এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়
ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকাএলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় খুঁজছেন? আপনি একা নন। আমি নিজেও অনেকবার এই বিরক্তিকর সমস্যায় পড়েছি। কখনও হঠাৎ গায়ে লালচে দাগ, কখনও অস্বস্তিকর চুলকানি এসব যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যারা ধুলাবালি, গরম, ঠান্ডা কিংবা কিছু নির্দিষ্ট খাবারে এলার্জিক, তাদের জীবনে যেনো কষ্টের শেষ নেই। এই লেখায় আমি আপনাকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানাবো প্রাকৃতিকভাবে এলার্জি চুলকানি দূর করার পদ্ধতি এবং একইসঙ্গে শেয়ার করব চুলকানির ঘরোয়া প্রতিকার যা বাস্তবে আমি নিজে ব্যবহার করে উপকার পেয়েছি।
আলোচ্য সূচীপত্র: শরীরের চুলকানি ও র্যাশের কারণ ও সমাধান
- এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় – সহজ, কার্যকর ও ঘরোয়া সমাধান
- এলার্জি চুলকানির সাধারণ কারণগুলো কী কী
- ত্বকের এলার্জি চুলকানির লক্ষণ ও প্রাথমিক শনাক্তকরণ
- চুলকানি প্রতিরোধে ঘরোয়া ভেষজ উপাদানের ব্যবহার
- খাবার ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ
- বাচ্চা ও বয়স্কদের এলার্জি চুলকানির ঘরোয়া প্রতিকার
- চুলকানি হলে কী করবেন আর কী এড়িয়ে চলবেন
- চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিতে হবে? সতর্কতা ও সাবধানতা
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: এলার্জি যেন না হয় – সেই দিকনির্দেশনা
- আমার পরামর্শ ও ব্যক্তিগত মন্তব্য: যা আমি নিজে করেছি এবং উপকার পেয়েছি
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় – সহজ, কার্যকর ও ঘরোয়া সমাধান
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়গুলো এখন শুধু বড়দের সমস্যা নয়, ছোট-বড় সবাই এর ভুক্তভোগী। কখনো হঠাৎ গা চুলকায়, চোখ লাল হয়ে যায় বা গলা খুসখুস করে এসব অনেক সময়ই এলার্জির লক্ষণ হতে পারে। আমি নিজেও অনেকবার এই সমস্যায় পড়েছি আর তখনই বুঝেছি, এটা সাধারণ কোনো চুলকানি নয়। এটি শরীরের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া যা হতে পারে খাবার থেকে, নয়তো ধুলাবালিতে ঘুরে, কিংবা গরম-ঠান্ডা আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে।
এই বিরক্তিকর এলার্জি চুলকানির সহজ সমাধান পেতে হলে আগে এর কারণ বুঝতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে উপকার পেয়েছি। সংক্ষেপে কার্যকর উপায়গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি-
- নিমপাতা ও নারকেল তেল একসাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগানো
- তুলসীপাতা ও মধু একসাথে খাওয়া বা লাগানো
- ঠান্ডা পানিতে তুলা ভিজিয়ে চুলকানির জায়গায় চেপে ধরা
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা এবং বেশি বেশি পানি করে পান করা
- প্রতিদিন পরিষ্কার জামাকাপড় পরা ও ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা
এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি নিজেই বুঝবেন যে এলার্জি চুলকানির ঘরোয়া চিকিৎসা কতটা কার্যকর হতে পারে। এখন চলুন বিস্তারিত জানি প্রতিটি উপায় সম্পর্কে।
এলার্জি চুলকানির সাধারণ কারণগুলো কী কী
অনেকেই ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কেন হঠাৎ করে শরীর বা ত্বকে চুলকানি শুরু হলো। আসলে এলার্জির কারণ অনেক রকম হতে পারে। ধুলাবালি, পশুর লোম, ফুলের রেণু, কিছু নির্দিষ্ট খাবার (যেমন: চিংড়ি, ডিম, গরুর মাংস, বাদাম ইত্যাদি), এমনকি অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডাও শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় নতুন প্রসাধনী, পারফিউম বা লোশন ব্যবহারের পর ত্বকে জ্বালা ও চুলকানি দেখা দেয়। এসব কারণে এলার্জি হতে পারে এবং তাতে শুরু হয় বিরক্তিকর চুলকানি।
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায়
আমি নিজে যখন প্রথম এই ধরনের সমস্যায় পড়ি, তখন ভেবেছিলাম হয়তো মশার কামড়, ঘামাচি বা সামান্য চুলকানি। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, এটি একটি এলার্জিক প্রতিক্রিয়া যা আমার ব্যবহৃত লোশন কিংবা কিছু খাবারের কারণে হচ্ছে। তখন থেকেই আমি লক্ষ্য রাখতে শুরু করলাম কোন কোন জিনিস ব্যবহারের পর আমার ত্বকে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে আমি বুঝে গেছি যে এলার্জি মোকাবেলার জন্য শুধু ওষুধ নয় বরং কারণটা বুঝে চুলকানি প্রতিরোধের প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করাই বেশি কার্যকর। এজন্য প্রথম ধাপে আপনার উচিত নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা এবং কোন কোন বস্তু বা খাবারে এলার্জি হচ্ছে তা চিহ্নিত করা। এর পরেই আসবে প্রতিকারের উপায়
ত্বকের এলার্জি চুলকানির লক্ষণ ও প্রাথমিক শনাক্তকরণ
শরীরে যদি হঠাৎ করে লালচে দাগ দেখা যায়, ফুসকুড়ি উঠে আসে, ত্বক ফোলাভাব হয়ে যায় কিংবা জ্বালা ও তীব্র চুলকানি অনুভব করেন তবে সেটি খুব সম্ভবত ত্বকের এলার্জির লক্ষণ। অনেক সময় এটি শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, আবার কখনো কখনো সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাতের দিকে শরীরের তাপমাত্রা ও পরিবেশের কারণে এই চুলকানি আরও বেশি তীব্র হয়, যার ফলে ঘুম নষ্ট হয়ে যায় এবং অস্বস্তি আরও বাড়ে।
এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই সাবধান হওয়া জরুরি। কারণ এলার্জি সাধারণ মনে হলেও অবহেলা করলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই দেরি না করে, দ্রুত এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় অনুসরণ করা উচিত। প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া প্রতিকার ও ত্বকের যত্নের মাধ্যমেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
চুলকানি প্রতিরোধে ঘরোয়া ভেষজ উপাদানের ব্যবহার
আমি নিজে ত্বকে চুলকানি অনুভব করার সময় চিকিৎসকের ওষুধের চেয়ে বেশি উপকার পেয়েছি প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহার করে। কারণ এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়গুলো একদিকে যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে উপকার দেয়। বিশেষ করে যারা সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী, তাদের জন্য ঘরোয়া সমাধান অনেক বেশি নিরাপদ। নিচে আমি এমন কিছু ভেষজ উপাদান শেয়ার করছি, যেগুলো আমি নিজে ব্যবহার করে উপকার পেয়েছি এবং যেগুলো প্রতিদিনের জীবনযাপনে সহজেই ব্যবহারযোগ্য। যেমন-
নারকেল তেল ও নিমপাতা বাটা: নিমপাতায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান, যা এলার্জিজনিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। নারকেল তেল আবার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং আরাম দেয়। নিমপাতা বেটে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলকানির জায়গায় নিয়মিত লাগালে ত্বকের লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া ও ফুসকুড়ি অনেকটা কমে আসে। এটি শুধু তাৎক্ষণিক আরামই দেয় না বরং ধীরে ধীরে ত্বককে সুস্থ করে তোলে।
তুলসী পাতা ও মধু মিশ্রণ: তুলসী পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। মধু একপ্রকার প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তোলে। তুলসী পাতা বেটে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত চুলকানি ও এলার্জি স্থানে লাগালে দ্রুত আরাম পাওয়া যায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
লেবু ও শসার রস: এতে থাকা প্রাকৃতিক ঠাণ্ডা ভাব এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। লেবুর অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং শসার উচ্চ জলীয় উপাদান ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে। এই উপাদানগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে এলার্জি চুলকানির ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে দারুণ কার্যকর হয়। সঠিকভাবে জেনে বুঝে এসকল উপায়গুলো ব্যবহার করলে আশা করি আমার মত আপনাদেরও উপকারে আসবে।
খাবার ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ
আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি এলার্জি চুলকানি প্রতিরোধে শুধু ওষুধ খাওয়া যথেষ্ট নয়। আমাদের দৈনন্দিন খাবার ও অভ্যাস শরীরের প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। যেমন প্যাকেটজাত চিপস, জুস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার কিংবা দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের কারণে অনেকের এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব খাবার একেবারে বাদ না দিলেও কমিয়ে দিয়েছি এবং তাতে চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয়েছে।
আরো পড়ুন: হস্তমৈথুন বন্ধ করার উপকারিতা
পাশাপাশি আমি খেয়াল করেছি যে, দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান, প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার জামাকাপড় পরা এবং বিছানাপত্র, তোয়ালে ও ব্যবহৃত পোশাক নিয়মিত ধোয়া—এসব ছোট ছোট অভ্যাসগুলোও অনেক বড় উপকার দেয়। এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে শুধু এলার্জি থেকে চুলকানির ঘরোয়া প্রতিকার পাওয়া যায় না বরং দীর্ঘমেয়াদে এলার্জির প্রবণতাও কমে যায়।
বাচ্চা ও বয়স্কদের এলার্জি চুলকানির ঘরোয়া প্রতিকার
বাচ্চা ও বয়স্কদের ত্বক সাধারণত বেশি সংবেদনশীল হয়, তাই তাদের এলার্জি চুলকানি খুব সহজেই দেখা দেয় এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা বাড়তে পারে। এই বয়সভেদ অনুযায়ী এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় উপযুক্ত ঘরোয়া প্রতিকার বেছে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের ক্ষেত্রে
শিশুরা সাধারণত খাবার, কাপড়ের ফেব্রিক, কিংবা ধুলাবালির কারণে এলার্জিতে ভোগে। এদের ত্বক খুবই কোমল হওয়ায় কেমিক্যালযুক্ত কোন ওষুধ বা লোশন ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাই আমি যে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেছি এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করি, সেগুলো হলো:
- নারকেল তেল ও অ্যালোভেরা জেল: নারকেল তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং অ্যালোভেরা ত্বকের জ্বালা ও র্যাশ কমাতে কার্যকর। এই দুইটি উপাদান মিশিয়ে চুলকানির স্থানে আলতো করে লাগানো যেতে পারে।
- তুলসী পাতার পানি: কয়েকটি তুলসী পাতা ১ গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে সেই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শিশুদের গোসল করানো যেতে পারে। এটি চুলকানি ও লালচে ভাব অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, রক্তসঞ্চালন কমে যায়, এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়। ফলে এলার্জি হলে চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয়। বয়স্কদের জন্য আমার সুপারিশকৃত কিছু ঘরোয়া প্রতিকার হলো:
- দুধ ও ওটস বাথ: অর্ধেক কাপ ওটস আর এক কাপ কাঁচা দুধ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে গোসল করালে ত্বকে শীতলতা আসে এবং চুলকানি কমে।
- ত্বকে সরিষার তেল হালকা গরম করে মালিশ: শুষ্ক ত্বকে সরিষার তেল মালিশ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং চুলকানির প্রবণতা কমে।
সবচেয়ে বড় কথা, বাচ্চা ও বয়স্কদের যত্নে সহনশীলতা ও নিয়মিত পরিচর্যার ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই এলার্জি চুলকানির প্রাকৃতিক উপায় গুলো দীর্ঘমেয়াদে আরাম দিতে পারে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চুলকানি হলে কী করবেন আর কী এড়িয়ে চলবেন
এলার্জিজনিত চুলকানি হলে আমাদের অনেকেই অস্থির হয়ে যাই এবং ভুল কিছু করে ফেলি, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। আমি নিজেও শুরুতে এসব ভুল করতাম চুলকানির জায়গা বারবার খুঁটে ফেলতাম, নানা ধরনের লোশন মাখতাম যেগুলো ত্বককে আরও সংবেদনশীল করে তুলতো। পরে বুঝেছি, এই সময়টায় কিছু বিষয় খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা জরুরি এবং এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় ও কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই আরাম পাওয়া সম্ভব। যা করবেন:
- ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে চুলকানির জায়গায় চেপে ধরা। এতে জ্বালা ও চুলকানি কমে।
- ঘরোয়া প্রাকৃতিক জেল যেমন অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা।
- বেশি করে পানি পান করা, যাতে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ও টক্সিন কমে আসে।
- ঢিলেঢালা ও সুতির কাপড় পরা, যাতে ঘর্ষণ কম হয়।
যা এড়িয়ে চলবেন:
- কখনোই চুলকানির জায়গা খোঁচাবেন না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- কেমিক্যালযুক্ত লোশন, পারফিউম বা প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
- রোদে বেশি সময় থাকা বা গরম পরিবেশে ঘামা অবস্থায় বাইরে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
এই ছোট ছোট নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি বুঝতে পারবেন, এলার্জি চুলকানির জন্য কার্যকরী হারবাল প্রতিকার শুধু উপাদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আপনার সচেতনতাও এর বড় অংশ।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিতে হবে? সতর্কতা ও সাবধানতা
যদি ঘরোয়া প্রতিকার বা প্রাথমিক চিকিৎসা অনুসরণ করার পরও এলার্জি চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা চুলকানির সাথে অন্য উপসর্গ যেমন ফুসকুড়ি, জ্বর, চোখ বা ঠোঁট ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট বা বমি বমি ভাব দেখা দেয় তাহলে আর দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক সময় শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে পারে, যাকে মেডিকেল ভাষায় “অ্যানাফাইল্যাক্সিস” বলা হয়, যা জীবনঘাতীও হতে পারে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে একবার এমন অবস্থায় পড়েছিলাম, যখন চিংড়ি খাওয়ার পর শরীরে চুলকানির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। প্রথমে ঘরোয়া উপায়ে চেষ্টা করলেও কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তখনই বুঝেছি সব সময় নিজের চিকিৎসা নিজে করা ঠিক নয়। তাই যখনই এলার্জি চুলকানি মাত্রাতিরিক্ত হয় বা বারবার ফিরে আসে, তখন সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসকের গাইডলাইন অনুসরণ করা উচিত। তবে মনে রাখবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া মানেই শুধু ওষুধ খাওয়া নয় বরং সমস্যার শিকড় খুঁজে বের করে সেটা স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করার দিকে এগিয়ে যাওয়াই আসল কাজ।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: এলার্জি যেন না হয়–সেই দিকনির্দেশনা
এলার্জি একবার হলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি কষ্টদায়কও। তাই প্রতিরোধই হলো সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। আমি নিজে বহুবার ভোগার পর বুঝেছি যতটা না প্রয়োজন প্রতিকারের, তার চেয়েও বেশি দরকার প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া। এজন্য কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ন অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
- ঘর ও পরিবেশ পরিষ্কার রাখা: প্রতিদিন ঘর ঝাড়ু দেওয়া, বিছানা ও পর্দা নিয়মিত ধোয়া, যেসব জায়গায় ধুলাবালি জমে সেগুলো পরিষ্কার রাখা এসব অভ্যাসে ধুলাবালিজনিত এলার্জির ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
- ধুলাবালি এড়িয়ে চলা: বাইরে গেলে মাস্ক পরা, বাসায় এসে হাত-মুখ ধোয়া এবং গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নেওয়া শরীরের প্রতিক্রিয়া কমায়। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে ধুলাবালি বেশি হলে সুতির কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা উচিত।
- খাবারে সচেতনতা: কোন খাবার খেলে এলার্জি হয় তা চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন চিংড়ি, ডিম, বাদাম বা গরুর মাংস অনেকের জন্য ট্রিগার হতে পারে। নতুন কোনো খাবার খাওয়ার আগে অল্প পরিমাণে খেয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখে নেওয়াই ভালো।
- সঠিক বস্ত্র নির্বাচন: এলার্জিপ্রবণদের সুতির জামাকাপড় পরা উচিত, কারণ সিনথেটিক বা রাফ ফেব্রিক ত্বকে ঘর্ষণ করে এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: দিনে অন্তত একবার গোসল, প্রতিদিন পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার এবং পরিষ্কার বিছানায় ঘুমানো এসব ছোট অভ্যাস আপনাকে শরীরে চুলকানি হলে কী করবেন ঘরোয়া উপায়ে এই প্রশ্ন থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে।
সর্বোপরি, সচেতনতা ও যত্নই এলার্জি প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। প্রতিদিনের জীবনযাপনে এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারলে, এলার্জি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে যায়, তেমনি আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্য আরও সুরক্ষিত থাকে।
আমার পরামর্শ ও ব্যক্তিগত মন্তব্য: যা আমি নিজে করেছি এবং উপকার পেয়েছি
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় নিয়ে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের শরীরকে বোঝা এবং ধৈর্য ধরে সঠিক পথ অনুসরণ করা। আমি নিজে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, বিশুদ্ধ পানি পান এবং ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চলি। আপনার ক্ষেত্রেও যদি এই অভ্যাসগুলো গড়ে ওঠে, আশা করি এলার্জি চুলকানির যন্ত্রণার দিন শিগগিরই শেষ হবে। সবশেষে বলবো নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের শরীরকে বুঝুন, এবং প্রাকৃতিক উপায়ে সুস্থ থাকুন।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url