অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
মাইগ্রেন এর ব্যাথা কমানোর উপায়অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলব সমস্যাটি অনেক নারীর জীবনে এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক চাপের কারণ। অতিরিক্ত রক্তস্রাব বা অনিয়মিত মাসিকের বিষয়গুলোকে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।
আলোচ্য সূচীপত্র: অতিরিক্ত পিরিয়ড বন্ধ করার ঘরোয়া পদ্ধতি
- অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
- অতিরিক্ত মাসিকের সাধারণ কারণগুলো কী
- অতিরিক্ত মাসিক হলে শরীরের উপর প্রভাব
- প্রাকৃতিক উপায়ে অতিরিক্ত রক্তস্রাব কমানোর কৌশল
- ঘরোয়া খাবার ও ভেষজ উপাদান যেগুলো উপকারে আসে
- কোন খাবার বা অভ্যাস এড়িয়ে চলা উচিত
- অতিরিক্ত পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে করণীয় দৈনন্দিন রুটিন
- কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
- পাঠকের সাধারণ প্রশ্ন ও তাদের উত্তর
- আমার পরামর্শ ও ব্যক্তিগত মন্তব্য
অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
প্রতিবার যখন মাসিক সময়ের চেয়ে বেশি দিন চলতে থাকে, বা রক্তপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তখন নারীরা এক ধরনের উদ্বেগ, দুর্বলতা আর অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যান। আমি নিজে বা কাছের কারো অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় মেনে চললে উপকার পাওয়া যায়। এখানে আমি কিছু সহজ ও নিরাপদ ঘরোয়া পদ্ধতি শেয়ার করছি, যা অনেক মেয়ের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তবে মনে রাখবেন, দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
- আদা ও দারুচিনি চা: ব্যক্তিগতভাবে আমি এই চায়ের উপর ভরসা করি। এক কাপ গরম আদা-দারুচিনি চা শুধু শরীরকে নয়, মনকেও শান্ত করে। রক্তস্রাব কমানোর পাশাপাশি এটি শরীরকে এক ধরনের আরাম দেয়।
- তিল ও গুড়: আমার মা এই টিপসটা অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করতেন। এক চামচ তিলগুঁড়া আর একটু গুড় এটা শুধু রক্ত পরিষ্কার রাখে না বরং মাসিক চলাকালে শক্তিও জোগায়।
- তুলসীপাতা ও মেথি: তুলসীর মধ্যে একটা আলাদা রকমের শান্তি আসে শরীর ও মনে দুটোতেই। তুলসীপাতা চিবিয়ে খাওয়া বা চায়ে দিয়ে পান করা, আর সাথে সকালে মেথি ভেজানো পানি এই দুটি ছোট অভ্যাস অনেক বড় উপকার করে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তি: আমার মতে, এটা সবচেয়ে অবহেলিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিক। মন ভালো না থাকলে শরীরও ঠিক থাকে না। পর্যাপ্ত ঘুম, হালকা হাঁটা আর একটু নিজের জন্য সময় এগুলোই তো নিজের যত্ন।
- লৌহ ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার: অতিরিক্ত মাসিকের সময় শরীর দুর্বল হয়ে যায়, এটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এ সময় ডিম, খেজুর, শাক এগুলো শুধু শরীর না, আত্মবিশ্বাসও ফিরিয়ে দেয়।
- ঠান্ডা ও ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকা: শরীর ঠান্ডা হলেই দেখেছি সমস্যা বাড়ে। তাই আমি সবসময় বলি, ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম বা বাইরের তেলেভাজা খাবার কিছুদিন বাদ দিন নিজেই বুঝবেন পার্থক্য।
- গরম পানির সেঁক: এই সহজ উপায়টা অনেকের জন্য অনেক বড় স্বস্তি দিয়েছে। হালকা গরম পানির ব্যাগ পেটে দিলে শুধু ব্যথা না, মনও যেন একটু হালকা হয়ে যায়। নিজের প্রতি এই যত্নটুকু সত্যিই প্রয়োজন।
এই ঘরোয়া উপায়গুলো সাধারণত নিরাপদ। কিন্তু যদি মাসিক অতিরিক্ত হয় এবং ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা প্রতি মাসেই এমন হয়, তাহলে দয়া করে অবশ্যই গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটি কোনো অন্তর্নিহিত অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।
অতিরিক্ত মাসিকের সাধারণ কারণগুলো কী
আমরা যখন শুনি কেউ অতিরিক্ত মাসিক সমস্যায় ভুগছেন, তখন প্রথমেই প্রশ্ন আসে কেন এমনটা হচ্ছে? আমার দেখা ও শোনা অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, যেগুলো সব সময় ভয় পাওয়ার মতো নয়, তবে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এর সাধারণ কিছু কারণ হলোঃ
- হরমোন ভারসাম্যহীনতা: অনেক সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের অনিয়মিত মাত্রা মাসিক বাড়িয়ে দেয়।
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বেশি টেনশন বা মানসিক অস্থিরতা মেয়েদের হরমোনকে প্রভাবিত করে।
- থাইরয়েড সমস্যা: কম বা বেশি থাইরয়েড হরমোন মাসিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে।
- ইউটেরাসে ফাইব্রয়েড বা পলিপ: এগুলো জরায়ুর ভিতরে ছোট টিউমার বা মাংসপিণ্ড যা রক্তপাত বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: যেমন গর্ভনিরোধক পিল, রক্ত পাতলা করার ওষুধ ইত্যাদি।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এই সমস্যা হলে অনেক সময় মাসিক অনিয়মিত বা অতিরিক্ত হয়।
আমি মনে করি, যাঁদের মাঝে মাঝে মাসিক একটু বেশি হচ্ছে, তাঁরা আগে এসব সাধারণ কারণগুলোর দিকে নজর দিন। এরপর বুঝে নিন বেশি মাসিক হলে ঘরোয়া উপায় কী হতে পারে। যেমনঃ
- পাকা পেঁপে, আদা বা তুলসীপাতা খাওয়া
- স্ট্রেস কমানো
- পর্যাপ্ত ঘুম
- ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা
এসবই অতিরিক্ত মাসিকের জন্য সহজ ঘরোয়া সমাধান হিসেবে কাজ করে, যদি আপনি তা নিয়ম করে পালন করেন। তবে, যদি উপসর্গগুলো নিয়মিত হয় বা সঙ্গে ব্যথা, ক্লট বা দুর্বলতা থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ঘরোয়া উপায় ভালো, কিন্তু সঠিক কারণ না জানলে তা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যাও করতে পারে।
অতিরিক্ত মাসিক হলে শরীরের উপর প্রভাব
একজন নারী যখন নিয়মের চেয়ে বেশি রক্তস্রাবে ভোগেন, তখন সেটা শুধু মাসিক নয় একটি নীরব যন্ত্রণা। আমি কাছের অনেক নারীকেই দেখেছি, যাঁরা অতিরিক্ত মাসিকের সময় অসহ্য দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা এমনকি হাঁটতেও কষ্ট পান। কিছু মানুষ হয়তো বাইরে থেকে বোঝেন না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে শরীর অনেক কিছু হারাতে থাকে বিশেষ করে আয়রন, শক্তি, প্রশান্তি।
আরো পড়ুন: এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়
এমন সময় কেউ কেউ জানতে চান, অতিরিক্ত মাসিক বন্ধের ঘরোয়া পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে? আমি বলি এই পদ্ধতিগুলো আসলে শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। আদা, তুলসী, তিল কিংবা পাকা পেঁপের মতো উপাদান শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, রক্তপাত কিছুটা কমায় এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। এগুলো কোনো জাদুর মতো একদিনে কাজ করে না, বরং ধীরে ধীরে শরীরকে নিজের পথে ফিরিয়ে আনে।
তাই, অতিরিক্ত পিরিয়ড হলে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে শুধু খাবার নয় বিশ্রাম, মানসিক শান্তি, পর্যাপ্ত পানি পান আর নিজেকে একটু ভালোবাসা দেওয়া খুব জরুরি। কারণ নারীর শরীর শুধু রক্ত নয়; এখানে আছে ভালোবাসা, সহ্যশক্তি আর দায়িত্বের বোঝা—এই শরীরটাকে যত্ন না দিলে, সেটা অন্যায়ই হয়।
প্রাকৃতিক উপায়ে অতিরিক্ত রক্তস্রাব কমানোর কৌশল
অতিরিক্ত রক্তস্রাব যখন নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তখন শরীর এক ধরনের দুর্বলতা আর অস্বস্তিতে ভরে ওঠে। এই অবস্থায় প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো অনেক সময় শান্তিপূর্ণ সমাধান দিতে পারে যা ওষুধের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রাখে না। আমার দেখা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কিছু ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করলে রক্তপাতের পরিমাণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, আদা, দারুচিনি ও তুলসীপাতা চা শরীরের ভেতরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তিল ও গুড় খেলে জরায়ুর রক্তসঞ্চালন নিয়ন্ত্রিত হয় এবং পুষ্টির ঘাটতিও কিছুটা পূরণ হয়। পাশাপাশি, পাকা পেঁপে, মেথি ভেজানো পানি কিংবা গরম পানির সেঁক এসবই রক্তস্রাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে আমি দেখেছি। এসবই আসলে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় যেগুলো শরীরকে ধীরে ধীরে ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনে। তবে মনে রাখা দরকার, এই উপায়গুলো নিয়ম করে অনুসরণ করলেই উপকার পাওয়া যায়। হুট করে এক-দু’দিনের ব্যবহারে চটজলদি ফল আশা করাটা ঠিক নয়।
ঘরোয়া খাবার ও ভেষজ উপাদান যেগুলো উপকারে আসে
আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের ঘরেই এমন অনেক খাবার আর ভেষজ উপাদান আছে যেগুলো একটু যত্ন করে খাওয়া হলে অতিরিক্ত মাসিকের কষ্ট অনেকটাই কমে যায়। এসব উপাদান ওষুধের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরকে ভেতর থেকে ঠিক করার কাজ করে। তিল ও গুড়, এই যুগলটি অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে দারুণ কার্যকর। তিলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড জরায়ুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে, আর গুড় শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। পাকা পেঁপে জরায়ুর সংকোচন বাড়িয়ে রক্তস্রাব নিয়ন্ত্রণে আনে, যা অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতায় টের পেয়েছেন।
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায়
আদা ও দারুচিনি দিয়ে তৈরি গরম চা শরীরকে আরাম দেয়, হরমোনকে শান্ত রাখে। এছাড়া, তুলসীপাতা, মেথি ভেজানো পানি, খেজুর, পালংশাক, ডিম, বাদাম এগুলোও পুষ্টি দিয়ে দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। এসব উপাদানগুলো নিয়মিতভাবে খাওয়া হলে, এটি একধরনের অতিরিক্ত রক্তস্রাব কমানোর ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবেই কাজ করে। একদিনে ফল পাওয়া না গেলেও, ধৈর্য ধরে চললে শরীর নিজেই নিজের ভারসাম্য ফিরে পায় এটাই প্রকৃতির সৌন্দর্য।
কোন খাবার বা অভ্যাস এড়িয়ে চলা উচিত
আমরা যতই ভালো ঘরোয়া পদ্ধতি বা ভেষজ উপাদান ব্যবহার করি, যদি কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস না বদলাই তাহলে সেই উপকার অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমি বিশ্বাস করি, অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সফল করতে হলে, কিছু জিনিস সচেতনভাবে এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন-
- ঠান্ডা খাবার ও পানীয়: আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংক, বরফ দেওয়া পানি বা ঠান্ডা দুধ এসব শরীর ঠান্ডা করে ফেলে, ফলে জরায়ুর সংকোচন কমে যায় এবং রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে।
- ফাস্ট ফুড ও তেলেভাজা খাবার: এসব খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। মাসিকের সময় এগুলো শরীরে গরম-ঠান্ডার অস্বাভাবিকতা তৈরি করে।
- অতিরিক্ত কফি বা চা: অনেকেই ব্যথা কমানোর আশায় বারবার চা-কফি খান, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করে ও হরমোনে গণ্ডগোল আনতে পারে।
- টেনশন, ঘুমের অভাব ও অতিরিক্ত ব্যায়াম: এগুলো শরীর ও মনে এক ধরনের চাপ তৈরি করে, যা মাসিককে আরও অনিয়মিত করে তোলে।
এই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলাই হলো মাসিক বেশি হলে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের উপায় এর একটি বড় অংশ। শুধু কী খাব তা জানলেই হবে না, কী খাব না এবং কোন আচরণ পরিবর্তন করবো সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে করণীয় দৈনন্দিন রুটিন
অতিরিক্ত মাসিকের সমস্যায় নিয়মিত ভুগছেন এমন অনেক নারীর সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝেছি জীবনযাত্রার অগোছালো রুটিন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই শুধু ওষুধের দিকে না তাকিয়ে, দৈনন্দিন রুটিনে কিছু ছোট কিন্তু কার্যকর পরিবর্তন আনলে অনেকটাই স্বস্তি পাওয়া যায়। ভোরে সূর্য ওঠার সময় জেগে উঠে হালকা হাঁটাহাঁটি বা ১০ মিনিট মেডিটেশন করলে মন শান্ত হয় এবং হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরতে শুরু করে। এরপর খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে সামান্য মধু শরীরকে ডিটক্স করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং একে ধরা যেতে পারে একটি কার্যকর অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।
সকালের নাশতায় প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন সিদ্ধ ডিম, লাল চিড়া বা খেজুর রাখা যেতে পারে। এগুলো শরীরকে শক্তি দেয় এবং অতিরিক্ত রক্তপাতজনিত দুর্বলতা কমায়। মাঝখানে এক মুঠো বাদাম বা মৌসুমি ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে যা হরমোন স্থিতিশীল রাখে। দুপুরের খাবারে হালকা রান্না করা ভাত, ডাল, শাক, সবজি রাখা ভালো। বিশেষ করে কাঁচা হলুদ বা মেথি দিয়ে রান্না খাবার অতিরিক্ত মাসিকের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে দারুণ কাজ করে।
আরো পড়ুন: অ্যালাট্রল ঔষধের কাজ, ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা
বিকেলের সময়টুকুতে হাঁটা বা নিজের সাথে নিরিবিলি কিছুটা সময় কাটানো মানসিক চাপ কমায়, যা হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। রাতের খাবার হালকা রাখাই শ্রেয় অতিরিক্ত ঝাল, ভাজা বা ঠান্ডা খাবার একদম এড়িয়ে চলা উচিত। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সামান্য কাঁচা হলুদ খেলে শরীরও শান্ত হয়, ঘুমও ভালো হয়। এই ছোট ছোট রুটিনগুলো কঠিন কিছু নয়, কিন্তু নিয়মিতভাবে এগুলো অনুসরণ করলেই শরীর আপনাআপনি নিজের ভারসাম্যে ফিরে আসে। এইভাবেই আমরা জীবনযাত্রাকে একটু গুছিয়ে নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে মাসিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যা কেবল সমস্যা কমায় না, বরং নিজের শরীরকে ভালোবাসারও একটি চর্চা হয়ে ওঠে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
ঘরোয়া উপায়ে অতিরিক্ত মাসিক নিয়ন্ত্রণের অনেক পথ থাকলেও, কিছু সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পথ খোঁজা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যদি মাসিক প্রতি মাসে সাত দিনের বেশি স্থায়ী হয়, অথবা প্রতি ঘণ্টায় একাধিক ন্যাপকিন ভিজে যাচ্ছে তাহলে সেটা আর সাধারণ নয়। এ অবস্থায় বারবার শুধুমাত্র ঘরোয়া সমাধান খুঁজে সময় নষ্ট না করে, দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করা উচিত।
অনেকে জানতে চান, মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া চিকিৎসা কোনটা সবচেয়ে কার্যকর? সত্যি বলতে, কোনো একটি নির্দিষ্ট উপায় সবার জন্য কার্যকর নয়। কারো জন্য পাকা পেঁপে ভালো কাজ করে, আবার কারো জন্য আদা বা তুলসীর চা। কিন্তু যখন সমস্যা নিয়মিত ও তীব্র হয়, তখন ঘরোয়া সমাধান নয়, পেশাদার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কারণ এর পেছনে পলিসিস্টিক ওভারি, হরমোনাল ইমব্যালেন্স বা অন্য কোনো গাইনোকোলজিকাল রোগ থাকতে পারে।
তবে, একসাথে অতিরিক্ত মাসিকের কারণে দুর্বলতা দূর করার ঘরোয়া সমাধান যেমন খেজুর, পালংশাক, ডিম, কালোজিরা ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো শরীরের আয়রন ঘাটতি পূরণ করে ও দুর্বলতা কিছুটা কমায়। তবে সমস্যার শিকড় ধরতে চাইলে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চিকিৎসকের শরণ নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
পাঠকের সাধারণ প্রশ্ন ও তাদের উত্তর
মাসিক বন্ধের অনেক উপায় অনেকের জানা থাকলেও কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাবে আপনাদেরকে দেওয়া চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় কি আসলেই কাজ করে?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করে। তবে এটি নির্ভর করে সমস্যা কতটা গুরুতর, শরীরের অবস্থা কেমন এবং সেই ঘরোয়া পদ্ধতি কতটা নিয়মিতভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে তার ওপর।
প্রশ্ন: কতদিন ঘরোয়া উপায় চালালে ফল পাওয়া যায়?
উত্তর: অনেকেই প্রথম কয়েকদিনেই কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ভালো ফল পেতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে চলাই মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: পাকা পেঁপে খেলে কি সব সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব কমে?
উত্তর: পেঁপেতে থাকা এনজাইম জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে সহায়তা করে, যা অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে এক রকম কাজ না-ও করতে পারে। তাই এটি নিয়মিত পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: শুধু খাবার বদলালেই কি মাসিক নিয়ন্ত্রণে আসবে?
উত্তর: খাবার বদলানো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে একইসঙ্গে মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্যকর রুটিন বজায় রাখাও দরকার। এগুলো সব মিলেই কার্যকর হয় মাসিক বন্ধ করার উপায় হিসেবে।
প্রশ্ন: কখন বুঝবো চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার?
উত্তর: যদি আপনি মাসে ৭ দিনের বেশি রক্তপাত করেন, প্রতি ঘণ্টায় একাধিক প্যাড বদলাতে হয়, মাথা ঘোরা বা হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন: ঘরোয়া উপায়ে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
উত্তর: সাধারণত না। তবে অতিরিক্ত পেঁপে, আদা বা দারুচিনি কারো কারো গ্যাস্ট্রিক বা পেটের গরম তৈরি করতে পারে। তাই সব উপাদান পরিমিত ও বুঝে ব্যবহার করা ভালো।
আমার পরামর্শ ও ব্যক্তিগত মন্তব্য
অতিরিক্ত মাসিকের মতো বিষয় নিয়ে অনেকে চুপ থাকেন, লজ্জা পান কিন্তু আমি মনে করি, এটি নিয়ে খোলামেলা জানা ও সচেতন হওয়া জরুরি। অনেক সময় ওষুধ ছাড়াও কিছু অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় আমাদের উপকারে আসে। তবে প্রতিটি শরীর ভিন্ন, তাই নিজের শরীরকে বুঝে, ধৈর্য ধরে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদি ঘরোয়া উপায় কাজ না করে বা সমস্যা বেড়ে যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
সংসার পেজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url