কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কালোজিরা খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা আছে ঠিক তেমনি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বেশ কিছু ক্ষতির কারণ ও হতে পারে কালোজিরা। হাদিসে আছে কালোজিরাকে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদরা বিভিন্ন চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যাবহার করে থাকেন যা বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমাণিত। 

কালোজিরার-উপকারিতা-অপকারিতা

কালোজিরার যত পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে তা একসাথে আর কোথাও পাওয়া যায়না। তাই আমরা আজকের এই আলোচনার বিষয় হিসাবে রেখেছি কালোজিরা কি ও তার সকল উপকারিতা ও অপকারিতা।

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা

কালোজিরা কি? এতে কি কি উপাদান আছে

কালোজিরা একটি ঔষধি গুনাগুণ সম্পন্ন বীজ, যা প্রকৃতির এক আশ্চর্য উপাদান। একধরনের নীলচে সাদা বা হলুদাভ পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুল থেকে উৎপাদন হয় কালোজিরার। এতে তৈরি হয় একটি ফল যেখানে থাকে ১৫-২০ টির মতো কালোজিরা। এখন আসা যাক কালোজিরাতে কি কি উপাদান আছে সেই ব্যাপারেঃ কালোজিরাতে অনেক অনেক পুষ্টিগুণ আছে, আমার জানা বেশকিছু গুনাগুণ আর তার কাজ সম্পর্কে আলোচনা করলাম।

কালোজিরাতে আছে প্রোটিন ও অ্যামাইনো এসিড। আমরা জানি প্রোটিন মানব দেহের প্রতিটি কোষ, টিস্যু, হরমোন, এনজাইম ও অঙ্গের গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং অ্যামাইনো এসিড কোষের গঠন ও পুনর্গঠন, শরীরে শক্তির সঞ্চার, রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা সহ আরও অনেক কাজ করে। কালোজিরাতে আছে কার্বোহাইড্রেট এবং এটি আঁশ জাতীয় পদার্থ যা আমাদের শক্তির উৎস ও হজমে সহযোগিতা করে। কালোজিরার মধ্যে এসেনশিয়াল অয়েল থাকে যা আমাদের ঔষধি কাজে আসে। 

কালোজিরাতে থাইমোকুইনিন নামক পদার্থ সব থেকে বেশি আছে যা বিভিন্ন ধরণের ব্যাথা ও জ্বালাপোড়া কমাতে, ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসাবে এবং লিভারের বিভিন্ন জটিলতায় কাজে আসে। ভিটামিন ও মিনারেলস এ ভরপুর কালোজিরাতে আরো অনেক উপাদান বিদ্যমান আছে।

কালোজিরার পুষ্টিগুণ কি কি

কালোজিরার অনেক অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এত বিদ্যমান যেসকল উপাদান রয়েছে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি এবং সেসকল উপাদানের মধ্যে যা পুষ্টিগুণ রয়েছে তা একটা টেবিল আকারে আমরা এখানে সাজালাম যাতে করে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়।

উপাদান পরিমাণ
প্রোটিন ২০-২৩ গ্রাম
এনার্জি বা শক্তি ৩৪৫-৪০০ ক্যালোরি
চর্বি বা ফ্যাট ৩০-৩৫ গ্রাম
আঁশ বা ফাইবার ৭-১০ গ্রাম
লৌহ বা আয়রন ১০-১২ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৪৯০-৬০০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৩০০-৪০০ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ১৫০-২৫০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১০০-১৫০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ৮০-৯০ গ্রাম
জিংক ৫-৬ গ্রাম
ভিটামিন বি-১ ৫-৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-২ ২-৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৩ ৪-৫ মিলিগ্রাম

কালোজিরা খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম

কালোজিরাকে বলা হয় মহৌষধ। প্রত্যেকদিন পরিমাণ মতো কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গোড়ে তুলতে পারলে আমাদের শরীর নানা রকম রোগ বালাই থেকে দূরে থাকবে কেননা এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যার ফলে আমরা ছোট ছোট অনেক রোগের ঔষধ খাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারব। তবে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করা খুব একটা সহজ কাজ না। এর তিতকুটে স্বাদের জন্য সহজে সবাই এটা সরাসরি খেতে পারেনা আবার অনেকে তো খাবারেও এর ব্যাবহার পছন্দই করেনা।যদিও আমরা অনেকেই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানি তবুও চলুন দেখে দেখে নেওয়া যাক কালোজিরা কি কি অভিনব পদ্ধতিতে খাওয়া যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে একদম খালি পেটে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ৫-১০ টা দানা একদম চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে ঠাণ্ডা কাশি যখন লেগে থাকে এই উপায় টা ভীষণ কাজে আসবে। আবার কালোজিরা কড়া রোদে ২ দিন রেখে অথবা গরম খোলায় হালকা টেলে গুড়া করে রেখে দিন যা রোজ সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানি বা ১ চামুচ মধুর সাথের খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার হজমের গতি বৃদ্ধি করবে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে এমন কি পায়খানা ক্লিয়ার হবে। 

গুড়া করা কালোজিরা রোজ সকালে উসুম গরম ১ গ্লাস পানিতে ১ চামুচ দিয়ে সাথে ১ টেবিল চামুচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন যা আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস দুধ+১ চামুচ কালোজিরা খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে,ঘুম ভালো হয় যার ফলে মস্তিষ্কের গঠন সুন্দর হয়। আপনি কালোজিরার চা করেও খেতে পারেন ১/২ চামুচ কালোজিরা দিয়ে ১ কাপ চা। এছাড়াও বিভিন্ন খাবার যেমনঃ তরকারী, তেলে ভাজা, মিষ্টি, বেকারি আইটেম, ভর্তা ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে প্রয়োজনের বেশি যেন না খায়।

সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি হয়

কালোজিরা তো আমরা বিভিন্ন ভাবেই খেতে পারি। এর আগের পয়েন্টে আমরা সেই ব্যাপারে আলোচনা করেছি যে আমরা কখন ও কিভাবে কালোজিরা খাব। তবে এখানে আমরা আবারো সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি কারণ আমার পাঠকদের অনেকের মনে এই প্রশ্ন থেকেই যায়। তারা তাদের পরিবারের বড়দের দেখে আসছে সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেতে বা অনেকেই শুনেছে এই ব্যাপারে কিন্তু কেন শুধু সকালেই খাওয়া একটু বেশি উপকারী সেই ব্যাপারে জানেনা। তাই আমি আবারো আলোচনা করছি এই ব্যাপারে।  

কালোজিরার-উপকারিতা-অপকারিতা

আসলে কালোজিরা সবসময়ই খাওয়া যায় তবে সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার অনেক অনেক উপকারিতা আছে। আমরা যেমন সব পুরাতন বা খারাপকে পেছনে ফেলে নতুন সকালে নতুন দিন শুরু করি তেমনি আমাদের শরীর প্রত্যেক সকালে নতুন করে একদম ফ্রেশভাবে তার দিনটা শুরু করার প্রস্তুতি নেই। তাই এইসময় যদি তাকে সঠিক গাইড লাইন দিয়ে ভালকিছু করানো যায় তাহলে সারাটা দিন সুস্থ ও সুন্দর কাটে এটা হেলদি লাইফ স্টাইলের একটা অংশ বলা যেতে পারে। 

সকালে আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একদম একটিভ থাকে তাই যদি আমরা ঔষধি গুন সম্পন্ন কালোজিরা পানি দিয়ে সকাল টা শুরু করি সারাদিনের সমস্ত রোগ বালাই আমাদের ছুঁতেও পারবেনা বা আমরা অনেক এনার্জিটিক ফিল করব। আবার খালি পেটে খাওয়ার কারণে আমাদের পাচনতন্ত্র সক্রিয় হয়ে যায়, যার ফলে হজম প্রক্রিয়া খুব সুন্দর স্মুথলি কাজ করে। 

সকালে মস্তিষ্ক ফ্রেশ থাকে এতে রক্তসঞ্চালন আরও বারে ও মন মানুসিকতা সতেজ থাকে, অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে। এরকম আরো অনেক উপকারে আসে কালোজিরা যদি আমরা এর সঠিক ব্যাবহার করতে পারি।

কালোজিরা চিবিয়ে খেলে কি হয়

সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে ৫-৭ টা কালোজিরা চিবিয়ে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি খেয়ে নিতে পারেন। কালোজিরা বিভিন্ন উপায়েই যেহেতু খাওয়া যায় তার মধ্যে এটিও একটি। তবে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা আছে। এতে থাকা উপাদানগুলো সরাসরি দাঁত ও পাঁচনতন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পৌঁছায় এবং সকল কাজকে অতিদ্রুত একটিভেট করে। হজমে যেমন দ্রুত কাজ করে তেমনি হৃদ রোগ ও কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহযোগিতা করে। চিবিয়া খাওয়ার সবথেকে উপকার হলো এর অ্যান্টিসেপটিক গুণ দাঁতের ব্যথা ও মুখের জীবাণু দমন করে। যা অনেকের কাছেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

কালোজিরার তেল কি কি কাজে লাগে

কালোজিরার তেল দেশে বিদেশে সব জায়গায় মানুষ বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যাবহার করে থাকে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুনাগুণ। যাদের শ্বাসকষ্ট, হাপানি বা ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগার মত সমস্যা আছে তারা কালোজিরার তেল উসুম গরম করে বুকে পিঠে দিনে কয়েকবার লাগালে আরাম পাবে। বর্তমানে চুল পড়াটা প্রায় ছেলে মেয়ে সব বয়সের মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে কালোজিরার তেল হতে পারে খুব সুন্দর একটি সমাধান। সপ্তাহে ৩-৪ দিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা গোসলের ১ ঘণ্টা আগে কালোজিরা তেল সরাসরি অথবা নারিকেলে তেলের সাথে মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় আলতো হাতে ম্যাসেজ করতে হবে। এতে করে ১ মাসের মধ্যেই খুব ভালো একটা ফলাফল আপনি পাবেন যা আমি নিজে পরীক্ষিত। অন্যদিকে কালোজিরার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুন থাকায় এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অ্যালারজি, চুলকানি ইত্যাদি সমাধানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার নিয়মিত বিভিন্ন ফেসিয়াল প্যাকের সাথে বা শীতের সময় এক্সট্রা ময়েসচার হিসাবে ব্যাবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয় ও মসৃণ থাকে। এছাড়াও কালোজিরার তেল ছেলেরা তাদের যৌন অঙ্গে মালিশ ও করতে পারে এতে করে নার্ভগুলোতে দ্রুত রক্তের সঞ্চারণ হয় ও ভালো একটা ফলাফল আপনি পেতে পারেন। 

তবে গর্ভবতী মহিলারা সেবনের পূর্বে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং যাদের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা যাবে তারা দ্রুতই বন্ধ করবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

সর্ব রোগের ঔষধ কালোজিরা

কালোজিরাকে সর্ব রোগের ঔষধ বলা হচ্ছে কারণ এর বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে। প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদ ও লোকজ ডাক্তার তাদের চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যাবহার করে আসছে। এমনকি এটি বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমাণিত যে কালোজিরার হাজারো গুণাগুণ রয়েছে যা বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই থেকে আমাদের শরীরকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। কালোজিরা যে সর্ব রোগের ঔষধ এই কথাটি মূলত এসেছি ইসলাম ধর্মের হাদিসের বই (সহিহ বুখারী) থেকে। এখানে বর্ণিত আছে যে কালোজিরা সকল রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যাবহার করা যাবে এমন একটি পদার্থ। তাহলে চলুন এখন দেখে নেওয়া যাক আসলেই কি তাই, কালোজিরার কি কি গুণাগুণ বা উপকারিতা আছেঃ

কাশি ও সর্দি সারাতেঃ যাদের ঘন ঘন সর্দি বা কাশির সমস্যা হয় বা কোল্ড অ্যালার্জিতে ভুগছেন এমন মানুষ, তারা নিয়মিত ১ চামুচ কালোজিরা, ১ চামুচ মধু ও ১ চামুচ তুলসির রস কুসুম গরম করে খেতে পারেন। এতে ঠাণ্ডা লাগা উপশম হবে কাশি কমে যাবে আবার কালোজিরার তেল ও রসুন থেত কুসুম গরম করে বুকে পিঠে মালিশ করলেও আরাম পাবেন গলা ব্যাথা বা সর্দি সেরে যাবে। 

পুরনো মাথা ব্যাথায়ঃ অনেকের নিয়মিত মাথা ব্যাথার সমস্যা আছে। তারা চাইলে কালোজিরার ও আদা চা করে খেতে পারেন আবার কালোজিরার তেল হালকা হাতে মাথা ও ঘাড়ে ম্যাসেজ করতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনার মাথা ব্যথা কমে যাবে।

বাতের ব্যাথায় কালোজিরাঃ বাতের ব্যাথার চিকিৎসায় কালোজিরার তেলের ব্যাবহার একটি পুরনো প্রাকৃতিক প্রথা। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেন্টরি বা প্রদাহ নাশক পদার্থ আমাদের শরীরে হাড়ের বিভিন্ন জোড়ের ফোলাভাব ও ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে কালোজিরার তেলের নিয়মিত ব্যাবহারের ফলে বাতের ব্যাথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। 

হজম ও লিভারের সমস্যায়ঃ কালোজিরা প্রত্যেকদিন নিয়ম করে খেলে পাঁচন তন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এরফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে এবং লিভারের বিভিন্ন সমস্যা জনিত কারণ যেমন লিভার ক্যান্সার থেকে আরোগ্য পেতেও সাহায্য করে।

স্মরণ শক্তি বাড়াতেঃ কালোজিরা আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনকে সক্রিয় করে বুদ্ধির সঞ্চার করে। রোজ কালোজিরা চা বা কালোজিরার তেল মধুর সাথে খেলে আপনার স্মরণ শক্তি ভালো থাকবে।

পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তিঃ পাইলসের সমস্যায় কালোজিরা খুব উপকারী। মূলত হজম শক্তি ঠিক রেখে কালোজিরা আমাদের সাহায্য করে যেন পাইলসের মত সমস্যা না হয়। তবে হয়ে গেলে এর যে জ্বালা পোড়া, ব্যাথা তা থেকে কিছুটা হলে বাঁচতে আমরা কালোজিরা ব্যাবহার করতে পারি। রোজ সকালে খালি পেটে ১/২ চামুচ কালোজিরা ও ১ চামুচ মধু খেতে পারি আবার ১/২ চামুচ কালজিরা+১/২ চামুচ মেথি+১ কাপ পানি দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারি। এতে করে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ হয়।

শ্বাসকষ্ট বা হাপানিঃ কালোজিরার বিভিন্ন ব্যাবহারের মধ্যে এটিও একটি অন্যতম। যারা শ্বাস কষ্টের রোগী আছেন তাদের মূল সমস্যায় হলো শ্বাসনালীর প্রদাহ। কালোজিরার সেবন সুস্থ সুন্দর শ্বাসনালী গঠনে সাহায্য করে, ফুস্ফুসে বাতাস সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে সচল রাখে, অ্যালার্জি জনিত শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে, এমনকি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বার বার শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা এড়াতেও সাহায্য করে। এর জন্য ১/২ লিটার ফুটন্ত পানিতে ১ চামুচ কালোজিরা তেল দিয়ে তোয়ালে বা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে সেই ভাবটা নিতে পারেন। 

হার্টের বিভিন্ন সমস্যায়ঃ হার্ট ভালো রাখতে কালোজিরার ভূমিকা অনেক। আপনি নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে আপনার দিনের শুরুটা সুন্দর হবে এবুং আপনার হার্ট ও ভালো থাকবে।

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনেঃ কালোজিরা রক্তের শর্করার মাত্রা ব্যালান্স করে। নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া ডায়াবেটিক পেসেন্ট এর জন্য অনেক ভালো।

আমাশয় নিরাময়েঃ আমাশয় একটি অতি পরিচিত পেটের রোগ যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এতে বার বার পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা, রক্ত ও মিউকাস যুক্ত পায়খানা এবং জ্বর দেখা দেয়। কালোজিরার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যাবহারের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশঃ কালোজিরা গুড়া বা কালোজিরা তেল ৩ বছরের অধিক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন খাবারে কালোজিরা ব্যাবহার করলে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ হবে ব্রেইন শক্তিশালী হবে। আবার কালোজিরার তেল মালিস করলে শিশুর শারীরিক গঠন মজবুত হবে।

যৌন সমস্যায়ঃ কালোজিরা খেলে অনেক ছেলে বা মেয়ে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি হয়। বিশেষ করে ছেলেদের, তারা কালোজিরা, মধু, জৈতুন তেল একসাথে খেলে যৌন চাহিদা বাড়বে আবার কালোজিরা তেল মালিশ করলেও দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল পেতে পারেন।

অনিয়মিত মাসিক ঠিক করতেঃ যেসকল মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয় তারা রোজ সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাবেন অথবা মধু দিয়ে চা বানিয়ে খাবেন এবং ব্যায়াম করবেন। এতে করে আপনার সমস্যার সমাধান হবে। 

হরমোনের ভারসাম্য রক্ষাঃ কালোজিরা হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে এর ফলে ছেলে মেয়ে সবাই উপকৃত হয়।

মায়েদের দুধ বৃদ্ধিঃ যে সকল মায়েরা তাদের বাচ্চাকে দুধ পান করাচ্ছেন তারা প্রত্যেকদিন কালোজিরা খাবেন, এতে করে আপনার হরমোন সক্রিয় হবে এবং বাচ্চা তার চাহিদা মত দুধ পাবে। আবার প্রসূতি মায়ের বাচ্চা জন্ম দিতেও সাহায্য করে কালোজিরা।

এছাড়াও কালোজিরা খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা আছে। আপনারা চাইলেই প্রাকৃতিক ভাবে ঘরে থাকা উপাদান দিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারছেন। যার জন্য কালোজিরার ভূমিকা অপরিসীম। 

প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয় 

যে কোন ভেষজ উপাদানের মতই কালোজিরা একটি। প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কোন না কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। কারণ কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত সেবন কড়া উচিত নয়। কালোজিরার এমনিতে কোন খারাপ গুণ নেই তবে মাত্রা অতিক্রম করলে দেখা যেতেও পারে। তাই প্রত্যেকদিন আমরা ১ চামুচের বেশি কালোজিরা খাবনা। নিচে এর অপকারিতা বা ক্ষতির দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

বুকে জ্বালাপোড়া হওয়াঃ অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা প্রত্যেকদিন খাওয়ার ফলে বুকে জ্বালাপোড়া বা গাস্ট্রিকের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন তারা কালোজিরা ১/২-১ চামুচের বেশি খাবেন না বা দৈনিক না খেয়ে একদিন পর পর খেতেও পারেন। 

ত্বক জ্বালাপোড়া করাঃ অ্যালার্জি এমন একটা জিনিস যে এটা কার কোন বিষয় থেকে ছড়ায় বলা মুশকিল, খুব কৌশলে এটা আইডেন্টিফাই করতে হয়। তাই যাদের কালোজিরাতে অ্যালার্জি আছে বলে ধারণা করছেন তারা কালোজিরা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, কারণ এতে আপনার তকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কাঃ যারা নতুন গর্ভধারণ করেছেন প্রথম পাঁচ মাস কালোজিরা ও মধু খুব একটা খাবেন না। বিশেষ করে সকালে মধু ও কালোজিরা খেলে অনেক সময় অনেক মেয়ের গর্ভপাত হতে পারে। তবে এটা খুবই রেয়ার একটা বিষয়।  

পেটে ব্যাথা হওয়াঃ কালোজিরা বেশি পরিমাণে খেলে আপনার হজমে সমস্যা হবে। সেখান থেকে পেটে ব্যাথার সৃষ্টি হবে।  

ডায়রিয়ার সমস্যাঃ কালোজিরা একসাথে অধিক পরিমাণে খেলে ডায়রিয়ার সমস্যাও হতে পারে।

বমি বমি ভাবঃ হজমে গণ্ডগোল হয়ে উল্টা আপনার বমি বমি লাগবে মাথা ঘুরাবে। এই জাতীয় আরো সমস্যার সম্মুখীন হবেন অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে।

রক্ত পাতলা হওয়াঃ প্রাকৃতিক ভাবে কালোজিরার রক্ত পাতলা করার ক্ষমতা আছে। তাই যাদের অলরেডি এই সমস্যা আছে তারা কালোজিরা খাবেন না, বা যারা খাচ্ছেন তারা খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত না খেতে।

রক্তের শর্করা কমে যাওয়াঃ যাদের ডায়াবেটিক আছে তারা কালোজিরা খাওয়ার সময় সাবধান থাকবেন। নিয়মিত ডায়াবেটিক পরিমাপ করতে হবে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খাওয়া যাবেনা।

খুব বেশি কিছু না হলেও এই ক্ষতির কারণগুলোই আপনাদের জন্য মারাত্মক হতে পারে যদি না আপনি নিয়ম মেনে কালোজিরা খান। এর আরো কিছু সাবধানতা নিয়ে নিচের পয়েন্টে আলোচনা করা হলো। 

কালোজিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে

আমরা দেখে এসেছি কালোজিরা খাওয়ার অনেক অনেক উপকারিতা সম্পর্কে। তবে নিয়ম মেনে না খেলে বা প্রয়োজনের অধিক খেলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যা আমাদের ক্ষতির সাধন করে। তাই আমরা কালোজিরা খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবম্বন করতে হবে।

পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। যেমন ধরুন প্রতিদিন ১/২-১ চামুচ কালোজিরা গোটা অথবা গুড়া করে খেতে পারেন, আবার কালোজিরার তেল ১/২ চামুচ এর বেশি খাওয়া ঠিক হবেনা। কালোজিরার তেল অনেকের খালি পেটে খেলে সমস্যা হতে পারে তারা কিছু খাবার পর খাবেন। কালোজিরা মহিলাদের জরায়ু সংকচন করে ফেলে তাই যারা গর্ভবতী তারা অবশ্যই সচেতন থাকবেন। প্রয়োজনে খাবেন না। কারণ সবার না হলেও কারো কারো ক্ষেত্রে গর্ভপাতের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কালোজিরা ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেসার কমাতে পারে তাই যারা নিয়মিত ঔষধ খান তার সাবধানে খাবেন প্রয়োজনে ডাক্তার এর পরামর্শ নিবেন। কালোজিরা রক্ত পাতলা করে তাই যাদের অস্ত্র প্রচারের সম্ভাবনা আছে তারা কমপক্ষে ১ মাস আগে কালোজিরা খাওয়া বাদ দিবেন। অবশ্যই সবসময় আপনাকে নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে খেতে হবে এবং মাঝে মাঝে বাদ দিয়ে দিয়ে খেতে হবে তাহলে আপনার শরীরের জন্য কোনটা ভালো কোনটা খারাপ বুঝতে পারবেন। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সবশেষে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে একটাই কথা বলবো কালোজিরা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটা ঔষধি পদার্থ। আপনারা একটু নিয়ম কানুন মেনে কালোজিরাকে আপনাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই জীবন সহজ ও সুন্দর হবে। তবে খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। সঠিক নিয়ম জেনে খেতে হবে এবং কোন সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলে তখনই খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url