগুলোকে জ্বালা-তীব্র করে তোলে, যার কারণে প্রস্রাবের সময় অস্বস্তি হয়।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জীবনযাত্রার ধরন। যারা দীর্ঘক্ষণ জল না খেয়ে থাকেন, অথবা দীর্ঘক্ষণ বাথরুম যাওয়া বিলম্ব করেন, তাদের মধ্যে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং মানসিক চাপও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমার অভিজ্ঞতায়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এই সমস্যা থেকে মুক্তির প্রধান চাবিকাঠি। যেমন- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, সহজ ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, স্ট্রেস কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলে এবং পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা অনেকাংশেই কমিয়ে আনে।
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে ঘরোয়া যত্ন ও প্রতিরোধমূলক উপায়
পুরুষদের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনেক সময় নানা কারণেই হতে পারে। পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়, তা বোঝার পাশাপাশি ঘরোয়া যত্ন নেয়া এবং প্রতিরোধমূলক উপায় অবলম্বন করাও খুব জরুরি। এতে পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় সহজেই পাওয়া যায়।
প্রথমেই বলবো, নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি বেশি পান করলে মূত্রনালী পরিষ্কার থাকে, ব্যাকটেরিয়া ও দূষক সহজে বের হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা দরকার। বিশেষ করে প্রস্রাবের পরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি, যাতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।
তৃতীয়ত, বেশি মশলা, তেল এবং জোরালো মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো মূত্রনালীর ক্ষতিতে সাহায্য করতে পারে এবং জ্বালাপোড়া বাড়াতে পারে।
চতুর্থত, বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ ধরে বসলেও ভালো নয়, কারণ মূত্র থলিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
পঞ্চমত, সঠিক সময়ে প্রস্রাব করা উচিত, যাতে মূত্রনালীতে কোনও সংক্রমণ বা পাথর জমতে না পারে।
সবশেষে বলবো যতটুকু আমরা ঘরোয়া যত্ন নিই তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতার। যদি জ্বালাপোড়া দীর্ঘস্থায়ী হয় কিংবা বেশি বেড়ে যায়, তখন অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মানসিক চাপ ও ইউরিন সমস্যার সম্পর্ক
পুরুষদের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনেক সময় শুধু শারীরিক কারণেই হয় না, বরং মানসিক চাপও এ সমস্যার পেছনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় শারীরিক সমস্যার সঙ্গে মানসিক অবস্থা জড়িত থাকে।
যখন আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায়, তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা প্রভাবিত হয়। মূত্রনালীসহ বিভিন্ন স্নায়ু ও পেশীতে টান ধরে যেতে পারে, যা প্রস্রাবের সময় অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে, ফলে সংক্রমণ বা প্রদাহের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
আমি মনে করি, মানসিক শান্তি বজায় রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম খুবই জরুরি। এসব অভ্যাস শরীরকে সুস্থ রাখে এবং পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তাই, শুধু শারীরিক চিকিৎসাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একসাথে শরীর ও মন সুস্থ থাকলেই আমরা ভালো থাকতে পারি।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হলো জানা কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ অনেক সময় ঘরোয়া যত্ন নেওয়ার পরও জ্বালাপোড়া কমে না বা আরও বাড়তে থাকে। পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় জানতে চাইলে প্রথমেই বুঝতে হবে কখন পেশাদার সাহায্য নেওয়া জরুরি। নিচের লক্ষণগুলো থাকলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত-
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকা বা বাড়তে থাকা।
- প্রস্রাবের রং পরিবর্তিত হয়ে গাঢ় হলুদ, লালচে বা পুঁজযুক্ত হওয়া।
- প্রস্রাবের সময় বা পরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা।
- জ্বর, ঠান্ডা লাগা বা শরীরের অন্য কোনো সংক্রমণের লক্ষণ দেখা।
- প্রস্রাব কম হওয়া বা মূত্র আটকে যাওয়ার অনুভূতি।
- যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক স্রাব বা দুর্গন্ধ বের হওয়া।
এই অবস্থায় নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া বা উপেক্ষা করলে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় সহজেই পাওয়া যায়। আমার মতে, শরীরের সংকেতকে গুরুত্ব দিয়ে সময়মতো ডাক্তার দেখানোই সুস্থতার প্রথম ধাপ।
আমার পরামর্শ
আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এটা বোঝা এবং সময়মতো সতর্কতা নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পানি পান করা, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং শারীরিক কোনো অস্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এগুলোই পুরুষদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির সহজ উপায়। শরীরের ছোট সংকেতকেও গুরুত্ব দিন, এতে বড় সমস্যা হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিজেকে ভালোবাসুন, সুস্থ থাকুন।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url